Web bengali.cri.cn   
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা পাওয়া
  2012-12-10 16:28:56  cri

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৭তম অধিবেশনে ভোটের মধ্য দিয়ে ৩০ নভেম্বর ফিলিস্তিন জাতিসংঘের অ-সদস্য পযর্বেক্ষক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১৩৮টি এবং বিপক্ষে ৯টি। একচল্লিশটি রাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত থাকে।

চীন, তুরস্ক, মিসর, ব্রাজিল, আলজেরিয়া ও আর্জেন্টিনাসহ প্রায় ৭০টি দেশ এই খসড়া প্রস্তাব দাখিল করে। ওই দিন মোট ১৮০টি সদস্য দেশ ভোট দেয়। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্য ছিল ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া এবং বিপক্ষে ভোট দানকারীদের মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও কানাডা। যেসব দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল তাদের মধ্যে ছিল জার্মানি ও ব্রিটেন ।

ফিলিস্তিন জাতিসংঘের অ-সদস্য পযর্বেক্ষক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার খবর ওইদিন সেখানকার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। ওই দিন ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জায়গায় এই সাফল্য উদযাপনের জন্য জনসমাবেশেরও আয়োজন করা হয়। উদাযাপনী অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনি জনসাধারণ উল্লাস করে। জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহরের বিদ্যালয়গুলোতে ছুটিও ঘোষণা করা হয়। ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দেশের মর্যাদা পাওয়ার পর ফিলিস্তিনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী রিয়াদ মালিকি বলেন, জাতিসংঘে এ প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে স্বাক্ষরিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে ইসরায়েলের ওপর তাগিদ সৃষ্টি হবে। ফিলিস্তিন মনে করে, দু'দেশের শান্তি আলোচনায় এ প্রস্তাব খুব ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একাডেমির উপপ্রধান লি শাও সিয়ান মনে করেন, এ প্রস্তাবের ইতিবাচক তাত্পর্য রয়েছে। তিনি বলেন:

"প্রথমত, আনুষ্ঠানিকভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পথে ফিলিস্তিন সমস্যার সম্মুখীন। এমন পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দেশ হওয়ায় ফিলিস্তিনের পক্ষে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করা আরো সহজ হবে। দ্বিতীয়ত, এটা শক্তিশালীভাবে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি আলোচনার গতি ত্বরান্বিত করবে।"

ক: তবে সেদিনের ভোটাভুটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বিপক্ষে ভোট দেয়। গবেষক লি শাও সিয়ান বলেন:

"ইসরায়েল ২০০০ সাল থেকে একতরফা নীতির পথ বেছে নিয়েছে। এ কারণে দু'দেশের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় রয়েছে। ইসরায়েল যদিও ফিলিস্তিনের পর্যবেক্ষক দেশ হওয়ার বিরোধিতা করে, তবে আমার মনে হয় তা যুক্তিহীন।"

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা পাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। তবে এর ফলে অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর ওপর তত বেশি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না। এই ঐতিহাসিক অর্জনে দেশটির জনগণের জীবনযাত্রায় সামান্যই পরিবর্তন হবে। কারণ, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিকভাবে দেশটি এখনো বিভক্ত রয়ে গেছে।

কেন এ কথা বলছেন গবেষকরা? কারণ, পশ্চিম তীর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু গাজা উপত্যকা শাসন করছে হামাস। অন্যদিকে নিজ নিজ স্থল ও আকাশসীমায় তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। এ ছাড়া ফিলিস্তিনে কোনো ঐক্যবদ্ধ নিরাপত্তা বাহিনী বা পুলিশ নেই। অর্থনৈতিক অবস্থা এখনো নাজুক রয়ে গেছে; বেকারত্ব গ্রাস করছে যুব সমাজকে; দারিদ্র্যের বিস্তার সবখানে। এছাড়া গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ অব্যাহত রয়েছে, শান্তি-প্রক্রিয়ায় এখনো অচলাবস্থা কাটেনি এবং নতুন উদ্যোগের সম্ভাবনা আপাতত নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ফিলিস্তিন এখন নতুন এক সন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছে।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের অবস্থান 'পর্যবেক্ষক' থেকে 'পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রে' উন্নীত হওয়ায় কেবল একটি শব্দই বাড়েনি, দেশটির কূটনৈতিক ও প্রতীকী গুরুত্ব বেড়েছে অনেক। জাতিসংঘে নতুন অবস্থান অর্জনকে ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি এবং আন্তর্জাতিক জনমতের প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করছে দেশটির লোকজন। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বলেছেন, তাঁর দেশকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার সময় এসেছে। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে অবস্থান সম্পর্কে বিশ্বকে এখন স্পষ্ট মতামত জানাতে হবে।

ফিলিস্তিনকে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষমতা কেবল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেরই রয়েছে। ফিলিস্তিনিরা নিজেদের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দেশটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে গত বছর মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে বাতিল হয়ে যায়। এছাড়া জাতিসংঘে ভোট দেওয়ার অধিকার এখনো পায়নি ফিলিস্তিন। তবে দেশটি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সদস্য হওয়ার মর্যাদা পেয়েছে এখন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040