সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় এক ধরনের নতুন হিড়িক শুরু হয়েছে। সেটি হলো অনলাইনে খাবার খাওয়া দেখানো অনুষ্ঠান। দেশটির সুন্দরী পার্ক সেও-ইয়োন নিজের খাবার খাওয়ার ভিডিও সরাসরি ইন্টারনেটে প্রচার করেন। আর হাজার হাজার ইন্টারনেট-ব্যবহারকারীর সামনে সুস্বাদু খাবারের খাওয়ার তৃপ্তি বর্ণনা করার পাশাপাশি ভক্তদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন।
চৌত্রিশ বছর বয়সী পার্ক সেও-ইয়োন আগে একটি পরামর্শ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। একটি কাকতালীয় সুযোগে তিনি আবিষ্কার করেছেন যে, ক্যামেরার সামনে বসে সরাসরি খাবার খাওয়ার দৃশ্য প্রচার করলে উচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া যায়। তিনি বলেন, প্রতিদিন তিনি সিউলে তাঁর বাসায় তিন ঘন্টার অনলাইন খাবার গ্রহণ শো প্রচার করেন। অনুষ্ঠান চলাকালে দর্শকেরা তাঁকে ভার্চুয়াল বেলুন দেয়। প্রতিটি বেলুনের দাম ১শ' দক্ষিণ কোরীয় ওন অর্থাত্ ৯ মার্কিন সেন্ট। এভাবে তাঁর মাসিক গড় আয় প্রায় দাঁড়ায় ৯ হাজার ৪শ' মার্কিন ডলারে।
কী কারণে মানুষ পয়সা খরচ করে অন্যদের খাবার খাওয়ার ভিডিও দেখতে চায়? পার্ক সেও-ইয়োন বলেন,
"কারণ অনেক। যেমন তারা আবিষ্কার করেছেন যে, তারা এতো বেশি খাবার খেতে পারেন না অথবা তারা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। মানুষেরা আবিষ্কার করেছেন যে, আমার অনলাইন খাবার খাওয়ার মাধ্যমে তারা আনন্দ পান। এটা এক ধরনের বদলি আনন্দ।"
ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেন সিউল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন,
"আপনি যখন একা থাকেন, তখন আপনার খাবার খেতে অনীহা হয়। কিন্তু আপনি যখন অন্যদের সাথে খাবার খান, তখন আপনার খেতে ইচ্ছে করে। অনলাইন খাবার খাওয়া এমন ধরনের অনুষ্ঠান, যেটি কিছু মাত্রায় মানুষের মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণ করেছে। মানুষ অন্যদের সঙ্গে খাবার খাচ্ছে এ অনুষ্ঠান এমন ধরনের ভ্রম সৃষ্টি করে।"
অনেক নেটিজেন মনে করে, পার্ক সেও-ইয়োনের খাবার খাওয়া দেখা খুব মজার ব্যাপার। তাদের মনে হয়, যারা একা একা খাবার খায়, তাদের জন্য পার্ক সেও-ইয়োনের খাবার খাওয়ার দৃশ্য দেখা এক ধরনের তৃপ্তি। পাশাপাশি এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক অনুভূতি। পার্ক সেও-ইয়োন নিজেও মনে করেন, নেটিজেনদেরকে সাহায্য করা তাঁর জন্যও একটি খুব আনন্দের ব্যাপার। উত্তেজনার সঙ্গে তিনি বলেন,
"এসব কথা যখন শুনি, তখন আমি খুবই অনুপ্রাণিত বোধ করি। যেমন 'আপনাকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ আপনার জন্য আমি ক্ষুধাহীনতা থেকে মুক্ত পেয়েছি'। কেউ কেউ বলেন,' আমি হাসপাতালে আছি; কিছুই খেতে পারি না। আপনার খাবার খাওয়ার ভিডিওর কারণে এতো বিরক্তিকর জায়গায়ও খাবার খাওয়ার আনন্দ পেলাম। আপনি জানেন, এ ধরনের অনুভূতি চমত্কার!"
বর্তমানে এ ধরনের অনলাইন খাবার খাওয়া অনুষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ায় খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বেশি বেশি মানুষ পার্ক সেও-ইয়েনের দলে যোগ দিচ্ছেন। অনেকে আশা করছেন, তাদের এ উদ্যোগ সমাজের প্রতি কিছু ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।