মণ্ডলের ছবি ও মন্ত্র-লেখা বা মন্ত্র খোদাই করা চাকা তিব্বতের মন্দিরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দুটো অপরিহার্য সামগ্রী ।
বস্তুত মণ্ডল একটি সংস্কৃত শব্দ ।তার অর্থ হলো মাটির বেদী।কথিত আছে , প্রাচীনকালে ভারতের মুনিরা অপদেবতার দৌরাত্ম ঠেকানোর জন্য গোলাকার বা চারকোণা মাটির বেদী তৈরী করেন।রহস্যময় তপস্যা করার সময় তাঁরা বেদীর উপরে হাঁটু গেড়ে বসতেন ।তার তপস্যা দেখার জন্য অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকালের দেব-দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হত । বেদীর উপরে দেব-দেবীর ছবিও আঁকা হতো ।
তিব্বতের মন্দিরের দেয়াল ও সিলিংয়ে আঁকা মণ্ডলের যে সুন্দর ছবি দৃষ্টিগোচর হয় তা চার ভাগে বিভক্ত ।
তাথানছেং নামক মণ্ডলের ছবি যে নীল, হলুদ, লাল, সাদা ও কালো রং দিয়ে আঁকা হয় তা ভূমি , অগ্নী, জল ,বায়ু ও গগনের প্রতীক । মণ্ডলের ছবিতে রয়েছে দেব-দেবী ।
সানওয়েইয়েতানছেং নামকে মণ্ডলের ছবিতে দেব-দেবীর বদলে শুধু দেব-দেবীর ব্যবহৃত জিনিষ দেখা যায় , যেমন ব্রজ-দণ্ড, তলোয়ার ,অসি ,মন্ত্র লেখা চাকা ইত্যাদি ।
ফাথানছেং বা জংজিথানছেং নামক মণ্ডলের ছবিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে বুদ্ধদেব ও অন্যান্য দেবতার উচ্চারিত সংস্কৃত ভাষার মন্ত্র ।
জিমোথানছেং নামক মণ্ডলের ছবিতে দেবতার প্রতিকৃতি অংকন ও মূর্তি নির্মানের কলাকৌলশল বর্ণিত হয়েছে ।
মন্ত্র লেখা চাকা শুরুতে ছিল ভারতের একটি প্রাচীন অস্ত্র। পরতর্বীকালে তা বৌদ্ধধর্মের অনুষ্ঠানেও ব্যবহার করা হয় । মন্ত্র লেখা চাকা বৌদ্ধধর্মের অমরতার প্রতীক । বেদীতে মন্ত্র লেখা চাকা স্থাপনের অর্থ হলো অক্ষয় বৌদ্ধত্বের জন্য প্রার্থনা করা
মন্ত্র লেখা চাকা দু'রকমের , অর্থাত্ আট পাখি বিশিষ্ট চাকা ও সহস্র পাখি বিশিষ্ট চাকা ।
মন্ত্র লেখা চাকা বৌদ্ধধর্মের মহিমা ও কর্তৃত্বের পরিচায়ক বলে তার ক্ষুদ্র নমুনা সর্বদাই রাজা সোংত্সান গামবো ও পঞ্চম দালাইলামার হাতে থাকতো ।
সাধারণ মন্ত্র লেখা চাকার আটটি পাখি শাক্যমুনির ধর্মপ্রচারের আটটি ঘটনার নিদর্শন ।
তিব্বতের মন্দিরের শীর্ষে যে মন্ত্র লেখা চাকা পরিলক্ষিত হয় তার দু' পাশে একটি করে সোনালী হরিণের মূর্তি স্থাপিত হয় । শাক্যমুনি মৃগ দাবে যে প্রথম মন্ত্র লেখা চাকা চালাতে চালাতে ধর্ম প্রচার করেন এ দুটি সোনালী হরিণ তার প্রমাণ । |