শঙ্খ তিব্বতের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত অন্যতম বাদ্যযন্ত্র।
বৌদ্ধ শাস্ত্রে বলা হয় ,শাক্যমুনি যে উদাত্ত কণ্ঠে বৌদ্ধধর্মের নীতি ব্যাখ্যা করেন তা শঙখধ্বনির মত অনুরণিত হতে থাকে ।তাই পরবর্তীকালে শঙখধ্বনিকে ধর্মের বাণী বলে গণ্য করা হয় ।
তিব্বতের বৌদ্ধদের বিশ্বাস , শঙখধ্বনি শুনে তারা পাপমুক্ত হয়ে নন্দনলোকে প্রবেশ করতে পারবে ।
কাপালা নামক বাটি অভিষেক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয় । এ বাটি মানুষের খুলি দিয়ে তৈরী করা হয়। সাধারণত: বৌদ্ধচার্যের অন্তিমবাণী অনুযায়ী তাঁর মৃত্যুর পর তার খুলি কেটে নিয়ে কাপালা বাটি তৈরী হয় ।
তিব্বতের যাদুঘরে সংরক্ষিত একটি কাপালা বাটির ওপর সূর্য ও চাঁদের ছবি এবং ছয় শব্দ বিশিষ্ট মন্ত্র অস্পষ্ট দেখা যায় । বাটিটির হাতা দেখতে অনেকটা বজ্র-দণ্ডের মত । বাটিটি এক ত্রিকোণা সোনালী থালির ওপরে রয়েছে । থালির প্রতিটি পিঠে একটি করে মানুষের মাথা আঁকা । এর গোলাকার ঢাকনিও সোনা দিয়ে তৈরী ।ঢাকনির উপরিভাগে পদ্মফুলের পাপড়ি ও লতা খোদাই করা হয় ।ঢাকনির প্রান্ত জুড়ে মণিরত্ন খচিত । কাপালা বাটির শৈল্পকি সৌন্দর্য ও নির্মান কলাকৌশল উভয়ই অপূর্ব ।
মন্ত্রপুত চাকা দেখতে একটি ছোট বালতির মত । তাই তার আরেকটি নাম হলো সূত্র-ভরা বালতি ।এর মধ্যভাগে যুক্ত রয়েছে একটি অক্ষদণ্ড ।ধর্মীয় অনুষ্ঠা মন্ত্রপুত চাকা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছয় শব্দ বিশিষ্ট মন্ত্র পড়ে বুদ্ধদেবের স্তুতি গাওয়া হয় ।দক্ষিণার্তে একবার মন্ত্রপুত চাকা ঘুরিয়ে দেয়ার মানে হলো একবার মন্ত্র পড়া ।
মন্দিরের ঘরের ছাঁচের নীচে বা কোণে স্থাপন করা হয় সারি সারি মন্ত্রপুত বালতি । তিব্বতের কোনো কোনো এলাকায় জলশক্তি ও বায়ু শক্তির সাহায্যে ঘুরানো মন্ত্রপুত বালতিও দেখা যায় হয় ।
তিব্বতের ধর্মীয় অনুষ্ঠান রহস্যময় ও নিগূঢ়তত্ত্ববাচক। তিব্বতের ইতিহাসে অসংখ্য সন্ন্যাসী ও হস্তশিল্পী পুণ্য লাভের আশায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যাবহৃত যে সব জিনিসপত্র তৈরী করেছিল তা স্বতন্ত্র শৈল্পিক নৈপুণ্যে অতুলনীয় ও সৌন্দর্যরসে পরিপূণ । তা যেমন বৌদ্ধধর্মাশ্রয়ী শিল্পের একটি সুগন্ধ ফুল তেমনই তিব্বতের লোকশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।
|