অতীতে তিব্বতের কৃষক ও পশুপালকদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো কিনা , তার বিচার করা হতো তাদের গরু ও ছাগলের সংখ্যা বেশি ছিল কিনা এবং তাদের বাড়িঘর ভালো ছিল কিনা । এখন যুগের পরিবর্তন ও উন্নয়নের সংগে সংগে আরেকটি নতুন মানদন্ড যোগ হয়েছে । তা হচ্ছে কৃষক ও পশু পালকদের বাড়িতে ব্যক্তিগত গাড়ি আছে কি না , তা বিচার করা ।
বর্তমানে তিব্বতের অনেক কৃষক ও পশুপালক নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়ি কিনেছেন । এখন উত্তর তিব্বত সমতলভূমি হোক আর দক্ষিণ তিব্বত পাহাড়ী এলাকাই হোক , তিব্বতের সবখানেই কৃষক ও পশুপালকদের ব্যক্তিগত গাড়িগুলোর দৌড়ানোর দৃশ্য একটি সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে ।
তিব্বতের লাংখাচি জেলার পাইতি মহকুমার কৃষক লোওসাংথুতোও গত কয়েক বছরের মধ্যে দুটি গাড়ি কিনেছেন । তিনি বলেন , তিনি প্রথমদিকে একটি ছোট আকারের মালবাহী গাড়ি কেনেন । তখন তার বাড়ির একটি দোকানের মালপত্র কেনার জন্যে তিনি এটি কিনে নেন । পরে বিশেষভাবে লাংখাচি জেলার নির্মাণস্থলের নির্মাণ-সামগ্রী পরিবহনের জন্যে তিনি আবারো তুংফোং মার্কার একটি ট্রাক কেনেন ।
গত কয়েক বছরে তিব্বতের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কৃষি ও পশুপালন উন্নয়ন এবং নির্মাণ ও পর্যটনসহ নানা ধরণের শিল্পে নিয়োজিত থাকার কারণে তিব্বতের কৃষক ও পশুপালকদের আয় বিপুল মাত্রায় বেড়েছে । ২০০৮ সালে তিব্বতের কৃষক ও পশুপালকদের মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ১৭৬ ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । এটি গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ১৩.৯ শতাংশ বেশি ।
আয় বৃদ্ধির সংগে সংগে তিব্বতের কৃষক ও পশুপালকদের ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার ইচ্ছাও বেড়ে গেছে । লোওসাংথুতোও বলেন , পরিবহন করে তিনি এ বছর আরেকটি মালবাহী গাড়ি কিনবেন । কারণ শুধু পরিবহন দিয়ে তিনি মাসে ৭ হাজার ইউয়ান উপার্জন করতে পারেন ।
অতীতে তিব্বতের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই দুরূহ । সুতরাং তিব্বতে গাড়ির জনপ্রিয়তা কম ছিল । ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা গেছে , ১৯০৭ সালে চিয়াং চিতে নিযুক্ত একজন বৃটিশ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি তিব্বতে প্রথম গাড়ি ব্যবহার করেন । সেসময় এ গাড়ির পেছনে সবসময় একটি চমরী গাই পিছু ধরতো , যাতে গাড়ি মাঝপথে নষ্ট হয়ে গেলে তাকে ব্যবহার করা যেতো ।
আজ তিব্বতের যোগযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে । বর্তমানে তিব্বতের সড়কের দৈর্ঘ্য ৪৮ হাজার ৬০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে । তিব্বতের ৮৯.৬ শতাংশ মহকুমায় সড়ক ব্যবস্থা চালু হয়েছে । এখন তিব্বতের সড়ক ব্যবস্থা পূর্বদিকে সিছুয়ান ও ইয়ুন নান প্রদেশ , উত্তর-পশ্চিম দিকে সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল , উত্তর দিকে ছিং হাই প্রদেশ এবং দক্ষিণ দিকে ভারত ও নেপালকে সংযুক্ত করেছে । তিব্বতের বিভিন্ন বিভাগ , জেলা ও মহকুমার মধ্যে সুবিধাজনক সড়ক ব্যবস্থা চালু হয়েছে ।
তিব্বতে অতীতের ধুলিভর্তি কাঁচা রাস্তা এখন পাকা রাস্তায় পরিণত হয়েছে । লোওসাংথুতোও বলেন , তার বাড়ির সামনের সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির সংগে সংগে তার আশেপাশের অনেক লোক গাড়ি কিনেছেন । গত বছর তার মহকুমার দশ বারোটি পরিবার ব্যক্তিগত গাড়ি কিনেছেন ।
তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ এক হিসাব থেকে জানা গেছেন , গত মে মাসে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে গাড়ি বিক্রির সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৪.২ শতাংশ বেড়েছে ।
তিব্বত মোটর গাড়ি শিল্প বাণিজ্য কোম্পানির ম্যানেজার ফুপু বলেন , এখন তার কোম্পানি মাসে দু' শ'রও বেশি গাড়ি বিক্রি করে থাকে । |