Web bengali.cri.cn   
কে হচ্ছেন পরবর্তী স্টিভ জবস
  2012-10-29 15:09:38  cri
২০১১ সালের অক্টোবর মাসে স্টিভ জবস মারা যাওয়ার পর থেকে এ প্রশ্নটি নিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বে অনেক আলোচনা হচ্ছে। কারও উত্তর জেফ বেজোস, কারও বা মার্ক জাকারবার্গ আবার কেউ প্রশ্নটির খুব সহজ ভেবে হেঁটেছেন বিশ্লেষণের পথে। আবার অনেকের মতে, প্রযুক্তি বিশ্বে এখনো স্টিভ জবসের মতো মেধাবী, ভবিষ্যত্দ্রষ্টা, ব্যবসায়ী ও রহস্যময় ব্যক্তিত্বের দেখা মেলেনি।

১৯৭৬ সালে নিজেদের বাড়ির গ্যারেজে বন্ধু স্টিভ ওজনিয়াককে নিয়ে 'অ্যাপল' প্রতিষ্ঠা করেন স্টিভ জবস। এরপর মাত্র এক দশক না পেরোতেই অ্যাপলকে দাঁড় করিয়ে ফেলেন প্রযুক্তিপণ্যের নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে। ১৯৮৫ সালে স্টিভ অ্যাপলে নিয়ে এসেছিলেন পেশাদার একজন প্রধান নির্বাহীকে। কিন্তু বোর্ডরুমের রাজনীতির শিকার হয়ে নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান থেকে সেই প্রধান নির্বাহীর কাছেই চাকরিচ্যুত হন তিনি। হয়তো এই অভিজ্ঞতা অনেক অ্যাপল ভক্তরা নিশ্চয়ই জানেন। এরপর মাত্র এক দশকের মাথায় বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি অ্যাপল লোকসান দিতে দিতে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়। ১৯৯৭ সালে আবার তাঁকে অ্যাপলে ফিরিয়ে আনা হয় এবং এরপর স্টিভ শূন্য থেকে আবার অ্যাপল গড়ে তুলতে শুরু করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০১১—এই ১৪ বছরে স্টিভ জবস অ্যাপলকে শূন্য থেকে গড়ে তোলেন বিশ্বের ১ নম্বর প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান হিসেবে। প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা হিসেবে স্টিভ অ্যাপলের দুটি প্রধান ধারা ঠিক করে নেন। একটি হলো পুরোনো কর্মক্ষেত্র অর্থাত্ কম্পিউটার, আর দ্বিতীয়টি হলো ইলেকট্রনিক ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা। ২০০১ সালে আইপডের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় আসে অ্যাপল। এরপর এতে যোগ হয় আইটিউনসভিত্তিক গানের ব্যবসা এবং এরপর যোগ হয় অ্যাপল টিভি ও আইফোন।

'ইনসাইড স্টিভ'স ব্রেইন'' বইয়ের লেখক লিন্ডার কেনি জানান, স্টিভ জবসের ক্যারিয়া জীবন অদ্ভুত ধরনের। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁকে এতটা মেধাবী বলে স্মরণ করা হয়নি। তাঁর মতে, স্টিভ জবস অ্যাপলে ফিরে আইপড ও আইফোন বাজারে আনার আগ পর্যন্ত বেশি স্বীকৃতি পাননি। কিন্তু এ দুটি পণ্য সৃষ্ট হওয়ার পরই আধুনিক যুগের টমাস আলভা এডিসন হিসেবে প্রশংসিত হতে শুরু করেন তিনি।

স্টিভ জবসের মারা যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো। স্টিভ জবসের স্থান কেউ নিতে পারবে কি না, তা ভবিষ্যতের একদিন সময়ই আমাদের জানাবে। তবে প্রযুক্তি বিশ্বে কেউ হবে দ্বিতীয় স্টিভ জবস, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার কমতি নেই। যাঁরা হয়ে উঠতে পারেন পরবর্তী স্টিভ জবস, তাঁদের নিয়ে সিএনএন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এর মধ্য প্রথম রয়েছেন অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। স্টিভ জবস যেমন অ্যাপল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেছেন, তেমনি অ্যামাজনের ক্ষেত্রেও একই ভূমিকায় রয়েছেন জেফ বেজোস। তাঁকে স্টিভ জবসের মত ভবিষ্যত্দ্রষ্টা মনে করা হয়। প্রযুক্তিবিষয়ক ব্লগ কাল্ট অব ম্যাকের সম্পাদক কেনি বলেন, 'জেফকে আমি চিনি। তাঁর অসাধারণ হাসি আর অসাধারণ বুদ্ধি একদিন স্টিভ জবসের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে বেজোসকে। কিন্তু তাঁর লক্ষ্যে এগোনোর দিক থেকে তিনি যান্ত্রিক। আর স্টিভ জবস হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বেজোসের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিপণ্য তৈরির ক্ষেত্রে মূল ঘরানার নয়। অ্যামাজন হচ্ছে অনলাইনে পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে কতটা উদ্ভাবনী ক্ষমতার পরিচয় দেখাতে পারবে, তার ওপর নির্ভর করছে জেফ বেজোসের স্টিভ জবস হয়ে ওঠা।'

দৌঁড়ে এরপর রয়েছেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ।

জাকারবার্গকে আপনারা সবাই জানেন। আমাদের আগের একটা অনুষ্ঠানেও তাঁকে নিয়ে কিছু আলাপ করা হয়েছিল। জাকারবার্গ মানুষদের জন্য ব্যক্তিগত তথ্য বিনিময়ের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। তবে তিনি নিজেই নিভৃতে থাকতে পছন্দ করেন এবং নিজের ব্যক্তিগত জীবন মানুষের সামনে তুলে ধরতে পছন্দ করেন না। যদিও তিনি বিলিয়নিয়ার হয়েছেন, তবে তিনি অনেকদিন ভাড়া বাড়িতে থেকেছেন এবং সবসময় জিন্স ও টি-শার্ট পরেন।

বাড়ির একটি গ্যারেজে স্টিভ জবস ও স্টিভ ওজনিয়াক মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অ্যাপল আর জাকারবার্গ ২০০৪ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ডরমিটরিতে তৈরি করেন ফেসবুক। প্রতিষ্ঠালগ্নের দিক থেকে মিল রয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠানের। সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ১০০ কোটি মানুষকে একসঙ্গে বেঁধে ফেলার কৃতিত্ব জাকারবার্গের। এদিক থেকে জাকারবার্গই সম্ভবত স্টিভ জবসের সমতুল্য হতে পারেন।

এ ছাড়াও স্টিভ জবসের সঙ্গে মার্ক জাকারবার্গের মিল রয়েছে পোশাক পরার ধরনের ক্ষেত্রেও। জাকারবার্গ এর আগে তথ্যমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে তাঁর একই স্টাইলের এবং এই রংয়ের টি-শার্ট আছে। জবসও এ রকম কাপড় পরতে পছন্দ করতেন। দৃষ্টিভঙ্গিতে স্টিভ জবসের সঙ্গে মার্ক জাকারবার্গের মিলও রয়েছে। তাই পরবর্তী স্টিভ জবস হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে তাঁর। তবে স্টিভ জবস হয়ে ওঠার পক্ষে জাকারবার্গের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে তিনি স্টিভ জবসের মতো জাদুকরি কোনো পণ্য মানুষের কাছে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পৌঁছে দিতে পারবেন না।

প্রতিযোগিতায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্যক্তি হলেন অ্যাপলের বর্তমান প্রধান নির্বাহী টিম কুক। ভবিষ্যত্ স্টিভ জবস হয়ে ওঠার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তাঁর। অ্যাপলের প্রতিটি নতুন পণ্যের উদ্ভাবন আর অনুমোদন তাঁরই দেওয়া। অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে সবচেয়ে বড় মঞ্চ আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেও তিনি।

ইতিমধ্যে আইফোন৫ বাজারে এনে টিম কুক সবার নজর কেড়েছেন। শিগগিরই আইপ্যাডের ছোট একটি সংস্করণ বাজারে আনতে পারে অ্যাপল। আসলে আইফোন৫ বিক্রি শুরু হওয়ার পর অনেক সমালোচনা হয়। স্টিভ জবসের আইফোনের তুলনায় নতুন আইফোনের কিছু ছোট সমস্যা আছে। ততটা নিখুঁত নয়। যদিও এসব সমস্যা রয়েছে আইফোন৫-এ, তবুও কুকের সার্মথ্যের কথা কেউ অস্বীকার করতে পারে না।

তবে এ ক্ষেত্রে তাঁর সীমাবদ্ধতা হচ্ছে তিনি উদ্ভাবনী ক্ষেত্রের চেয়ে ব্যবসায়িক দিক থেকে বেশি দক্ষ। তিনি হয়তো অ্যাপলের ভবিষ্যত্ তরী ঠিক পথে বাইতে পারবেন, তবে স্টিভ জবসের প্রত্যাশার ভার কতটা সইতে পারবেন, তাঁর ওপরই নির্ভর করবে স্টিভ জবস হয়ে ওঠার বিষয়টি।

চতুর্থ প্রার্থী এবং চূড়ান্ত প্রার্থী হলেন ইয়াহুর প্রধান নির্বাহীমারিসা মেয়ার। তিনিও এই প্রার্থী তালিকার মধ্যে একমাত্র নারী। তিনি গুগল ছেড়ে সম্প্রতি ইয়াহুর প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নিয়েছেন। ২০০৮ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে বিশ্বের প্রভাবশালী সাময়িকী 'ফরচুন'-এ প্রথমবারের মতো ৫০ জন প্রভাবশালী নারীর মধ্যে জায়গা করে নেন মারিসা মেয়ার। জানান দেন প্রযুক্তি দুনিয়ায় নিজের অবস্থান। এরপর ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালেও এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন।

১৯৭৫ সালের ৩০ মে জন্ম নেওয়া মারিসা সিম্বলিক সিস্টেমের ওপর স্নাতক ও কম্পিউটারবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৯৯ সালে যোগ দেন তথ্য খোঁজার বিশ্বসেরা ওয়েবসাইট গুগলে।

২০০৯ সালে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারী জ্যাকারি ভোগকে বিয়ে করেন। সম্প্রতি মা হয়েছেন তিনি। নিত্যনতুন উদ্ভাবন আর ব্যবসায়িক দিক থেকে অত্যন্ত সফল মেয়ার কাজ করতে পছন্দ করেন। নতুন চমক দিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বে তিনি হয়তো পরবর্তী স্টিভ জবস হয়ে উঠতে পারেন। তবে মেয়ারের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ইয়াহুকে বর্তমানে ফেসবুক ও গুগলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহীর পদে এক বছরে চারজন বদল হয়েছেন। এমন একটি পরিস্থিতিতে ইয়াহু নিয়ে মেয়ার কতটা এগোতে পারবেন, তাঁর ওপর নির্ভর করছে মেয়ারের স্টিভ জবস হয়ে ওঠা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040