Web bengali.cri.cn   
চীনা সংস্কৃতি: চীনা চা
  2012-07-31 14:01:19  cri

    সুপ্রিয় শ্রোতা, চীনের সংস্কৃতির মধ্যে চা-সংস্কৃতি সুদীর্ঘ কালের। প্রায় সব চীনা মানুষ চা খায়। আর শুনলাম বাংলা ভাষায় 'চা' চীনা ভাষা থেকে এসেছে। চীনা ভাষায় চাকে আমরা 'ছা' বলি। আজকের 'স্বর্ণার সাথে শিখুন' আসরে আপনাদেরকে চীনা চা সম্পর্কে জানাবো। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি ইয়াং ওয়েই মিং, স্বর্ণা। ওয়া শি স্বর্ণা। নি মেন হাও!

    একটা জনপ্রিয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৩৭ সালে চীনের রাজা শেন নং চা খাওয়া আবিষ্কার করেন। তখন তিনি একটি চা গাছের পাশে বসেছিলেন। হঠাত্ এক ঝটকা বাতাসে কয়েকটি চায়ের পাতা তার গরম পানির মধ্যে পড়ে যায়। এভাবে তিনি আবিষ্কার করেন যে চায়ের পাতা গরম পানির মধ্যে দিয়ে খেতে বেশ মজা। তখন থেকে চীনা মানুষের চা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে।

    চীনের চায়ের রং অনুযায়ী ছয়টা প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয়। এগুলো হলো সাদা চা, হলুদ চা, সবুজ চা, লাল চা, নীল চা এবং কালো চা। এর বাইরে যদি আরেক প্রকার যোগ দিতে চান তাহলে সেটা হলো ফুলের চা। এ কয়েকটি প্রধান প্রকারের অধীনে প্রায় ১০০০ রকমের চা আছে।

    চায়ের স্বাদ, রং ও প্রকারভেদে শরীরের জন্য বিভিন্ন কাজ করে। চীনা মানুষ চা খায় সুস্থ থাকার জন্য অথবা শুধু স্বাদের জন্য।

    আমার চাচার একটা চায়ের দোকান আছে। প্রত্যেক বার আমি সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার সময় তিনি আমাকে তার সংরক্ষিত বিভিন্ন চা খাওয়াতেন। তার খাওয়ানো নানা প্রকার চায়ের মধ্যে দুই ধরনের চা আমার সবচেয়ে পছন্দের। একটার নাম 'চিন চিয়ুন মেন'। এটি হলো চীনের উ ই পাহাড়ি অঞ্চলের এক ধরনের পাথরের ওপরে বড় হওয়া চা গাছের পাতা দিয়ে তৈরি চা। এটা হলো লাল চায়ের মধ্যে একটা। এ চা দেখতে সোনালি এবং কালো রংয়ের, খাওয়ার সময় মুখে এক ধরনের ফুলের সুগন্ধ পাওয়া যায়। তাই আমি এ চা খুব পছন্দ করি।

    আমার পছন্দের আরেক প্রকার চা হলো ফুআর চা। ফুআর হলো চীনের ইউনান অঞ্চলের বৈশিষ্টপূর্ণ চা। ফুআর চা পুরোপুরি গাঁজানো চায়ের মধ্যে একটা। এবং এটা আবার এক ধরনের কালো চা। এ চা বানানোর সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হলো একটা টি-পট বা চা-পাত্রে ফুটিয়ে খাওয়া। যারা সত্যি চা খেতে খুব পছন্দ করে তাদের চা-পাত্র সংরক্ষণের শখও আছে। চীনের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি দিয়ে বানানো মাটির বা চীনামাটির চা-পাত্র খুব সুন্দর। বিভিন্ন চা-পাত্র দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চা বানানো হয়। ফুআর চা বানানোর সময় চাচা একটা ফুআর চায়ের ইদ বের করে তার এক টুকরা চায়ের পাত্রে দেন। তারপর চা-পাত্রটি চুলার ওপরে রেখে দিয়ে চা ফুটাতে থাকেন। আস্তে আস্তে চায়ের সুগন্ধ বের হয়ে আসে। তখন কাপে ঢেলে দিলে দেখা যায়, চায়ের রং একটু কালচে-লাল হয়ে গেছে। এবং নতুন চাল দিয়ে ভাত রান্নার সময় যে সুগন্ধ পাওয়া যায়, এ চা খাওয়ার সময় ঠিক সে রকম গন্ধ পাওয়া যায়।

    চা খাওয়ার সময় তিনি আবার কয়েকটি সুরের গান বাজাতেন। আমরা এভাবেই চা খেতে খেতে গান শুনতাম এবং জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতাম।

    চাচা বলতেন, চায়ের অনেক গুণ আছে। তা ছাড়া এতে জীবনের অনেক দর্শন আছে। যেমন চা খাওয়ার পর মুখে চায়ের সুগন্ধ বজায় থাকে। মানুষের জীবন খুব ছোট, এ জীবনে অন্য মানুষের জন্য কি করতে পারি কিংবা মারা যাওয়ার পর আমার কথা স্মরণ করে অন্য মানুষের ভাল কিছু মনে পড়বে কি?

    এখনকার জীবনে অনেক ধরনের সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি আবার অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষকে প্রায়ই চাপের মধ্যে থাকতে হয়। চা বানানোর সময় মন শান্ত রাখতে হয়। মন শান্ত হলে সূর্য্যের মত উষ্ণতা মনের মধ্যে উঠে আসে। শান্ত ও সুখী মন নিয়ে চা বানালে চায়ের মধ্যেও ইতিবাচক শক্তি থাকে। এ রকম চা খেলে মানুষ কেবল স্বাদই পায় না, এর ইতিবাচক শক্তিও শরীরের মধ্যে বজায় থাকে।

    সুপ্রিয় শ্রোতা, এটা হলো আমার চা খাওয়ার অভিজ্ঞতা এবং চীনের চা সংস্কৃতির আকর্ষণ। আরো জানতে চাইলে আপনাকে নিজেই চা বানিয়ে খেতে হবে। আচ্ছা, আজকের অনুষ্ঠান এ পর্যন্ত। চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে প্রশ্নগুলো ইমেলে আমার কাছে পাঠাতে পারেন। আমাদের ইমেল ঠিকানা হচ্ছে: ben@cri.com.cn। আগামী আসরে আর কী আয়োজন থাকবে? তা জানতে পারবেন আগামী সপ্তাহের এ অনুষ্ঠানে থাকলে। সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। জাই চিয়েন। (ইয়াং ওয়েই মিং/এসআর)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040