Web bengali.cri.cn   
বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের বর্হিগমনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
  2013-02-04 16:40:36  cri

বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের নিরপত্তা ব্যবস্থার কথা বলতে চাইলে, বলে শেষ করা যাবে না। এদের মধ্যে যেমন নিঃচ্ছিদ্র আর বিলাসি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, আবার সাধারণ, অতি-সাধারণ মানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আছে।

২০১২ সালের অক্টোবর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চাঁদা সংগ্রহের জন্য লস এ্যাজিলাসে যান। তখন লস এ্যাজিলাসের পুলিশ ওবামার চলার পথে অল্প কিছু সময় সাধারণের জন্য ট্রাফিক কনট্রোল জারি করে। যদিও স্থানীয় টেলিভিশন, পত্রিকা ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আগাম ঘোষণা দেওয়া হয়, তবুও এমন সিদ্ধান্তে সত্যি জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচলে ব্যাপক দূর্ভোগ সৃষ্টি করে। এতে অনেক নাগরিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।

লস এ্যাজিলাসের বাসিন্দা মিলেন্না ওয়েবসাইটে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ঠিক আমার বাসার সামনে থেকে চলে যান, সত্যি ২০টিরও বেশি পুলিশের গাড়ি তার চারপাশে ছিল। এমন কঠিন ট্রাফিক কন্ট্রোল-এর কারণে আমি আমার যোগব্যায়ামের ক্লাসে যেতে পারিনি। ভিল নামে আরেকজন লিখেছেন, প্রিয় প্রেসিডেন্ট ওবামা, আপনি জানেন কি, এই পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি সাফল্যের সঙ্গে ভোটারদের হারাবেন। ঠিক আপনার কারণে লস এ্যাজিলাসের সড়ক যোগাযোগ বিশৃংখল হয়েছে।

এমন ট্রাফিক কন্ট্রোল যদিও প্রেসিডেন্টের চলাচল নিশ্চিত করেছে, তবুও সত্যি জনসাধারণের জন্য তা দূর্ভোগের কারন হয়েছে। আরো কিছু কিছু লোক ওবামাকে প্রস্তাব দিয়েছেন। যেমন তারা বলেন, প্রিয় প্রেসিডেন্ট, প্রতিবার আপনি যখন লস এ্যাজিলাসে যাবেন তখন সড়ক যোগাযোগ বিশৃংখল হয়ে পড়ে, এটা সত্যি ভালো নয়, হেলিকপ্টার, হ্যাঁ, আপনি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আসতে পারেন, অথবা গোপন সুড়ঙ্গ-সড়কের কথাও বিবেচনা করতে পারেন আপনি।

একবার নয় এমন ঘটনা অনেক বার ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। আপনারা কি জানেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট একবার বাইরে যেতে সাধারণত কতগুলি গাড়ি একসাথে যায়? এ সংখ্যা হল ২৭টি। আপনি হয়তো আরও জিজ্ঞেস করতে চান, একজন ব্যক্তি বাইরে যাবে, তার জন্য ২৭টি গাড়ি কেন লাগবে? তাহলে এ ২৭ গাড়ি কার কার জন্য? হ্যাঁ, প্রেসিডেন্টের জন্য অবশ্যই একটি বিশেষ গাড়ি থাকবে আর এ গাড়ি নিশ্চয়ই কেবল বিলাশবহুল নয়, নিরাপত্তার দিক থেকেও অনেক উচুমানের। এ ছাড়া রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা রক্ষী সৈন্য, দেহরক্ষী, স্থানীয় কর্মকর্তারা, তার উপদেষ্টা গ্রুপসহ আরও বেশকিছু উচ্চপদস্থ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তার গাড়ি। এ ছাড়া নিরাপত্তা সু-নিশ্চিত করতে স্থানীয় পুলিশ মোটরসাইকেল দল প্রেসিডেন্টের গাড়ি বহরের সামনে থাকবে। আর ট্রাফিক কন্ট্রোল তো নিশ্চয়ই থাকবে, কারণ প্রেসিডেন্ট বলে কথা।

তবে এদিকে প্রেসিডেন্টের নিরপত্তা বিষয়ক একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন যে, তারাও আসলে নিরুপায়। কারন নিরাপত্তার এই সকল ব্যবস্থা ছাড়া প্রেসিডেন্টের পক্ষে বাইরের কোনো অনুষ্ঠানে সময় মত পৌঁছানো সম্ভব নয়। যদি ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তবে প্রেসিডেন্টের পক্ষে সময় মত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিষয়টি নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে।

আসলে এ বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও একই অভিযোগে অভিযুক্ত। যদিও দেশের ভিতরে "বিশেষ অধিকার প্রাপ্ত গাড়ি" নামে বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত গাড়ি-নীতি বাতিলের জন্য তিনি রাশিয়ায় কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন, তবে তিনি নিজেই যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবসময় বিশেষ অধিকার ভোগ করে থাকেন। আর কারণে অভিযোগেরও শেষ নেই। তাই বাধ্য হয়ে এক টি ভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

বিশ্বে তো অনেক দেশ আছে, সব দেশের নেতারাই এমন দূর্ভোগ সৃষ্টিকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন? এর উত্তর হল না। ওবামা এবং পুতিনের তুলনায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিস্কো ওঁলাদের নিরাপত্তা প্রটোকল কিন্তু খুব সাধারণ এবং সহজ। ২০১২ সালের গ্রীষ্মকালে প্রসিডেন্ট হিসেবে নব নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি প্রথমবারের ন্যায় প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপনের জন্য নির্ধারিত স্থান—প্রেগানকোন দুর্গ ভ্রমনে যান। তিনি কিভাবে গেছেন এটা শুনলে আপনার নিশ্চয়ই ভাল লাগবে। তিনি সাধারণ ট্রেনে করে সেখানে যান। তিনি বলেন, এখনো ফ্রান্সের আর্থিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার হয় নি, তাই বিলাশ বহুল ভ্রমনে অর্থ অপচয়ের পরিবর্তে সাশ্রয় করাটাকে উত্তম মনে করলেন। আসলে এ ক্ষেত্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নতুন সম্পাদক সি চিন পিংও দৃষ্টিন্তা রেখেছেন। এখন তিনি বাইরে যেতে কোনো ট্রাফিক কন্ট্রোল জারি করেন না এবং জনসাধারণের মত ট্রাফিক লাইটের সামনে অপেক্ষা করেন এবং জনসাধারণ কাছে থেকেই তাঁকে দেখতে পাবেন।

আসলে শীর্ষ নেতাদের এমন আচরণের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে তাদের দূরত্ব অনেক কমে যাবে, ঠিক না? এ বিষয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড কামেরোনও খুব ভালো একটি উদাহরণ হতে পারে। যদিও তাঁর পরিবার অনেক ধনী, তবে জনগণের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি খুব ভালো এবং তা বিলাসি নয়। তিনি এবং তাঁর স্ত্রীর সবচেয়ে প্রিয় যানবাহন হল বাই-সাইকেল। বিবিসি বিশেষ করে একবার তার বাই-সাইকেল চালিয়ে কংগ্রেসে যাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করে।

প্রধান মন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি সব সময় বাই-সাইকেল চালাতেন এবং এ সময়ে দু, দু'বার তাঁর বাইসেকেল হারিয়ে যায়। এ থেকে বোঝা যায় তিনি অনেক আগে থেকেই বাইসেকেল চালাতেন। ২০০৮ সালে যখন তিনি রক্ষণশীল পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি পুলিশের কাছে জানিয়েছেন যে, অফিস শেষে তিনি বাইসেকেল চালিয়ে সুপারমার্কেটে কিছু জিনিস কিনতে যান, এবং কেনাকাটা পর তিনি আবিস্কার করেছেন যে তাঁর বাই-সাইকেলটি হারিয়ে গেছে। আবার ঠিক একবছর পর বাসার সামনে থেকে চোর তাঁর বাই-সাকেলটি চুরি করে। লিপন, তুমি কি জানো, কামেরোনের প্রতিক্রিয়া কি? তাঁর মুখপাত্রের কথা অনুযায়ী, তিনি অনেক অনেক রাগ করেছিলেন। কারণ বাই-সাইকেল তাঁর প্রিয় বাহনের একটি।

কামেরোনের নিরাপত্তা প্রোটকল সম্পর্কে আমিও তথ্য মাধ্যম থেকে কিছু জানতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও সবসময় খুব সহজ সাদামাটা নিরাপত্তা বলয়ে বাইরে যেতে পছন্দ করেন, এমনটাই দেখা যায়। ২০১০ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন, আর তিনি সাধারণের মতোই বিজনিস ক্লাসের টিকিতে বিমান যোগে ওয়াশিংটনে ভ্রমন করেন। এরপর নিইউয়র্ক সফরকালে তিনি কোনো বিশেষ গাড়ি গ্রহন করেন নি, বরং তিনি জনসাধারণের সাথে একই ট্রেনে করে সেখানে গেছেন। তাঁর এই সফর মার্কিন তথ্য মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করেছে, বিশেষ করে তাঁর নিরাপত্তা প্রটকলের ভূয়সী প্রশংসা করে। আমারা সবাই জানি, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিদেশ সফরে অবশ্যই বিশেষ বিমান 'এয়ার ফোর্স ওয়ান' করেই ভ্রমন করতে হবে। আর স্থলে রয়েছে বড় আর বিলাশ বহুল গাড়ির বহর। তাই তুলনামূলক ভাবে এ দু'নেতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কামেরোনই তথ্য মাধ্যম এবং জনগণের কাছে বেশি পছন্দের হয়ে থাকবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040