Web bengali.cri.cn   
ইনটাচেবলস
  2012-08-16 09:44:49  cri

আজকের আলো-ছায়া অনুষ্ঠানে আমি যে চলচ্চিত্রটির সঙ্গে আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই সেটির নাম হলো 'ইনটাচেবলস' 'intouchables'। ফ্রান্সের এই চলচ্চিত্রটি একটি বাস্তব ঘটনা অনুযায়ী নির্মিত হয়েছে।

প্রিয় শ্রোতা, আপনারা চলচ্চিত্রের যে অংশ শুনছেন তা হলো শুরুতে চলচ্চিত্রে প্রচারিত একটি সঙ্গীত। সঙ্গীতের নাম হলো 'fly'।

একটি প্যারাশুট দুর্ঘটনায় ফিলিপ নামে একজন ধনী শ্বেতকায় ব্যক্তি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন । তিনি তাঁর যত্নের জন্য একজন পূর্ণকালীন রক্ষক নিয়োগ করতে চান। বেতন খুব বেশি বলে অনেক লোক এই চাকরি পেতে চান। তাঁরা সবাই সুন্দর সুন্দর কথা বলতে পারেন। কিন্তু ফিলিপের মনকে মুগ্ধ করতে পারে না। ড্রিস নামে একজন কৃষ্ণাঙ্গকে দেখে তিনি একটি সিদ্ধান্ত নেন। ড্রিস সদ্য জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়েছেন এবং পরিবারের অনেক ঝামেলা তার কাঁধে । আসলে ড্রিসের এই চাকরি পাওয়ার কোন আগ্রহ ছিলো না। তিনি মাত্র একটি পদচ্যুতির চিঠি নিয়ে ত্রাণ তহবিলে সাহায্যের আবেদন করতে চান। এই চাকরি পাওয়ার চেয়ে ফিলিপের নারী সহকারীর প্রতি ড্রিসের আগ্রহ স্পষ্টভাবেই আরো বেশি। কিন্তু ফিলিপ ড্রিসকে প্রথম দেখেই তাঁকে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবে ড্রিস তাঁর এক মাসব্যাপী প্রবেশিক সময়পর্ব শুরু করেন। ফিলিপের বিলাসপূর্ণ বাসভবনে থাকা তাঁর কাছে খুব আদামদায়ক লাগে। তা সত্ত্বেও ড্রিস অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। ফিলিপের স্বাস্থ্যের জন্য ড্রিসের অনেক কাজ করতে হয়। এসব কাজ তিনি আগে কখনও করেননি। তাঁদের দু'জনের চিন্তাধারা এবং পারিবারিক মূল্যবোধ একদম ভিন্ন। তবে পারস্পরিক সমঝোতা অব্যাহতভাবে গভীরতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হন।

এই চলচ্চিত্রে জাতি এবং ধনী ও দরিদ্র্য অতিক্রম করা বন্ধুত্ব ও সমঝোতা সমাজে তুমুল সাড়া জাগায়। ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সার্কোজি নিজ উদ্যোগে এ চলচ্চিত্রের পরিচালকসহ কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন।

চলচ্চিত্রের শুরুতে ফিলিপ এবং ড্রিস সঙ্গীত নিয়ে আলোচনা করেন। ড্রিস জ্যাজ সঙ্গীত দল কুল অ্যান্ড দি গাং এবং আর্থ, উইন্ড অ্যান্ড ফায়ার পছন্দ করেন। অন্যদিকে ফ্রেডারিক ফ্র্যান্সিস্জেক চোপিন, ফ্র্যান্জ সেরাফিকিউস পিটার শুবার্ট এবং হেকটোর লুইস বার্লিওজ হলেন ফিলিপের প্রিয় সঙ্গীতজ্ঞগণ। ড্রিস উপহাস করেন যে, ফিলিপের কোন স্বাদ নেই। ড্রিস বলেন বার্লিওজ একটি রাস্তার নাম এই কথাটা শুনে ফিলিপও অবাক হয়ে গেছেন।

প্রিয় শ্রোতা, আপনারা চলচ্চিত্রের যে অংশ শুনছেন এতে তাঁদের দুজনের কথোপকথন দেখানো হয়।

ফিলিপের এক ভালো বন্ধু তাঁকে বলেন, অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল এমন যুবককে একদম বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু ফিলিপ নিজের সিদ্ধান্তে জেদ ধরে ড্রিসকে নিয়োগ করেন।

চলচ্চিত্রে অনেক হাসির ঘটনা ঘটে। ড্রিস নিরক্ষর বলে ফিলিপের পায়ে ক্রিম এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করতে গিয়ে ভুল করেন। ড্রিস অসাবধানতাবশত গরম চা ফিলিপের পায়ে ফেলে দেন। ফিলিপের শরীরে গলার নিচের অংশের কোন উপলব্ধির ক্ষমতা নেই বলে তাঁর কোন প্রতিক্রিয়া হয় না। এই দৃশ্য দেখে ড্রিস আরো বেশি গরম চা ফিলিপের পায়ে ফেলে দিয়ে পরীক্ষা করেন।

প্রিয় শ্রোতা, আপনারা চলচ্চিত্রের যে অংশ শুনছেন এতে এই মজার দৃশ্য দেখানো হয়।

কোন কোন রাতে যখন ফিলিপ ঔষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে নিশ্বাস নিতে পারেন না ড্রিস তাঁর গায়ে কম্বল রেখে তাঁকে স্নেহশীলভাবে হুইলচেয়ার চড়িয়ে তাঁকে নিয়ে প্যারিসের রাস্তায় হাঁটেন।

ফিলিপের জন্মদিন আসে। ছোট আকারের একটি সিম্ফোনি দল ফিলিপের জন্মদিন উদযাপনের জন্য আয়োজিত একটি পার্টিতে সিম্ফোনি পরিবেশন করে। পরিবেশনার শেষে ড্রিস বলেন, এখন আমার প্রিয় সঙ্গীত শুনুন। তারপর গোটা পার্টিতে অংশগ্রহণকারীরা ছন্দময় সঙ্গীতের সঙ্গে নাচ দেখান। ফিলিপ স্মিত হাস্য নিয়ে সবার নাচ দেখেন।

প্রিয় শ্রোতা, আপনার এখন চলচ্চিত্রের যে অংশ শুনছেন এতে এই দৃশ্য দেখানো হয়। চলচ্চিত্রের শুরুতে সঙ্গীতের স্বাদ প্রসঙ্গে ফিলিপ এবং ড্রিসের ভিন্নমত এই সময় দূর হয়ে যায়।

চীনের মতো ফ্রান্সও বহুজাতিক ও বহু সংস্কৃতিসম্পন্ন একটি দেশ। এমন একটি সমাজে জাতিগত ও সমাজগত দ্বন্দ্ব থাকা খুব সাধারণ ব্যাপার। ফ্রান্সে এই চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর ব্যাপক সাড়া জাগে এবং সেটি দর্শকদের ব্যাপক সমাদর পায়। এর পিছনে বিভিন্ন মাত্রিকতাসম্পন্ন ফ্রান্সের সামাজিক মতভেদ দূর করার আকাঙ্খা দেখানো হয়।

আগেই বলেছি চলচ্চিত্রটি বাস্তব ঘটনা থেকে নির্মাণ করা হয়েছে। সহজ দৃশ্যের মধ্যে বৈচিত্র্যময় বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। বিকলাঙ্গ ফিলিপ এক রক্ষকের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে পারেন। সেই রক্ষক হচ্ছেন ড্রিস। ফিলিপ এবং ড্রিসের মধ্যে চেহারা বা আকৃতিগত বিন্দুমাত্র মিল নেই। কিন্তু দুজনের মধ্যে সমধর্মিতা স্থাপিত হয়। তাঁদের চরিত্র এবং জীবন কাটানোর পদ্ধতিতে দ্বন্দ্ব আছে এবং মিলও আছে। পরস্পরের চেহারা অসামঞ্জস্যহীন হলেও দু'জনের মধ্যে গোটা মুভিতে মর্মস্পর্শী ভাবানুভূতি সৃষ্টি করা হয়। ফিলিপ ধনী সমাজের একজন প্রতিনিধি হলেও, তাঁর রক্তে দুঃসাহসিক অভিযাত্রা করার নেশা এবং নিয়ম ভেঙ্গে দেওয়ার সাহস আছে। তিনি দুঃসাহসিক অভিযান এবং উত্তেজনাময় ক্রিড়া পছন্দ করেন, তাই তিনি একটি প্যারাশুটে করে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তারপর একজন প্রতিবন্ধীতে পরিণত হয়েছেন। নিয়ম ভেঙ্গে দেওয়ার সাহস আছে বলেই তিনি ড্রিসকে নিয়োগ করেন। ড্রিস সমাজের একজন অবহেলিত মানুষ এবং তাঁর জীবন কাটানোর পদ্ধতি হলো নিয়ম ভেঙ্গে দেওয়া। তা সত্ত্বেও, তিনি নিয়ম মেনে চলেন। যারা ফিলিপের দরজার সামনে পাকিং করেন তিনি এক ধরনের অসাধারণ পদ্ধতিতে তাদেরকে বহিষ্কার করেন। তাঁর অসাধারণ পদ্ধতিতে ফিলিপের গৃহরক্ষক এবং উদ্যানরক্ষকের ভালোবাসা সহজতর হয়, ফিলিপের মেয়ে এবং ছেলেবন্ধুর আবার মিলিত হওয়াকে সহজতর করা হয়, এমনকি নারী পত্রমিতার সঙ্গে ফিলিপের এপয়েন্টমেন্ট সহজতর করা হয়। অর্থাত্ সবখানে ড্রিস নিয়ম ভেঙ্গে দিচ্ছেন। তিনি নিয়ম ভেঙ্গে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম মেনে চলেন। তিনি সবসময় নিয়ম ভেঙ্গে দেয়ার মাধ্যমে ভালো কাজ করেন। এমন ধরনের নিয়ম ভেঙ্গে দেওয়া ফিলিপের জন্য খুব প্রয়োজন। ফিলিপ উন্নত সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী। তিনি নিয়ম প্রণয়নকারী এবং কঠোরভাবে নিয়ম মেনে চলেন। কিন্তু জীবন ও ভাবানুভূতির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিয়ম ভেঙ্গে দেওয়ার মাধ্যমেই অগ্রগতি অর্জন করা যায়। তাই ড্রিস ফিলিপের নিয়ম ভেঙ্গে দেয়ার অনুঘটকে পরিণত হন। ড্রিসের কাজ করার পদ্ধতি দেখতে অসাধারণ, কিন্তু তাঁর করা সব কাজ মানব প্রকৃতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। ফিলিপের জন্য অন্যান্যদের সহানুভূতি বা করুণার দরকার নেই। মানুষের সঙ্গে মানুষের সমান আচরণ করাটাই তাঁর জন্য খুব দরকার। এটি তাঁর ড্রিসকে নিয়োগ করার কারণ। ড্রিস এই কথা খুব স্পষ্ট করেই জানেন। তিনি কখনও ঘোড়ার মতো বিকলাঙ্গ ফিলিপকে গাড়িতে রাখতে পারেন না। এটিই ফিলিপের প্রতি তাঁর সম্মান প্রদর্শন। অন্য কেউ নিজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করলেও ড্রিস তা মেনে নেননি। যখন ফিলিপের মেয়ে ড্রিসের ঘরের দরজায় ঠকঠক না করেই তাঁর ঘরে অনুপ্রবেশ করে তিনি রাগ করে ফিলিপের কাছে তাঁর মেয়েকে ভালোভাবে শিখিয়ে দেয়ার কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের শেষে ড্রিস ফিলিপকে একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে যান। তারপর ড্রিস ফিলিপকে বলেন: আমি তোমার সঙ্গে একসাথে খাবো না। কিন্তু তুমি একা একা খাবে না। পরে তোমার একটি এপয়েন্টমেন্ট আছে। এবারে তুমি এড়াবে না। ড্রিসের সাহায্যে ফিলিপ এবং তাঁর পত্রমিতার প্রথম এপয়েন্টমেন্ট শুরু হয়।

ফ্রান্সের জনৈক সংবাদদাতা চলচ্চিত্রটি দেখার পর বলেন, ২০১২ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে চাইলে অবশ্যই ইনটাচেবলস এই চলচ্চিত্রটি উপভোগ করতে হবে। কারণ এই চলচ্চিত্রে গভীরভাবে ফরাসীদের মনের বিশ্ব এবং তাঁদের আকাঙ্খা তুলে ধরা হয়েছে।

আচ্ছা, প্রিয় শ্রোতা, আজকের আলো-ছায়া অনুষ্ঠান এখানেই শেষ হলো। আমাদের অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে আপনাদের কোনো মতামত থাকলে অবশ্যই আমাদের জানাবেন। আমার ইমেইল ঠিকানা:---আমাদের বিভাগের ই-মেইল ঠিকানা:--। দয়া করে উল্লেখিত দুটি ঠিকানায় আপনার ইমেইল পাঠাবেন। আপনাদের সুচিন্তিত মতামত আমাদের আগামী অনুষ্ঠান আরো সমৃদ্ধকরণের জন্য খুব মূল্যবান। আজকের অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। সবাই সুন্দর থাকুন, সুস্থ থাকুন। আগামী সপ্তাহের একই সময় আবার কথা হবে। চেইচিয়ান।

এখন শুনুন আমার সহকর্মী শান্তা মারিয়ার পরিবেশিত আলোছায়া অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব।

লিলি/শান্তা

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040