Web bengali.cri.cn   
"বড়দিনের পরী"
  2013-01-28 19:27:02  cri

সান্টাক্লস বড় দিনে শিশুদের জন্য উপহার নিয়ে আসে। রাতে শিশুদের বিছানায় একটি বড় মোজা রাখা হয়, সান্টাক্লস বাসার ওপড়ের চিমনি থেকে রুমে প্রবেশ করেন আর শিশুদের মোজায় উপহার রেখে আবার চলে যান।

এ ছাড়া অনেক শিশু বড় দিন উপলক্ষ্যে সান্টাক্লসকে চিঠি লিখে। তারা বিশ্বাস করে যে বিশ্বে সত্যি সান্টাক্লস নামে একজন ব্যক্তি আছেন। তারা ঐ চিঠির মাধ্যমে সান্টাক্লসকে নিজের মনের আশা ও আকাঙ্খার কথা জানায়।

অনেক মানুষ শিশুদের মনের ছোট ছোট আশা, আকাঙ্খা আর চাহিদা পুরণে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরের বড় দিনের সময় অনেক মানুষ "ক্রিস্টমাস ফেইরি" অর্থাত্ "বড়দিনের পরী" সেজে চিঠিতে লেখা শিশুদের আকাঙ্খা পূরণ করে থাকে। সান্টাক্লসকে চিঠি লিখছে এমন শিশুদের ছোট ছোট চাওয়া, আশা-আকাঙ্খা পুরণের জন্যই মূলত তারা কাজ করেন। ফেইরি বলতে কিন্তু আমাদের মনে লম্বা কান, সোনালী রঙের ডানা, মাথায় বাহারি মুকুট এমন একটি চেহারাই ভেসে আসে। কিন্তু আসলে তা নয়। তাদের চেহারা সাধারণ মানুষের মত, এমনকি তাদের মধ্যে অনেকের আর্থিক অবস্থাও ততটা ভালো নয়। যদিও তারা অনেক ভালো কাজ করছেন এবং তাদের নাম, পরিচয়ও জানা যায় না, তবুও তারা সক্রিয়ভাবে এই কাজ অর্থাত্ শিশুদের আশা পূরণে সর্বদাই সক্রিয় থেকেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ বয়োসের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সংস্থাগুলোর মধ্যে অনেক প্রাচীন এবং প্রথম সারির একটি। প্রতি বছরের বড়দিনের আগে বিভিন্ন রাজ্যের ডাক বিভাগ সান্টাক্লসকে লেখা শিশুদের পাঠানো অনেক চিঠি পায়। শ্রোতারা, হয়তো আপনাদের প্রশ্ন আসবে, চিঠিতে ঠিকানা কিভাবে লেখা হয়? শিশুরা সহজভাবে "উত্তরমেরু", "আলাস্কা", "সান্টাক্লসের বাড়ি" এমন সব ঠিকানা লিখে। এটা ডাক বিভাগের জন্য সত্যি অসম্ভব একটা ব্যাপার কেননা চিঠিগুলো যৌক্তিক ভাবেই তারা পাঠাতে পারে না। এই সকল চিঠিতে শিশুরা সান্টাক্লসকে মনের মাধুরী মিশিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। কেউ মজা করে সান্টক্লসের কাছে জানতে চায় যে দুষ্ট শিশু বা ভাল শিশু এটা যেন শিঘ্রই তাকে বলে দেয়। কারণ সান্টাক্লস যদি একবার তাকে ভাল শিশু বলে তাহলেই সে প্রচণ্ড খুশী। আবার কেউ কেউ তার কাছে উপহার চেয়ে চিঠি লেখে। তবে হ্যাঁ উপহারগুলোও কিন্তু শিশুদের মতোই ছোট ছোট যেমন কোনো শিশু শুধু একটি ক্রিস্টমাস মিল চেয়ে চিঠি লিখলো।

ডাক অফিসের কর্মীরও কিন্তু অনেক হৃদয়বান, সুন্দরমনের মানুষ। তারা কোনোভাবেই এসব শিশুদের মন খারাপ হতে দিতে নারাজ। তাই প্রথমদিকে কিছু কিছু কর্মী সান্টাক্লসের নামেই শিশুদের চিঠির উত্তর পাঠিয়ে দিত। আর এই ধরণের চিঠি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে এর সংখ্যা বেড়েই চললো। আর ডাক বিভাগের অল্পকিছু লোকের চেষ্টায় এ সমস্যার সমাধান করাও সম্ভব হয়ে উঠছিল না। আর এই সমস্যা সমাধানে ১৯১২ সালের বড়দিনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক ব্যুরোর তখনকাল প্রধান ফ্রান্ক হিচকো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের ডাক অফিস কর্মী এবং উত্সাহী ব্যাক্তি সান্টাক্লসের নামে চিঠির উত্তর দিতে পারবে।

গত শতাব্দীর ৪০ দশকে আরো বেশি চিঠির উত্তর দেয়ার জন্য মার্কিন ডাক ব্যুরো শিশুদের জন্য "সান্টাক্লস কার্যক্রম" গ্রহণ করে। সেবামূলক অথবা বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোও এ কার্যক্রমে অংশ নিতে চাইলে সানন্দে স্বাগতম জানানো হয়। একটাই উদ্দেশ্য, যাতে আরো বেশি মানুষ শিশুদের লেখা চিঠির উত্তর প্রদানের মাধ্যেম তাদের ছোট ছোট চাওয়া, আশা, আকাঙ্খাগুলো পূরণ করতে পারে। গত ৬০ বছর ধরে চলে আসা এই "সান্টাক্লস কার্যক্রম" বর্তমানে একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সংস্থা, ডাক অফিস বর্তমানে এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে। আর এদের মধ্যে নিইউয়র্ক, লস এ্যাঞ্জেলেস ও শিকাগোর আকার সবচেয়ে বড়।

প্রতিবছরের ডিসেম্বর পিটার ফনটানা'র জন্য সবচেয়ে ব্যস্ততম একটি মাস। কেননা তিনি হচ্ছেন একটি ডাক অফিসের "শীর্ষ ফেইরি কর্মকর্তা"। নিশ্চই এই পদের নাম শুনে কি খুব আশ্চর্য হলেন? হ্যাঁ ৬০ বছর বয়সী এই ফোনটানা শীর্ষ ফেইরি কর্মকর্তা হিসেবে ডাক অফিসে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর কথা হচ্ছে এই কাজে তিনি যত বেশি ব্যস্ত থাকতে পারবেন, তত বেশি শিশুদের মুখে ফুটবে হাসি ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনে ।

ফোনটানার কর্মক্ষেত্র নিইউয়র্ক ডাক অফিস তাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চিঠি পায়। ডাক অফিসের কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা মিলে চিঠির মহাসাগর থেকে সান্টাক্লসের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিগুলো বাছাই করেন। শুনে অবাক হবেন যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিটি বড়দিনকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ চিঠি এই ডাক অফিসে আসে। ডাক অফিস ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এই সেবামূলক কার্যক্রম শুরু করে দেয়। এরপরের তিন সপ্তাহে আপনি সবচেয়ে মুগ্ধকর সেই দৃশ্য দেখতে পাবেন। হাজার হাজার হৃদয়বান, শিশু-সুহৃদ ব্যাক্তি ডাক অফিসে আসেন আর তারা এসব চিঠি পড়েন। এরপর তারা বেছে বেছে কিছু চিঠি নিয়ে যাবে আর চিঠিতে লেখা শিশুদের মন বাসনা অনুযায়ী চিঠির উত্তর প্রদান আর তার সাথে উপহার সামগ্রী পাঠিয়ে দিবে। শ্রোতাবন্ধুরা এখানেই শেষ নয়। ডাক অফিস কিন্তু এইটুকু করেই ক্ষান্ত দেয়নি। তারা আরো একটি ভালো কাজ করেছে। শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্য ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ডাক অফিস ২০০৯ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবকদেরকে শিশুদের ঠিকানা জানানো বন্ধ করে দিয়েছ। অর্থাত যদি কেউ শিশুদের ভালবেসে তাদের আশা পূরণ করতে চান, তাহলে উপহার নিয়ে ডাক অফিসে আসুন আর ডাক অফিসের মাধ্যমে আপনার উপহার পাঠিয়ে দিন।

অনেক গরিব মানুষও আছে যাঁরা এই কর্মযজ্ঞে অংশ নিয়ে থাকেন। তাঁরা বেছে নেন সেই সকল ছোট ছোট উপহার যা তাঁরা সহজেই এবং সস্তায় কিনতে পারেন। আপনি কিন্তু অবাক হবেন যে, এমন অনেক বেকারও আছে যারা শিশুদের আশা, আকাঙ্খা, আর ইচ্ছা পূরণে এগিয়ে আসে।

এ প্রসঙ্গে ফোনটানা একটি উদাহারণ দিয়ে বলেন, এমন একজন বেকার পুরুষ আছেন, যিনি কয়েক ঘন্টা সময় নিয়ে এমন একটি চিঠি খুঁজে বের করেন যেন তার সক্ষমতার মধ্যে থেকেই উপহারটি ক্রয় করতে পারেন। আরও অবাক হবেন এটা শুনে যে, বেশ কিছু কারাগারের বন্দী তথ্য মাধ্যম থেকে এমন সুন্দর সেবামূলক কার্যক্রমের কথা জানতে পেরে তারাও শিশুদের ইচ্ছা পূরণে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে অনুরোধ জানিয়েছে। আর বেশকিছু বাবা মা আছেন যারা শিশু-সন্তানদের নিয়েই এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকেন- এই ভেবে, যাতে জীবনে শুরুতেই ছোট ছোট শিশুদের এই মহত্গুণ শেখানো যায় যে, উত্সবে ধ্বনী, গরিব বিভেদ নেই, উত্সব সকল মানুষে আর উত্সবের আনন্দ তাই সকলের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে হয়।

ফোনটানা বলেন, এ কাজের সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয় হচ্ছে, এখানে সব মহত্ হৃদয় আর শুদ্ধমনের মানুষের সঙ্গ লাভ করা যায় আর তা নিজের আস্থা আর সক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়, নিজেকেও সৎ ও দৃঢ়-মনের মানুষ বলে মনে হয়। মার্কিন তথ্য মাধ্যমের খবরে প্রকাশ, বর্তমানে ৬ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশই গরিব পরিবারের। আর এ ক্ষেত্রে একটি ছোট উপহার, একটি ছোট ইচ্ছা-পূরণ ছোট ছোট শিশু-হৃদয়ে গভীর ও তাত্পর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

ছোট ছোট শিশুমণিদের চিঠি তোমাকে হাসাতে পারে আবার তোমাকে কাঁদাতেও পারে। কেননা কিছু কিছু চিঠিতে এমন সব ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে, যা কখনোই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আবার তাকে তুমি শিশুমনের বাড়াবাড়িও বলতে পারবে না। তখন কিন্তু তোমার ভীষণ ভীষণ খারাপ লাগবে। যেমন, একজন স্বেচ্ছাসেবক চিঠি দেখার সময় হঠাত্ কাঁদতে শুরু করে দেয়। কেন? নিশ্চয়ই চিঠিতে এমন কিছু লেখা আছে তাই। হ্যাঁ বন্ধুরা, চিঠিতে এক ছোট্ট শিশু লিখেছে, প্রিয় সান্টাক্লস, এবারের বড়দিনে আমার একটি-ই মাত্র ইচ্ছা আছে। প্লিজ, আমার জন্য তুমি একটি বার স্বর্গে যাও আর আমার মাকে আলিঙ্গন করো এবং তাঁকে আমার হয়ে একটি চুমু দাও।

এটা অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী একটা চিঠি, নিস্পাপ-কঠিন এক কষ্ট জন্মদেয় মনের ভিতর। কিন্তু আমারা বিশ্বাস করি, এত এত বেশি হৃদয়বান মানুষের যত্ন আর ভালবাসায় এ ছোট শিশুর জীবন নিশ্চয়ই আনন্দের, সুখের হবে। কিছু কিছু শিশু যারা নিজের জন্য উপহার না চেয়ে প্রতিবেশী বন্ধু, না হয় ছোট ছোট ভাই, বোনের জন্য উপহার চেয়ে চিঠি লেখে। অথবা বাবা মার জন্য কিছু চেয়ে চিঠি লেখে। আবার কিছু কিছু গরিব বাবা মা সান্টাক্লসকে নিয়ে এই সেবামূলক কার্যক্রম জানার পর নিজেরাই চিঠি লিখেন যাতে নিজের শিশুর জন্য কিছু উপহার পাওয়া যায়। কারণ তাদের উপহার কেনার সামর্থ্য নেই।

আপনি কি বিশ্বাস করেন যে এ বিশ্বে সান্টাক্লস আছে? যদি উত্তরটি হ্যাঁ হয় তাহলে হয়তো অনেকেই হাসবেন। কিন্তু একবার ভাবুনতো 'ক্রিস্টমাস কার্যক্রম' বা 'ক্রিস্টমাস ফেইরী' নামের এই সব কর্মকাণ্ড কি আমাদেরকে বিস্মিত করছেনা? আমাদের কি মনে হচ্ছে না যে, এ বিশ্বে সত্যিই বিস্ময়কর বলে কিছু। শিশুদের প্রতি ভালোবাসার এই যে মহাযজ্ঞ তা কি বিস্ময়কর ঘটনা নয়? তাহলে নিশ্বয়ই বলতে পারি এই বিশ্বে সান্টাক্লস আছে, থাকবে চিরদিন আমাদেরই মাঝে এবং আমাদেরই মত কিছু বিস্ময়কর বিশাল হৃদয়ের মানুষের মাঝে বাস করছে এই বিশ্বের সান্টাক্লস।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040