Web bengali.cri.cn   
উইন-উইন সহযোগিতামূলক নতুন অংশীদারি গড়ে তোলা এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য যৌথভাবে কাজ করা উচিত
  2015-12-07 19:22:11  cri

চীনের প্রাচীনকালে একটি কথা আছে, "সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ অনুসরণ করে সকলের জন্য বিশ্ব সৃষ্টি করা।"

শান্তি, উন্নয়ন, ন্যায়, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা হচ্ছে মানবজাতির অভিন্ন মূল্যবোধ এবং জাতিসংঘের মহান লক্ষ্য। এখনও এ লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়নি, আমাদের আরো প্রচেষ্টা চালানো উচিত। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন দেশ পরস্পরকে নির্ভর করে বেঁচে থাকে এবং কষ্ট ও আনন্দ একসাথে উপভোগ করে। আমরা জাতিসংঘ সনদের লক্ষ্য ও মূলনীতি অনুসরণ ও প্রচার করবো, সহযোগিতা ও 'উইন-উইন' কে কেন্দ্র করে নতুন ধরণের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করবো। এর জন্য আমাদের নিচের কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রচেষ্টা চালানো দরকার।

---আমরা সমতা ও পারস্পরিক সমঝোতা ও আলাপ-আলোচনা ভিত্তিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবো। জাতিসংঘ সনদে সার্বভৌমত্বের সমতার মূলনীতি লিপিবদ্ধ আছে। বিভিন্ন দেশের যৌথভাবে বিশ্বের ভবিষ্যত ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। বিশ্বের সব দেশ সমান। বড় দেশ ছোট দেশকে চাপা দিতে পারে না। শক্তিশালী দেশ দুর্বল দেশকে উত্পীড়ন করতে পারে না। ধনী দেশ গরীব দেশকে হুকুম করতে পারে না।

সার্বভৌমত্বের মূলনীতি কেবল বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা লঙ্ঘন আর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়েই প্রতিফলিত হয় তা নয়, বরং বিভিন্ন দেশের নিজের সামাজিক ব্যবস্থা ও উন্নয়নের পথ বাছাই করার অধিকার রক্ষা করা আর নিজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবন উন্নয়নের বাস্তব অনুশীলনে সম্মান পাওয়ার বিষয়েও প্রতিফলিত হয়।

আমরা বহুপক্ষবাদ অনুসরণ করি, নাকচ করি একতরফাবাদকে। আমরা দু'পক্ষ,বহুপক্ষ ও সকলের কল্যাণ অর্জনের নতুন ধারণা অনুসরণ করি। আমার জয়, তোমার পরাজয় আর সব খেয়ে ফেলার পুরনো ধারণা বর্জন করতে হবে।

আলোচনা হচ্ছে গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি এবং আধুনিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ উপায়। সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধান এবং আলোচনার মাধ্যমে মতভেদ দূর করতে হবে। আমরা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবো, আমরা সংলাপ ও অংশীদার হওয়ার এবং রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন পথে এগিয়ে যাবো ।

বড় রাষ্ট্রগুলোর উচিত সংঘর্ষ ও বৈরিতা বাদ দিয়ে পরস্পরকে সম্মান ও সহযোগিতা করে সকলের কল্যাণ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানো। বড় দেশ ছোট দেশের সাথে সমানভাবে সহাবস্থান করবে এবং সঠিকভাবে উপকার ও স্বার্থ মেনে নিয়ে কাজ করবে। মনে রাখবে, ন্যায় স্বার্থের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

---আমরা ন্যায়পরায়ণতা এবং যৌথ প্রতিষ্ঠা ও উপভোগ করার নিরাপদ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবো। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের যুগে বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং পরস্পরের ওপর প্রভাব পড়ে। কোনো দেশের নিজের শক্তিতে নিজের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। কোনো দেশ অন্য দেশের গোলযোগ থেকে স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারে না। শক্তিশালী প্রাণীর দুর্বল প্রাণীকে খেয়ে ফেলা হলো জঙ্গলের আইন। এটা রাষ্ট্র রাষ্ট্র সহাবস্থানের নিয়ম নয়। সমস্ত সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ বাধা হচ্ছে আধিপত্যসুলভ কাজ, কেবল নিজের পায়েই কুড়ার মারার শামিল।

আমাদের সব ধরণের স্নায়ু যুদ্ধের ধারণা বর্জন করতে হবে, স্থাপন করতে হবে অভিন্ন, সার্বিক, সহযোগিতা ও টেকসই নিরাপত্তার নতুন ধারণা। আমরা যথাযথভাবে যুদ্ধ অবসান করে শান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবো, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংকট সমাধান আর বাধ্যতামূলক তত্পরতা একসাথে ব্যবহার করে নানা জটিল সমস্যার সমাধান করবো। আমরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা একসাথে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো, ঐতিহ্যগত ও অপ্রচলিত নিরাপত্তা খাতের হুমকি ভালোভাবে মোকাবিলা করবো, যুদ্ধ বাধার আগে ঝুঁকি এড়ানোর চেষ্টা করবো।

---আমরা উন্মুক্ত, উদ্ভাবনশীল, সহনশীল ও পারস্পরিক কল্যাণমূলক উন্নয়নের ভবিষ্যত সম্ভাবনা সৃষ্টি করবো। ২০০৮ সালে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকট থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, পুঁজি মুনাফা অর্জনের নিয়ন্ত্রণ না করলে নতুন দফা সংকট ঘটবে। বাজারে নৈতিকতা না থাকলে বিশ্বে সমৃদ্ধ উন্নয়ন হবে না। যারা ধনী, তারা আরো বেশি ধনী হবে। যারা গরীব, তারা আরো বেশি গরীব হবে। এমন অবস্থা ন্যায়সঙ্গত নয়। ভালোভাবে 'অদৃশ্য হাত' আর 'দৃশ্য হাত' ব্যবহার করে বাজারের ভূমিকা ও সরকারের ভূমিকার একীকরণ করতে হবে, যাতে কার্যকারিতা ও ন্যায়সঙ্গত নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয়।

সবার একসাথে উন্নয়ন মানে সত্যিকার উন্নয়ন। টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে সুষ্ঠু উন্নয়ন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চাইলে উন্মুক্ত মর্ম মেনে নিয়ে পরস্পরকে সাহায্য করতে হবে, পরস্পরকে সুযোগসুবিধা দিতে হবে। বর্তমান বিশ্বে আরো প্রায় ৮০ কোটি লোক চরম দারিদ্রে জীবনযাপন করছে। প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ শিশু পাঁচ বছর বয়সের আগে মারা যায়। প্রায় ৬ কোটি শিশুর শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ নেই। সদ্যসমাপ্ত জাতিসংঘ উন্নয়ন শীর্ষসম্মেলনে ২০১৫ সালের পরবর্তী উন্নয়ন কর্মসূচি নির্ধারিত হয়েছে। আমরা প্রতিশ্রুতিকে কার্যকলাপে রূপান্তর করবো, প্রত্যেক মানুষের উন্নয়ন ও সম্মান অর্জনের উজ্জ্বল ভবিষ্যত সৃষ্টির প্রয়াস চালাবো।

---আমরা মিলের মধ্যে পার্থক্য এবং ভিন্ন গ্রহণযোগ্য সাংস্কৃতিক বিনিময় অগ্রসর করবো। মানবজাতির সভ্যতার বৈচিত্র্যতা এই পৃথিবীর রঙিন রঙ সৃষ্টি করেছে। বৈচিত্র্যতা বিনিময় সৃষ্টি করে। বিনিময়ে সৃষ্টি হয় মিশ্রণ আর মিশ্রণ থেকে অর্জিত হয় অগ্রগতি ।

সভ্যতার সহাবস্থানে মিলের মধ্যে পার্থক্য থাকার মর্ম দরকার। কেবল বৈচিত্র্যতার মধ্যে পরস্পরকে সম্মান করা, পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা, সম্প্রীতিমূলক সহাবস্থান করলে এ বিশ্ব বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সমৃদ্ধ হবে। ভিন্ন সভ্যতার মধ্যে বিভিন্ন জাতির মেধা ও অবদান রয়েছে।

এর কোনো উঁচু নিচুর পার্থক্য নেই, নেই শ্রেষ্ঠ ও খারাপের তফাত।মানবজাতির ইতিহাস ভিন্ন সভ্যতার মধ্যকার বিনিময়, পারস্পরিক শিক্ষাগ্রহণ ও মিশ্রণের এক মহান চিত্রের মতো। আমাদের উচিত বিভিন্ন সভ্যতাকে সম্মান করা, পরস্পরকে সমান দৃষ্টিতে দেখে সহাবস্থান করা, পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা, মানবজাতির সভ্যতার সৃষ্টিশীল উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা।

---আমরা প্রকৃতি ও সবুজ উন্নয়নের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা গঠন করবো। মানবজাতি হচ্ছে প্রকৃতির একটি অংশ, প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে, প্রকৃতির ঊর্ধ্বে ওঠা যাবে না। আমাদের ভালোভাবে শিল্প সভ্যতা থেকে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব সমাধান করতে হবে।, আমরা মানুষ ও প্রকৃতির মিলেমিশে বসবাস করার লক্ষ্যে বিশ্বের টেকসই উন্নয়ন ও মানুষের সার্বিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করবো।

প্রাকৃতিক সভ্যতা গড়ে তোলা মানবজাতির ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পর্কিত। আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত হাতে হাত রেখে বৈশ্বিক প্রাকৃতিক সভ্যতা গঠনের পথ অন্বেষণ করা, প্রকৃতিকে সম্মান, অনুসরণ ও রক্ষা করার সচেতনতা স্থাপন করা, সবুজ, নিম্ন কার্বন, আবর্তনশীল ও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে চীনের অপরিহার্য দায়িত্ব আছে এবং চীন এ ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে নিজের অবদান রাখবে। এর পাশাপাশি আমরা শিল্পোন্নত দেশগুলোকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব বহন করে নির্গমন হ্রাসের প্রতিশ্রুতি পালন করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার সাহায্য করতে তাগিদ দিয়েছি।

1 2 3 4
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040