Web bengali.cri.cn   
বিশ্বে শিশু ও নারী অধিকার পরিস্থিতি
  2012-12-17 18:12:47  cri

১০ ডিসেম্বর ছিল জাতিসংঘ মানবাধিকার দিবস। চলতি বছর জাতিসংঘ বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের শিক্ষা অধিকারের ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা জানি, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশও এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয় এবং মেয়ে শিশুদের শিক্ষার অবস্থা উন্নত করার জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই-এর কাহিনী শুনেয়েছিলাম। জাতিসংঘ দিবসের অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মালালার গল্প নিয়ে তৈরি এক ভিডিও দেখিয়েছে সবাইকে। এ ১৫ বছর কিশোরী নিজ দেশের মেয়েদের শিক্ষার অধিকারের জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা বলেন:

"২০০৯ সালে ১১ বছর বয়সী মালালা বলেছিলেন: মাটিতে বসে লেখাপড়া করাও আমার কাছে গ্রহণযোগ্য। আমি শুধু লেখাপড়া করতে চাই, আমার অন্য কাউকে ভয় করে না। আজ মালালার সাহস আমাদেরকে উত্সাহ দিয়েছে। এটা শিক্ষা সংস্কারের শক্তি যোগাবে। এটা সামাজিত উন্নয়নের জন্য আস্থা ও শক্তি যোগাবে। নারী শিক্ষা হলো একটি মৌলিক অধিকার। এটা গোটা সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। মেয়েরা শিক্ষা গ্রহণ করলে নিজেকে বাঁচাতে পারে। বর্তমানে ইউনেস্কো ও পাকিস্তান সরকার যৌথভাবে মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য মালালা তহবিল গঠন করেছে।"

ওই দিনের অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং জাতিসংঘের শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত ছাড়াও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন একটি ভিডিও ভাষণ দেন। তিনি বলেন:

"শিক্ষা হলো মানবজাতির অধিকার। প্রতিটি ছেলে বা মেয়ে একটি আরো ভালো পৃথিবীর স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে। তাদের এ সুন্দর পৃথিবী নির্মাণের অধিকার আছে। সেটি হলো শিক্ষার শক্তি। নারীশিক্ষার জন্য মালালা যে সাহস আমাদেরকে দেখিয়েছেন, তাতে আমরা সবাই মুগ্ধ।"

ইইউ চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে। ইইউ'র কূটনীতি ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধি ক্যাথারিন অ্যাশটন বলেন:

"শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করা হলো ইইউ'র মানবাধিকার কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি হলাম আমার পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম নারী। তাই আমি জানি শিক্ষা কত গুরুত্বপূর্ণ। ইইউ'র কূটনীতি ও নিরাপত্তা নীতির উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমাকে জানিয়েছে, শিক্ষা কিভাবে বিশ্বকে আরো স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ করেছে। শিক্ষাকে ইইউ'র কূটনীতির বিষয়ে অন্তর্ভূক্ত করা এবং নোবেল শান্তি পুরস্কারের অর্থ দিয়ে আরো বেশি শিশুকে সাহায্য করার এটাই হলো কারণ।"

আলোচনা ছাড়াও অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তারা নারী শিক্ষার ওপর আরো বেশি সমর্থন দেওয়ার জন্য বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানায়। জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বে আরো ৬ কোটি ১০ লাখ শিশু স্কুলে যেতে পারে না, যাদের মধ্যে অধিকাংশই মেয়ে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন এ ক্ষেত্রে আরো বেশি চেষ্টা চালাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সরকারও এ সমস্যার গুরুত্ব উপলব্ধি করছে। এটা খুব ভালো ব্যাপার এবং ইতোমধ্যেই অনেক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে এ ব্যাপারে। যারা এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে, তাদের মধ্যে তালিবানও রয়েছে।

সম্প্রতি ভারতের পিটিআই বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে যে তালেবান নেতারা একসময় নারীশিক্ষার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন, তাঁরাই পরবর্তীকালে তাঁদের কন্যাসন্তানদের স্কুলে পাঠিয়েছেন। তালেবানের এই স্ববিরোধী আচরণের দিকটি ফাঁস করেছেন জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা।

লুইস জর্জ আর্সেনল্ট নামের ওই কর্মকর্তা সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বর্তমানে ভারতে ইউনিসেফের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। এর আগে ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করেন তিনি।

আর্সেনল্ট বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে ক্ষমতায় থাকাকালে নারীশিক্ষার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন তালেবান শাসকেরা। তাঁদের ভয় ছিল, রাস্তায় নারীরা আন্দোলন করলে তা তালেবান যোদ্ধাদের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে—ভেস্তে যাবে তাঁদের ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা।

আর্সেনল্ট বলেন, তালেবানের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কিছু এনজিও, শিক্ষক ও কমিউনিটি নেতা দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুদের শিক্ষা দিতেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040