|
সুবর্ণা. হ্যাঁ, চিংতেচেন হল বিশ্ব বিখ্যাত চীনা মাটির শহর, এখানে চীনা মাটির হস্তশিল্প চর্চার ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। ইতিহাসের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে যে, প্রাচীনকালের হাং রাজবংশ আমলে এ-জেলায় চীনা মাটি দিয়ে বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরীর প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়। ইউয়ান রাজবংশ থেকে মিং ও ছিং রাজবংশের রাজারা রাজপ্রাসাদে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে চীনা মাটির হস্তশিল্পকর্ম তৈরীর জন্য এ-জেলায় বিশেষ কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছিলেন। তখন রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় চীনা মাটিশিল্প উন্নত হয়।
আলিম. চিংতেচেনের চীনা মাটির তৈজসপত্রের ইতিহাস ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আরো তথ্য জানবো। তবে, তার আগে শ্রোতাদের শোনাতে চাই একটি সুন্দর গান। গানের নাম ছিংহুয়া বা নীল ও সাদা রঙয়ের চীনা মাটি। গানের গায়ক চীনের তাইওয়ান প্রদেশের বিখ্যাত শিল্পী চৌ চিয়ে লুন।
সুবর্ণা. আচ্ছা, সুন্দর গানটি শোনার পর এখন আমি ছিংহুয়া চীনা মাটি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানাই। চীনা ভাষায় ছিংহুয়ার অর্থ হল নীল ও সাদা রঙয়ের চীনা মাটির তৈজসপত্র। প্রাচীনকালের থাং ও সোং রাজবংশ আমলে এ-ধরনের তৈজসপত্র তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কার করা হয় এবং পরে মিং রাজবংশ আমলে তা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়। আরো পরে, ছিং রাজবংশ আমলে বহুবর্ণ ছিংহুয়া শিল্পকর্ম অনেক সমৃদ্ধ হয়। এ-প্রযুক্তিতে নানা আকারের বাটি, বোতল, প্লেট বা ফুলদানি তৈরি করা হতো। সাধারণত সাদা মাটিতে নীল রঙয়ের ফুল, পাখি বা অন্যান্য নকশা এঁকে তৈজসপত্র তৈরি করা হতো। বিশেষ করে প্রাচীনকালের রাজপ্রাসাদের জন্য তৈরি চীনা মাটির তৈজসপত্রের মান ছিল অনেক ভালো। প্রাচীনকালের সেসব শিল্পকর্মের কোনো কোনোটির দাম এখন কয়েক কোটি ইউয়ানেরও বেশি।
আলিম. চীনের ইংরেজি নাম 'চায়না'। অন্যদিকে, চিংতেচেনের ইরেজি নাম ছাংনান। দুটো শব্দের উচ্চারণে অনেক মিল আছে। অনেকে মনে করেন, ছাংনান থেকে চায়না শব্দের উত্পত্তি হয়ে থাকতে পারে। সে যাক, প্রায় ১৮০০ বছর আগে চীনারা চীনা মাটির তৈজসপত্র তৈরী শুরু করেছিল বলে ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়। তখনকার চীনা মাটির শিল্প মিং ও ছিং রাজবংশ আমলের চীনা মাটির শিল্পের মতো এতো সুন্দর আর পরিমার্জিত ছিল না। তবে, চীনা মাটির বাটি, প্লেট বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস তখন থেকেই ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের জীবনে প্রবেশ করে।
চিংতেচেনের চীনা মাটির হস্তশিল্পকর্মের নকশা ও আকার দারুণ সুন্দর। চিংতেচেনের চীনা মাটি হস্তশিল্পকর্ম সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে। তা হল: এ-শিল্পকর্মগুলো সাদা জেড পাথরের মতো, পরিস্কার আয়নার মতো, হাল্কা কাগজের মতো এবং এসব তৈজসপত্রের গায়ে টোকা দিলে সৃষ্টি হয় একধরণের বিশেষ শব্দ। চিংতেচেনের চার ধরনের চীনা মাটির তৈজসপত্র বিশ্ববিখ্যাত ও জনপ্রিয়। এর মধ্যে হাল্কা চীনা মাটি দিয়ে তৈরি পুতুলকে শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম হিসেবে গণ্য করা হয়।
সুবর্ণা. আচ্ছা, চীনা মাটি এবং চীনা মাটির তৈজসপত্র সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জানার আগে, আমরা আরেকটি গান শুনবো। গানের নাম 'চিংতেচেনের মেয়ে'।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |