0321yin01
|
তেলআবিবে অবস্থিত এই সংস্থাটির নাম 'গ্লিকম্যান সেন্টার ফর দা প্রিভেনশান অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট অব ডমেস্টিক ভায়োলেন্স ইন দা ফ্যামিলি'। এটি আসলে ইসরায়েলের বৃহত্তম নারী সংস্থা "না'আমাত"-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে অভিজ্ঞ সমাজকর্মী, মনোব্যাধির চিকিত্সক ও আইন-উপদেষ্টারা কাজ করেন। তারা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার নারীদের সম্ভাব্য সবধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে থাকেন।
"না'আমাত"-এর আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক শার্লি শাভিত জানিয়েছেন, গ্লিকমান কেন্দ্রে যারা শুধু পরামর্শ নিতে আসেন তাদের চেয়ে- যারা এখানে আশ্রয় নিতে আসেন তাদের অবস্থা অনেক বেশি শোচনীয়। কেন্দ্রে আশ্রয়-নেওয়া নারীরা গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির শিকার। শাভিত বলেন,
"সাধারণত এখানে আশ্রয় নিতে আসা নারীদের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা থাকে না। এখানে আসার সময় তাদের অবস্থা সত্যিই খুবই খারাপ থাকে। কোনো অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা নেই; কেন্দ্রে আসা ছাড়া তাদের যাওয়ার অন্যকোনো জায়গাও নেই।"
আশ্রয় নেওয়া নারীদের পাশাপাশি তাদের সন্তানদের অবস্থাও খারাপ। মায়ের ওপর পারিবারিক নির্যাতনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ে শিশুদের ওপরও। তারা শিকার হয় মারাত্মক মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির। কয়েক মাস আগে অন্তঃসত্ত্বা একজন মা তাঁর ছেলেমেয়েকে নিয়ে আশ্রয়স্থলে বসবাস করার সময়, আরো একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। মায়ের ৭ বছর বয়স্ক ছেলে সম্পর্কে শাভিত বললেন,
"ছেলেটি খুবই সুন্দর। সে নিজের রুমে প্রবেশ করে বলেছে, 'আপনি আমার রুম দেখতে আসেন।' তারপর সে একটি কম্বল বের করে বলেছে, 'দেখুন, এটা আমার কম্বল'। এটা শুধু একটি সাধারণ কম্বল। কিন্তু তার মা আমাকে জানিয়েছে, সেটা হচ্ছে বাসা থেকে আনা একমাত্র জিনিস। তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। কম্বলটি ছেলেটি ছোটবেলা থেকে ব্যবহার করে এসেছে। সে অন্য কিছুই নিয়ে আসেনি। কোনো খেলনা নিয়ে আসেনি। শুধু শরীরের পোশাক ও কম্বলটি নিয়ে এসেছে।"
আশ্রয়কেন্দ্রে শিশুদের জন্য কিন্ডারগার্টেন ও চিকিত্সাকক্ষ আছে। রুথ ওজেরি হচ্ছেন আশ্রয়স্থলের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তিনি বললেন,
"আমাদের এখানে আশ্রয় নেওয়া শিশুদের দেখাশুনা করার জন্য সমাজকর্মীরা আছেন।" সমাজকর্মীরা তাদের দেখাশোনা করেন; তাদের শিল্পকলা ও খেলাধুলার মাধ্যমে সংসারের বিরূপ অভিজ্ঞতা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
বর্তমানে ৭ জন নির্যাতিত নারী এবং তাদের শিশু সন্তানেরা গ্লিকমান কেন্দ্রের আশ্রয়স্থলে আছেন। তারা ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছেন। তারা বিভিন্ন কল্যাণ সংস্থা ও সমাজকর্মীর মাধ্যমে গ্লিকমান কেন্দ্রে আসতে সক্ষম হন। এখানে প্রায় ৬ মাস থাকার পর, মানসিকভাবে খানিকটা পরিপক্ক হয়ে তারা ফিরে যাবেন সমাজের মূলধারায়। ওজেরি জানিয়েছেন, কোনো কোনো নারী চিকিত্সার পর নিজ নিজ স্বামীর কাছে ফিরতে চান। আবার কোনো কোনো নারী তাদের স্বামীদের ত্যাগ করে অন্য শহরে নতুন জীবনযাপন শুরু করেন। ওজেরি বলেন,
"এটা তাদের জন্য সহজ নয়। আসার সময় তাদের মানসিক অবস্থা থাকে নিতান্তই দুর্বল; বাইরে কাজ করার সামর্থ্যও থাকে না সাধারণত। আমরা প্রথমে তাদেরকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করি। এর জন্য কয়েক মাস সময় লাগে।"
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নারীর মর্যাদা উন্নত করা বিষয়ক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ভেরেড সয়িড জানালেন, যদিও নারী অধিকার সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রচেষ্টায় বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তবুও বর্তমানে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ নারী সহিংসতার ছায়ায় জীবনযাপন করছে। তাই প্রচেষ্টা আরো জোরদার করা দরকার। তিনি বললেন,
"বিশ্বের সকল নারী এধরনের প্রচেষ্টার সুফল লাভ করবে, তা নয়। কিন্তু এ ধরনের আশ্রয়স্থল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো অনেক নারীর জীবন বাঁচাতে পারে।"