|
আলিম. সুবর্ণা, আপনার বর্ণনা শুনে কিন্তু যে-কারোর এ-পাউরুটি টোস্ট খেতে ইচ্ছে করবে। খেতে নিশ্চিয়ই খুব মজা। এ-টোস্ট কি বেইজিংয়ে পাওয়া যায়?.... বন্ধুরা, আরো আছে; আমরা আপনাদের ছ্যুচৌ জেলার আরো কিছু সুস্বাদু খাবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব। তবে তার আগে শুনে নেব একটি সুন্দর গান। গানটি গেয়েছেন চীনের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্রশিল্পী চৌ শুন। তিনি তার বৈশিষ্ট্যময় কন্ঠে গানটি গেয়েছেন। তাঁর জন্মস্থান ছ্যুচৌ জেলায় এবং তিনিই চীনের একমাত্র শিল্পী যিনি চীনের মূল ভূভাগ, হংকং বিশেষ প্রশাসনিক এলাকা ও তাইওয়ান প্রদেশের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন। বন্ধুরা, এখন আমরা যে-গানটি শুনবো তার নাম 'সমুদ্র দেখা'।
সুবর্ণা: গানের কথা মোটামুটি এমন: সমুদ্রের বাতাসে আমার চেহারা লাল হয়ে গেছে/ আমাদের রোমান্টিক ছবি দেখে তোমাকে সঙ্গে নিয়ে সমুদ্র দেখার সাধ জাগে/ এখন বুঝতে পারি তুমি আমার জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলে/ কে জানে তুমি এখন কার যত্ন নাও বা তুমি ভাবছো এখন কার কথা/ তবে জানি তোমার হৃদয়ে আমার স্থান আগের মতোই আছে....
আলিম. গানের কথাগুলো কিন্তু ভারী সুন্দর। তো এই সুন্দর গানটি শোনার পর এখন ছ্যুচৌ জেলার আরেক ধরনের হাল্কা খাবারের সাথে শ্রোতাদের পরিচয় করিয়ে দেব। খাবারটির নাম 'মাসি'। এ-খাবার শরত্কালে ফসল তোলার পর তৈরি এক ধরনের মিষ্টি খাবার। 'মাসি' এক ধরণের আঠালো খাবার। প্রথমে চাল সেদ্ধ করা হয় এবং সেদ্ধ চাল পাথরের হামানদিস্তায় রেখে কাঠের হাতুড়ি দিয়ে দ্রুত গুড়া করা হয়। এসময় কিছু পানি দেয়া হয়। এতে আঠালো নরম পিন্ড তৈরি হয়। আঠালো পিন্ড দিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করা হয় এবং তা চিনির সিরার মধ্যে রেখে দেয়া হয়। ছ্যুচৌ জেলার বাচ্চারা এ-হাল্কা খাবার খেতে বেশি পছন্দ করে।
সুবর্ণা. আরেক ধরনের হাল্কা খাবারের নাম 'সিসেম পাউরুটি'। 'সিসেম পাউরুটি' ছ্যুচৌ জেলায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খাওয়া হচ্ছে। 'সিসেম পাউরুটি' তৈরি করতে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। পাচক প্রথমে ৩০টি ছোট পাউরুটি একটি সিসেমভর্তি বড় আকারের ঝুড়িতে রাখে। একবার নাড়া দিলে ৩০টি পাউরুটি সৈন্যদের মতো সুশৃঙ্খলভাবে সিসেমের সাথে লেগে যায়; দ্বিতীয়ভার নাড়া দিলে ৩০টি পাউরুটি আবার সুশৃঙ্খলভাবে নড়েচড়ে বসে। এ-খাবার তৈরির প্রক্রিয়া অনেকটা যাদুর মতো; চোখে না-দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আমার মনে হয়, নিজের চোখে এ-খাবার তৈরি করতে দেখে, তারপর তা খেলে বেশি মজা লাগে। যেমন, আমি তাইওয়ান প্রদেশের নাইথ বাজারে রোস্ট চিংড়ি খেতে চাইলে দোকানের মালিক কাঁচা চিংড়ি মাছ আমার সামনে রেখে তারপর তা রোস্ট করেছিল। সত্যি বলছি, এভাবে রোস্ট চিংড়ি খেতে আমার কাছে বেশি মজা লেগেছে। আলিম ভাই, আপনার কোনো অভিজ্ঞতা আছে?
আলিম. সুবর্ণা, আপনি ঠিকই বলেছেন। খাবার কীভাবে তৈরি হচ্ছে তা দেখার পর নির্দিষ্ট খাবার খেতে বেশি মজা লাগে। চীনে আসার পর আমি এ-ধরণের খাবার খেয়েছি; এমনকি বাংলাদেশেও কোনো কোনো বড় রেস্টুরেন্টে কিচেন একেবারে ওপেন থাকে এবং আপনি খাবার তৈরি গোটা প্রক্রিয়া নেজের চোখে দেখতে পারেন।
সে যাক, ছ্যুচৌ জেলার আরেকটি খাবার বেশ জনপ্রিয়; খাবারটির 'শানকুং নুডলস'। এ-খাবারকে 'সুও নুডলস' নামেও ডাকা হয়। কথিত আছে, প্রাচীনকালে চীনের সোং রাজবংশের রাজা চাও খুয়াং ইন এ-নুডলস খেতে পছন্দ করতেন। প্রতি বছর স্থানীয় অঞ্চলের নুডলস তৈরি করে রাজপ্রাসাদে পাঠানো হতো। এ-নুডলস লবণাক্ত পানি ও আদা দিয়ে তৈরি। সিদ্ধ করার পর ঝাল মরিচের তেল, পেঁয়াজ ও সিদ্ধ ডিমের সঙ্গে মিশিয়ে এ-নুডলস খেতে বেশ মজা লাগে। নিয়ম হচ্ছে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্মদিন পালনের উত্সবে অবশ্যই এই নুডুলস থাকতে হবে। চীনের সংস্কৃতিতে নুডলস হল দীর্ঘায়ুর প্রতীক। চীনারা নিজেদের জন্মদিনে অবশ্যই নুডলস খায়।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |