Web bengali.cri.cn   
বিভিন্ন দেশের উত্সব এবং বিশেষ রীতিনীতি
  2014-03-03 18:27:50  cri



উত্সব একটি দেশের ইতিহাস, রীতিনীতি ধরে। উত্সব মানে আনন্দ, সুখ, মিলন ইত্যাদি। আজকে আমরা প্রধানত বিভিন্ন দেশের বর্ষবরণ উত্সব, শিশু দিবস এবং জাতীয় দিবস উদযাপনের বিশেকিছু রীতিনীতি নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলাপ করবো।

বিশ্বের অনেক দেশই নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য বিশেষ ধরনের খাবারের ওপর অনেক গুরুত্ব প্রদান করে।

মজার বিষয় হচ্ছে প্রত্যেক জাতিরই তাদের নিজস্ব রীতিনীতি, ধর্ম, জীবনযাপনের নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে।

পোল্যান্ডের তরুণীরা নববর্ষ উদযাপনের সময় খরগোশের মত কাপড় পরে এবং তারপর একত্রিত হয়ে খরগোশের মত করে কুটুর কুটুর করে যত প্রকার আর যত পরিমান পারা যায় তত শাকসবজি খাবে। কারণ তারা মনে করে যে, শাক-সব্জি খেয়ে নতুন বছর শুরু হলে নতুন বছরের সব কাজ সুন্দর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে।

ফ্রান্সের নববর্ষের রীতিনীতিও কিন্তু বেশ মজার। নববর্ষে তাদের বাসায় থাকা সব মদ শেষ করতে হবেই হবে। কেন? তাদের মতে, বছরের শেষ দিন যদি বাসায় পুরোনো মদ থাকে, তাহলে তা নতুন বছরে সৌভাগ্য বয়ে আনবে না। তবে মদ ফেলে দিলেও চলবে না, ঘরে থাকা যত মদ সব খেয়ে শেষ করলেই তবে নতুন বছরটি সুন্দর আর শান্তিময় হয়ে উঠবে। তাই যদি আপনি ফ্রান্সের নববর্ষের সময় সেখানে থাকেন, আপনার মনে হবে ফরাসিরা যেন সবাই মাতাল, আর সেটা যেন খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কারণ একটু বেশি পরিমান খেয়ে ফেলেছে তো তাই।

পুরোনো বছরের শেষদিনে হাঙ্গেরীয়রা পক্ষীজাতের কোনো প্রাণী খাবে না। কারণ তারা মনে করে যদি মুরগি, হাঁস বা কবুতর খায়, তাহলে নতুন বছরের সব সৌভাগ্য উড়ে যাবে। নববর্ষে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবদের তারাও উপহার দিয়ে থাকে, তবে এ উপহারে যদি চিমনি পরিস্কার করা শ্রমিকের ছবি ছাপানো থাকে, তবে উপহারটি তাদের কাছে অধিক বেশি পছন্দের হয়। কারণ এর মানে হচ্ছে পুরোনো বছরের সব দুঃখ, দূর্দশা দূর হয়ে যাবে।

এখন আমরা দেখি বিভিন্ন দেশের শিশু দিবস উদযাপনের পদ্ধতি

আপনি নিশ্চয়ই জানেন, ১ জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের নিজস্ব শিশু দিবসও আছে। এবং তা উদযাপনের পদ্ধতিও ভিন্ন রকমের এবং খুব মজার। আসলে আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের জন্ম রাশিয়ায়। ১৯৪৯ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র ও নারী কমিশন মস্কোয় একটি সম্মেলন আয়োজন করে এবং সে সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের শিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাস্থ্য অধিকার এবং শিক্ষার অধিকার রক্ষা করাসহ শিশুদের জীবন উন্নয়ন করার জন্য প্রতি বছরের ১ জুনকে আন্তর্জাতিক শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

অধিকাংশ ইসলাম দেশ রমজান মাসের পরের ১৪ দিনকে মিষ্টি দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে। তা শিশুদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের শিশু দিবস। তা সাধারণত তিনদিন ধরে উদযাপন করা হয়। শিশুরা ছোট বন্ধুর সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি বিভিন্ন পরিবারের কাছে মিষ্টি বা ক্যান্ডি চায়। স্থানীয় রীতিনীতি অনুযায়ী বয়ঃপ্রাপ্তরা শিশুদের চাহিদা প্রত্যাখ্যান করতে পারেনা। তাই শিশুরা এদিন নিজের পকেট পূর্ণ করে আনন্দের সঙ্গে বাসায় ফিরে যেতে পারে।

সুইডেনে ছেলে দিবস এবং মেয়ে দিবস নামে দুটি শিশু দিবস আছে। প্রতি বছরের ৭ আগস্ট হল ছেলে দিবস। তারা এ দিবসকে গলদা দিবস হিসেবেও ডাকে। মানে আশা করে দেশের ছোট ছেলেরা গলদার মত সাহসী হবে। এদিন শিশুকে গলদার মত করে সাজানো হয় এবং তারা খুব আনন্দময় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।

অন্য দিকে ১৩ ডিসেম্বর হল সুইডেনের মেয়ে দিবস। অর্থাত্ Saint Lucia's Day। সেইন্ট লুসিয়া হল সুইডেনের রূপকথায় বিশেষ করে মেয়েদেরকে রক্ষা করার দেবী। তাই এ উত্সবের সময় মেয়েরা লুসিয়ার মত করে সাজবে এবং অন্যান্য শিশুর জন্য ভালো কাজ করবে এবং সাহায্য করবে।

আপনি জানেন, ইরাকের শিশুরা কতটা অসহায়। যখন অনেক দেশের শিশুরা নিজের বিশেষ উত্সব উদযাপন করছে, তখন ইরাকের শিশুরা একদমই জানে না যে বিশ্বে নিজের জন্য এমন একটি বিশেষ উত্সব আছে। এদিনে তারা আগের মতই স্কুলে লেখাপড়া করে, দোকানে কাজ করে অথবা রাস্তায় ভিক্ষা করে। কারণ সাদ্দামের হোসেনের শাসন আমলের ২০ বছরে ১ জুন ছিল ইরাকের তৈল দিবস, তাই এদিন সারা দেশ শুধু তৈল উতসবই উদযাপন করে, শিশুদের জন্য কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল না।

এখন আমরা বিভিন্ন দেশের জাতীয় দিবস সম্বন্ধে কিছু বলবো। বিভিন্ন দেশের জাতীয় দিবস নির্ধারণের একটি তাতপর্য থাকে। যেমন, কিউবা ও কম্বোডিয়া নিজ দেশ প্রতিষ্ঠার সময়কে জাতীয় দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে। তাদের মত বিশ্বে ৩৫টি দেশ এভাবে জাতীয় দিবস নির্ধারণ করে। আর কিছু কিছু দেশ নিজ দেশের স্বাধীন হওয়ার দিনকে জাতীয় দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে, যেমন হাইতি, মেক্সিকো ও ঘানা।

আবার কিছু কিছু দেশ বিদ্রোহের দিনকে জাতীয় দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে। যেমন ১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবস। ১৭৮৯ সালের এদিনে প্যারিসের জনগণ বাস্তিল দুর্গ দখল করে। এ দুর্গ সামন্ততন্ত্রের প্রতীক।

এ ছাড়া, কিছু কিছু দেশ গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন আয়োজনের তারিখকে জাতীয় দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে। যেমন ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই কন্টিনানটাল কংগ্রেসের-এর সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের "স্বাধীনতা ঘোষণা"গৃহীত হয়ে। যুক্তরাষ্ট্র এদিনকে দেশের জাতীয় দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেছে। আর কিছু কিছু দেশ দেশের শীর্ষ নেতার জন্মদিনকে জাতীয় দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেছে। যেমন নেপাল, থাইল্যান্ড, সুইডেন, হল্যান্ড, ডেনমার্ক এবং বেলজিয়াম ইত্যাদি।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040