Web bengali.cri.cn   
চীনের জুতা-নগরে ইরাকি ব্যবসায়ী আমির
  2013-09-23 18:49:09  cri


উনত্রিশ বছর বয়সী ইরাকি ব্যবসায়ী আমির হুবেই আবু হামিদ এখন চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের চিনচিয়াংয়ে তার জুতা কোম্পানিতে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন। প্রতি বছর তিনি চীন ও ইরাকের মধ্যে দশ বারো বার যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, "আমি চীনে তিন বছর ধরে আছি। চিনচিয়াং ছাড়া আমি বিভিন্ন অঞ্চলে জুতা ব্যবসা করেছি। যেমন কুয়াংচৌ, ঈ উ, ওয়েন লিং। চীনের পরিবেশ খুব আরামদায়ক। যত দিন থাকি না কেন, কখনো বিরক্তি লাগে না।"

ইরাকি ব্যবসায়ী আমির সিআরআইয়ের সংবাদদাতাকে সাক্ষাত্কার দিচ্ছেন

আমিরের চোখে চিনচিয়াং এক অতি সুন্দর নগর। এখানকার মানুষ বিদেশিদের সঙ্গে সহজ মেশে। নিজের ব্যবসা প্রসঙ্গে আমির বলেন, "আমরা এখানে পণ্য উত্পাদন করে বাগদাদে পাঠাই। তারপর আবার চীনে ফিরে এসে পণ্য উত্পাদন করি। আবার ইরাকে বিক্রি করি। ইরাকি লোকজন চীনের পণ্য খুব পছন্দ করে। কারণ চীনা পণ্যের মান ভালো, দামও ভালো। খুব দাম নয়, আবার খুব সস্তাও নয়। ইরাকের বাজারের জন্য উপযুক্ত।"

আমিরের কোম্পানির অনুবাদক মিস তিং ইয়া মিং একজন চীনা মুসলমান। ১৯৯৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল পাশ করার পর তিনি সিরিয়ার দামেস্কে গিয়ে আরবি ভাষা শেখেন। এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকের কথা স্মরণ করে তিনি আবেগের সাথে বলেন, "আমি ২০০৪ সালে এ কোম্পানিতে যোগ দিই। তাদের সাথে আমার যখন পরিচয় হয়, তখন তারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। আমার মনে আছে, সে সময় তারা একটি ছোট কার্যালয় ভাড়া নিয়েছিলেন। অফিসে মাত্র কয়েক জোড়া জুতার নমুনা ছিল। ইরাকে তাদের পাইকারি বাজার ও নিজের গুদাম ও দোকান আছে। তারা চীন থেকে জুতা আমদানি করে ইরাকি এজেন্টদের কাছে বিক্রি করেন। তাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশের দায়িত্ব পালন করেন। যেমন কারো আর্থিক দায়িত্ব, কারো বিক্রির দায়িত্ব, কারো ফরমাশের দায়িত্ব, কারো বাজার অনুসন্ধানের দায়িত্ব। সবাই পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে। আস্তে আস্তে তাদের ব্যবসা বড় হয়েছে। বলা যায়, তাদের প্রথম বালতি অর্থ চীনে পেয়েছেন।"

সব কাজেরই শুরুটা সবচেয়ে কঠিন। চীনে আসার প্রথম দিকে আমিরের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ভাষাগত সমস্যা। তিনি বলেন, "শুরুর দিকে অনেক কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে কিছুদিন পর তা অনেক সহজ হয়ে যায়। প্রথম দিকে আমরা ভাষার সমস্যায় পড়েছিলাম। তবে আমি পরে কিছু চীনা ভাষা শিখেছি। এর মাধ্যমে আমি স্থানীয় লোকদের সঙ্গে বোঝাপড়া বাড়াতে পেরেছি। আমাদের কোম্পানির সবচেয়ে কঠিন পর্যায় অতিক্রম করেছে।"

আমির সংবাদদাতাকে বলেন, তাঁর চীনা ভাষা তেমন ভালো নয়। তাঁর চীনা বন্ধুরা বেশির ভাগ কাজের সাথে সম্পর্কিত আরবি ভাষা অথবা ইংরেজি ভাষা বলতে পারেন। তাঁরা আমিরকে কর্ম, জীবন আর ভাষার দিক থেকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন।

আমির বলেন, "চীনা মানুষ খুব ভালো। আমি অনেক দেশে গিয়েছি। তবে কোথাও কেউ চীনাদের মতো বিদেশিদের সাথে ব্যবহার করে না। চীনারা পরিশ্রমী, বন্ধুবাত্সল, আন্তরিক, দয়ালু ও বিশ্বাসযোগ্য। চীন এক অতি সুন্দর দেশ। এক মহান দেশ। এখানে খুব ভালো বাণিজ্যিক সুযোগ আছে।"

আমির নিজের জীবনের অংশবিশেষ ও চারকি চীনে দিয়েছেন। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় তিনি এক চমত্কার চীন আবিষ্কার করেছেন। চীনের দ্রুত উন্নয়ন তাঁর স্বপ্নকে রঙিন করেছে। তিনি বলেন, "প্রতি বার চীনে এসে আমি কিছু নতুন জিনিস দেখতে পাই। যেমন একটি নতুন রাস্তা, একটি নতুন কমিউনিটি অথবা একটি নতুন বাজার। চীন দ্রুত গতিতে বিকশিত হচ্ছে।"

চিনচিয়াং হচ্ছে চীনের বেসরকারি অর্থের সবচেয়ে প্রাণবন্ত শহরের অন্যতম। আমির এ শহরের স্থানীয় পরিশ্রমী শিল্পপতিদের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি বলেন, "যদিও আমি ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছি, তবে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে লেনদেনের প্রক্রিয়ায় অনেক 'ব্যবসার কৌশল' শিখেছেন। তিনি বলেন, "আমার স্বপ্ন হচ্ছে এ কোম্পানিকে আরো বড় করার। ভবিষ্যতে চীনে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। আমি আশা করি, আমাদের ছেলে বড় হলে তার নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। সেও চীনে আসবে।"

আমিরের মতো চিনচিয়াং শহরে আরো অনেক বিদেশি বন্ধু আছেন। তারা নানা স্বপ্ন নিয়ে চীনে এসেছেন। নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় তাঁরা স্থানীয় উন্নয়নের অংশগ্রহণকারী ও সঙ্গী হয়েছেন। (ইয়ু/এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040