মেনপা জাতির মহিলা নিমাচোও তিব্বতের লিন চি জেলার কেংচাং মেনপা জাতির স্বায়ত্তশাসিত মহকুমার পাইমাতিয়ান গ্রামে বাস করেন । তার বাড়ি দেশের ৩১৮ নং জাতীয় সড়কের খুবই কাছাকাছি । আমাদের সংবাদদাতার সংগে সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় গভীর পাহাড় থেকে এ গ্রামে স্থানান্তরিত হওয়ার পর তার জীবনের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি সচরাচর সবিধার কথা বর্ণনা করেছেন ।
পাইমাতিয়ান একটি অত্যন্ত নবীন গ্রাম । তার ইতিহাস মাত্র ৬ বছর পুরনো । এটি হচ্ছে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কেংচাং মেনপা জাতির স্বায়ত্তশাসিত মহকুমার ৬টি প্রশানিক গ্রামের অন্যতম ।
২০০০ সালের জুন মাসে ইয়ালুজাম্বু উপত্যকায় অবস্থিত ই কুং এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছিল । নিমাছোওসহ এ এলাকার কৃষক ও পশুপালকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে স্থানীয় সরকার তাদের অন্যত্র স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় । বর্তমানে পাইমাতিয়ান গ্রামে রয়েছে ৭২টি পরিবার । তাদের মধ্যে ৫৮টি পরিবার মেন পা জাতির লোক ।
আমাদের সংবাদদাতাকে সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় ৩৬ বছর বয়সী নিমাছোও বিশেষভাবে মেনপা জাতির পোষাক পড়েছিলেন । আমরা আগুণের পাশে বসে নিমাছোওয়ের অভিজ্ঞতার কথা শুনেছিলাম ।
আমাদের আগেকার পাহাড়ী গ্রামে বছরে তিনবার ফসলগুলোর ফলন হতো । এ নতুন গ্রামে বছরে মাত্র একবার ফলন হয় । প্রথমদিকে আমরা চিন্তিত ছিলাম যে, আমাদের হয়তো খাদ্যশস্যের অভাব ঘটবে । পরে আমরা সরেজমিনে এসে দেখতে পেলাম , সরকার আমাদের সবার জন্যে নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছে এবং জমিজমাও দিয়ে দিয়েছে । এবার আমরা সবাই নিশ্চিন্ত হয়েছি ।
৫৭ বছর বয়সী ছিরেনতুনচু দ্বিতীয় কিস্তিতে ইয়ালুজাম্বু উপত্যকা থেকে এ নতুন গ্রামে এসেছেন । ২০০২ সালে আমরা এখানে আসার সময় আমার পরিবারে তিন হাজার ইউয়ান নগদ অর্থ ছিল । তখন আমাদের গ্রামে আমরা সবচেয়ে ধনী ছিলাম ।
ছিরেনতুনচুর জন্যে আরো গৌরবের বিষয় হচ্ছে , গত বছর তিনি ও তার কয়েকটি ছেলের প্রচেষ্টায় দু'তলার একটি আবাসিক বাড়ি নির্মাণ করেছেন । এ বাড়ি নির্মাণ করতে তার ৩ লাখেরও বেশি ইউয়ান লেগেছে ।
তিনি বলেন , এখন টেক্সি , ওষুধ সংগ্রহ ও অন্যান্য কাজ করে তার পরিবার বছরে এক লাখেরও বেশি ইউয়ান উপার্জন করতে পারে । আগে এমন অবস্থা কল্পনাও করা যেতো না । তিন ভবিষ্য সম্পর্কে পুরোপুরিই আশাবাদী ।
মেনপা জাতির ওপর চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও গণ সরকারের সহায়তা নীতির কল্যাণে নিমাছোও ও ছিরেনতুনচু মেনপা জাতির ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন । এসব নীতির সুবাদে মেনপা জাতির লোকেরা অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার দিক থেকে স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে ।
মেনপা জাতি হচ্ছে চীনের ২২টি সংখ্যালঘু জাতির অন্যতম । তাদের লোকসংখ্যা দশ হাজারেরও কম । তাদের অধিকাংশই হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ-পূর্বাংশের গভীর পাহাড়ে থাকতেন । তিব্বতের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আগে তিব্বতের অন্য স্থানের মত এখানেও সামন্ততান্ত্রক কৃতদাস সমাজ বিরাজমান ছিল । ১৯৫৯ সালে শুরু হওয়া গণতান্ত্রিক সংস্কারের ফলে মেনপা জাতির লোকেরা নতুন জীন পেয়েছেন । চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও গণ সরকারের জাতীয় নীতির কল্যাণে মেনপা জাতির লোকেরাও সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ এবং অথনৈতিক ও সামাজিত বিকাশের সমৃদ্ধ ফল উপভোগ করতে পারছেন ।
তোওতান হচ্ছেন পাইমাতিয়ান গ্রামের পার্টির সম্পাদক । তিনি বলেন , ২০০৩ সালে তার আগেকার গ্রামের লোকেরা ইয়ালুজাম্বু উপত্যকা থেকে স্থানান্তরিত হওয়ার পর গ্রামবাসীদের জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে । সবাই প্রশস্ত ও পরিচ্ছন্ন বাড়িতে উঠেছেন । সরকার মহকুমার জন্যে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে এবং প্রতিটি গ্রামের জন্যে প্রতিষ্ঠা করেছে চিকিত্সালয় । গ্রামবাসীদের চিকিত্সা নিতে কোনো পয়সা লাগে না । |