বন্ধুরা, চিয়া ইয়োং ছুন ফেই হচ্ছেন চীনের কেন্দ্রীয় জাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের একজন তিব্বতী সংগীত অধ্যাপক। তবে তিনি হচ্ছেন তিব্বতের প্রথমজন সংগীত ডক্টর। বন্ধুরা ,আজকের " তিব্বতের কথকতা" অনুষ্ঠানে আমরা চিয়াং ইয়োং ছুন ফেই'র গল্প নিয়ে আলোচনা করবো
অনেকেই চিয়াং ইয়োং ছুন ফেই'র বড় হওয়ার প্রক্রিয়ার ওপর বেশ আগ্রহী করে। তাহলে তিনি কীভাবে একজন সাধারণ তিব্বতী মানুষ অবশেষে একজন বিখ্যাত সংগীতে পরিণহত হয়েছেন? এ সম্পর্কে চিয়াং ইয়োং ছুন ফেই বলেন:
" তিব্বতের ছিং হাই প্রদেশের ইয়ু সু স্বায়ত্তশাসিত জেলায় আমার জন্ম হয়। আমার মা একজন পশু পালক। ছোটবেলায় আমার বাবা মারা গেছেন। সুতরাং, পরিবারের সব খরচ পুরোপুরিভাবে মা একজন বহন করতেন। তখন থেকে আমি নিজেকেই বলতাম, মন দিয়ে লেখাপড়া করা প্রয়োজন। যেমন ভাবা তেমন কাজ আমি সুষ্ঠুভাবে চীনের কেন্দ্রীয় জাতিগত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি দিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের লেখাপড়ার পর আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর ডিগ্রি অর্জন করেছি। এখন কেন্দ্রীয় জাতিগত বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি সংখ্যালঘু জাতির সংগীত গবেষণার কাজ করছি। কাজ করার পর, আমার পরিবারের মান ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। গত শতাব্দীর ৮০ দশক থেকে সরকার আমার মা'র অবসরপ্রাপ্ত ব্যয় প্রদান করে এসেছে। এখন পরিবারের অবস্থা অতীতকালের চেয়ে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে"।
তিব্বতী অধিবাসীর ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া সমস্যা সম্পর্কে অনেকের এক প্রশ্ন রয়েছে তা হলোঃ তিব্বতী ছাত্রছাত্রীরা হান ভাষার শিক্ষাদানে গ্রহণ করেছে? তারা হান ভাষা ব্যবহারের পর তিব্বতী ভাষা মনে রাখতে পারে কী না এ সম্পর্কে চিয়া ইয়োং ছুন ফেই বলেন:
" ছাত্রছাত্রীরা কেন তিব্বতী ভাষা মনে রাখতে পারবে না? কারণ সারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সব তিব্বতী ভাষার পরিবেশন রেখেছে।স্কুলে লেখাপড়ার সময় স্কুলের শিক্ষাদানে হান ভাষা ও তিব্বতী ভাষা উভয়েই ব্যবহারের ব্যবস্থা নিয়েছে। তিব্বতী ছাত্রছাত্রীরা কেবল যে তিব্বতী ভাষা বলতে পারছিলে তা নয়, অবশেষে হান ভাষা মনে রাখতেও সক্ষম হয়েছে। এমন কি, হান জাতির ছাত্রছাত্রীরাও তিব্বতী ভাষা আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছে। চীনের 'সংবিধান ও সংখ্যালঘু জাতির স্বশাসন সংক্রান্ত আইনে'স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে, বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির নিজ নিজ মৌখিক ও লিখিত ভাষা ব্যবহার ও উন্নয়নের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঝ্চলে এখন তিব্বতী ভাষায় শিক্ষাদানকে একটি প্রধান বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে তিব্বতী ও চীনা ভাষায় শীক্ষাদানের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তিব্বতী ভাষঅ তিব্বতের সব স্কুলে জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে। বর্তমানে তিব্বতের সব কৃষি ও পশুপালন এলাকা এবং কিছু কিছু শহরের প্রাথমিক স্কুলে সমান্তরালভাবে তিব্বতী ও চীনা ভাষায় শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এ স্কুলগুলোর প্রধান বিষয় তিব্বতী ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয়। তিব্বতের মাধ্যমিক স্কুলেও এ দুটি ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয়। তিব্বতের বিশ্ববিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বৃত্তিগত বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় তিব্বতী ভাষাকে অন্যতম পরীক্ষার বিষয় হিসেবে ধরা হয়েছে। তিব্বতী ভাষার আন্তর্জাতিক মানদন্ত হচ্ছে চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর ভাষার মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ভাষা। এ মানদন্ডের মধ্য দিয়ে কম্পিউটারে তিব্বতী ভাষার ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে। এর ভিত্তিতে চীন স্বতন্ত্রভাবে তিব্বতী ভাষায় সম্পাদনা এবং বৈদ্যুতিক প্রকাশনা ব্যবস্থা চালু করতে সক্ষম হয়েছে। এখন তিব্বতী ভাষার মোবাইল ফোনও চালু হয়েছে। তিব্বতের জনসাধারণ এখন নিজের জাতির ভাষা দিয়ে নানা ধরণের তথ্য গ্রহণ ও প্রেরণ করতে সক্ষম হয়েছে"।
এখন আধুনিক ধাপ ইতোমধ্যেই তিব্বত অঞ্চলে যোগ দিয়েছে। তাহলে আধুনিকায়ন উন্নয়ন এবং ঐহিত্যবাহী সংস্কৃতির রক্ষার মধ্যে কেমন একটি সম্পর্ক রেখেছে? তিব্বতী জনসাধারণ কীভাবে নিজের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে দেখা করেছেন? এ সম্পর্কে চিয়া ইয়োং ছুন ফেই বলেন:
" তিব্বতী জাতি আসলে বিশেষ করে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর বেশ গুরুত্ব আরোপ করার একটি জাতি। তিব্বতকে নাচগানের সমুদ্র বলে গণ্য করা হয়। তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী নাচের রকম খুব বৈচিত্র্যময়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিব্বত সাংস্কৃতিক ধীশক্তির প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। নিয়মিতভাবে তিব্বতী অপেরা এবং নাটকসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজিত হচ্ছে। তা ছাড়া,পেশাগত নাচগানের ধীশক্তি প্রশিক্ষণের জন্য তিব্বতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিব্বতী নাচগানের বিষয় খোলা হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে তিব্বত প্রাথমিক স্কুল ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঐতিহ্যবাহী নৃত্যগীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে শুরু করে"।
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে,এখন পর্যন্ত তিব্বতের মোট ৫০০টিরও বেশি অপেশাদার সাংস্কৃতিক দল ও তিব্বতী অপেরা দল আছে। নানা ধরণের সংস্কৃতিতে লিপ্ত থাকা কর্মকর্তাদের সংখ্যা প্রায় ২০০০। এর মধ্যে তিব্বত জাতির লোকের হার ৯০ শতাংশ।
সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর তিব্বতের শিক্ষার দ্রুত উন্নয়ন শুরু হয় । গত শতাব্দির ৮০ দশক থেকে বাধ্যতামূলক শিক্ষা পর্যায়ে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার তিব্বতে বিশেষ শিক্ষা নীতি প্রবর্তন করে । এ নীতির কল্যাণে স্কুলে তিব্বতের কৃষি ও পশু পালন এলাকাগুলোর ছেলে মেয়েদের খাওয়া , থাকা ও লেখাপড়ার সব খরচ সরকার বহন করে থাকে । সারা দেশে কেবল তিব্বতেই এ রকম বিশেষ শিক্ষা করা হয় । সরকারের এ নীতির অনুপ্রেরণায় তিব্বতের কৃষি ও পশু পালন এলাকাগুলোর লোকেরা সক্রিয়ভাবে তাদের ছেলেমেয়েদেরকে বিভিন্ন স্কুলে পড়তে পাঠান ।
২০০৮ সাল পর্যন্ত তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ৮৮৫টিতে দাঁড়িয়েছে এবং প্রাথমিক স্কুলে স্কুলে বয়সী ছেলেমেয়েদের ভর্তির হার ৯৯ শতাংশের কাছাকিছি ছিল । ২০০৮ সালে তিব্বতের ২৩টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ৪৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং ৭টি মাধ্যমিক পেশাগত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে ।
একজন তিব্বতী সংগীতজ্ঞ হিসেবে বিশেষ করে সংখ্যালঘু জাতির সংগীত গবেষণা ক্ষেত্রের একজন বিখ্যাত গবেষক হিসেবে চিয়া ইয়োং ছুন ফেই বেশ সময় তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে গিয়ে নিজস্বভাবে পরিদর্শন করতেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:
" আমি বহুবার তিব্বতে গিয়েছিলাম। আমি আবিষ্কার পেয়েছি যে, তিব্বত সত্যিকারভাবে আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর তিব্বতে সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রদর্শিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য, মন্দিরের পুনর্গঠন ও মন্দিরের মূলবান পুরাকীর্তি রক্ষার লক্ষ্যে প্রতিবছর কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ করে এর বরাদ্দ বড়ানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মোট ২২টি পুরাকীর্তি ইউনিট পুনর্গঠন ও রক্ষার লক্ষ্যে চীন সরকার প্রায় ৫৭ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে"।
গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হওয়ার পর বিশেষ করে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর, চীন সরকার মন্দিরের পুনর্গঠন ও পুরাকীর্তি রক্ষার ওপর বেশ গুরুত্ব আরোপ করে যাচ্ছে। |