v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
অতীতকালের ক্রীতদাস আজকের মালিক
2009-07-10 21:15:09

শ্রোতাবন্ধুরা, ৫০ বছর আগে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তিব্বত ছিল রাজনীতি ও ধর্মের মিশ্রণে থাকা এমন একটি সামন্ততান্ত্রিক ক্রীতদাস প্রথার সমাজ ।

তিব্বতের বিভিন্ন জাতির জনগণ সামন্ততান্ত্রিক মালিকদের নিষ্ঠুর অত্যাচারের শিকার হতো। ১৯৫৯ সালে তিব্বতে গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে পুরোপুরিভাবে সামন্ততান্ত্রিক ক্রীতদাস প্রথা বাতিল করেছে। এর পাশাপাশি তিব্বতের বিভিন্ন জাতির জনসাধারণ মুক্তি পেয়েছে। তারা অতীতকালের দুঃখ ভূলে এখন অভাবনীয় সুখী জীবন কাটাচ্ছে। বন্ধুরা, আজকের " তিব্বতের কথকতা" অনুষ্ঠানে আমরা ক্রীতদাসের সুখী জীবন যাত্রা সম্পর্কে আপনাদের জানাবো ।

৫০ বছর আগে পুরানো তিব্বতে মন্দির ছিল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় একটি উপায়। ভিক্ষুরা যেন ক্রীতদাস তাদের কোনো মুক্তি ছিল না। সেসময় ক্রীতদাস একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখা হত না, তারা প্রায় প্রতিদিনই যথেষ্ট খাবার খেতে পারতো না। সে সময়ের জীবন-যাত্রার কথা বর্ণনা করার কোন ভাষাও যেন তাদের নেই। ১৯৫৯ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হওয়ার পর তিব্বতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।

সে সময় থেকে ভিক্ষুরা আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দিরের একজন সত্যিকার ভিক্ষুতে পরিণত হয়েছে। তাদের জীবন-যাত্রার মানেরও বেশ উন্নতি হচ্ছে । তিব্বতের রি কা জে অঞ্চলের চিয়াং চি জেলায় এখন পর্যন্ত সামন্ততান্ত্রিক মালিকের একটি উদ্যান তার ঐতিহ্যিক বজায় রেখেছে। এখানে সে সময়ের ইতিহাসের কথাও লিপিবদ্ধ রয়েছে। এ উদ্যানের একজন কর্মকর্তা সংবাদদাতাকে বলেন

:

" এ উদ্যানের ৩ শ'রও বেশি বছরের ইতিহাস রয়েছে। পুরানো তিব্বতে এর বিরাট প্রভাব ছিল। এখানে প্রায় ৩ হাজারেরও বেশি ক্রীতদাস থাকতো এবং এ উদ্যানের মোট আয়তন ছিল ৫ হাজারেরও বেশি বর্গকিলোমিটার"।

এখন ৭৫ বছর বয়সী মিমা তুন চু ছিলেন এ উদ্যান কাজ করা একজন ক্রীতদাস । তিনি সে সময়ের দুঃখময় জীবনের কথা স্মরণ করে বলেন:

" ১৩ বছর বয়স থেকে একজন ক্রীতদাস হিসেবে আমি এ উদ্যানে কাজ করতাম।সকাল ৮'টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭'টা পর্যন্ত সারা দিন কাজ করতাম। দুপুরে একটু বিশ্রাম নেয়ারও সময় ছিল না। একটি কথা আছে: ক্রীতাদাস হলে তার নিজের কোন অধিকার নেই"।

মিমা তুন চু আমাদের সংবাদদাতাকে আরো বলেন, পুরানো তিব্বতে তিব্বতের ৯৫ শতাংশ লোকই ছিল ক্রীতদাস। ক্রীতদাসের মালিক কখনোই ক্রীতদাসদের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখতো না। এমন কি মানুষ বলেও গণ্য করতো না। খৃষ্টীয় ১৩ শতাব্দীতে তিব্বত আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের কেন্দ্রীয় রাজবংশের প্রশাসনে অন্তর্ভূক্ত হয়। ১৭ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় ছিং রাজবংশের রাজা বৌদ্ধ ধর্মের নেতাকে দালাই লামা উপাধি প্রদান করে। এভাবেই দালাই লামা পর্যায়ক্রমে তিব্বতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রের শীর্ষ নেতায় পরিণত হয়ে অপরিহার্য ক্ষমতা প্রাপ্ত হন। তিব্বতের আলি অঞ্চলের আয়তন ৩ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলমিটার। তবে ছিং রাজবংশে আলি এ অঞ্চলের শীর্ষ নেতা ছিলেন একজন ভিক্ষু। এটা অভাবনীয়।

সে সময় তিব্বতের প্রায় সকল ক্ষমতা ও ভূমি সম্পদ সামন্ততান্ত্রিক রাজবংশের রাজ পরিবারের হাতে থাকতো। তারা ছিলেন তথাকথিত বৌদ্ধ ধর্মের ভিক্ষু। অতীত রাজবংশের রাজ পরিবার ও বৌদ্ধ ধর্মীয় জাতির বংশোদ্ভূত হিসেবে তারা প্রচুর ভূমি পেয়েছিল। তবে তাদের লোকসংখ্যা মাত্র তিব্বতের মোট লোকসংখ্যার ৫ শতাংশ। সুতরাং, অধিকাংশ কৃষকদের হাতেই ভূমি ছিল না। এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে তিব্বতের সাধারণ কৃষকরা শুধু বর্গা নেয়া জমিতে চাষ করতো এবং তাদের প্রচুর ঋণ হয়ে যায়। ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি এমন কৃষকরা পর্যায়ক্রমে ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে। আসল কথা হচ্ছে ভিক্ষু রাজ পরিবারের হাতে নিয়ন্ত্রিত তিব্বতের সকল রাজনৈতিক ক্ষমতা।

প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ নিজেদের পদমর্যাদার পরিবর্তনে কোন অধিকার ও সুযোগ ছিল না। অবশ্যই, রাজনৈতিক ব্যবস্থায়ও তাদের অংশ নেয়ার কোনো কোন সুযোগ ছিল না। কারণ তারা ছিল ক্রীতদাস পর্যায়ের মানুষ। কথা এ দিকে বলতে একটু থেমে গেলে মিমা তুন চু'র মুখে আবারও সুখী হাসি রয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৫৯ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার কাজে লাগানোর পর আমাদের ক্রীতদাসের জীবন আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন:

" আমাদের জীবন-যাত্রার মানের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সবাই এখন মনের মত সুন্দর সুন্দর পোষাকও পড়তে পারেন"।

1 2
  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China