বন্ধুরা, তিব্বতের ' শান নান' অঞ্চল হচ্ছে তিব্বতী জাতির সাংস্কৃতিক উন্নয়নের সূতিকাগার। শান নান ' কাং তি সি' ও ' নিয়ান ছিং থাং কু লা' পর্বতের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। যার উত্তর দিকে তিব্বতের রাজধানী লা সা। পশ্চিম দিকে তিব্বতের রি কা জে এবং পূর্ব দিকে তিব্বতের লিন চি অঞ্চল এবং দক্ষিণ দিকে রয়েছে ভারত এবং ভুটান। এখানে যে কেবল সুন্দর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য রয়েছে তা নয়, তার রয়েছে ঐতিহ্যবাহী গভীর মানবিক সংস্কৃতিও । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ' শান নান' অঞ্চলের পর্যটন শিল্প বেশ তেজীয়ান হয়ে উঠেছে। যা তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নে সত্যিকারভাবে অবদান রেখেছে ।
" ' শান নানে' আমার জন্ম । এখানেই আমি বড় হয়েছি এবং কাজ করছি। জন্মস্থানের অতিন্তনীয় সুন্দর দৃশ্য সবসময়ই আমার হৃদয়ে তারার মত জ্বল জ্বল করছে। সবাই জানেন যে, ' শান নান' অঞ্চল হচ্ছে তিব্বতী জাতির সাংস্কৃতিক উন্নয়নের সূতিকাগার। এখানকার গভীর সাংস্কৃতিক পদ্ধতি , বিখ্যাত পুরাকীর্তি এবং প্রচুর পর্যটন সম্পদ অন্য যে কোন স্থানের তুলনায় সত্যিই অপরিবর্তিত এক সৌন্দর্য । এখানে যেমনি সুন্দর দৃশ্য রয়েছে তেমনি গভীর ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ' শান নান' অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের দ্রুত উন্নয়নসঠিকভাবে এর প্রমাণ করেছে। ' শান নান' অঞ্চলে যত বেশি পর্যটক আসলে ততই ভাল। এ জন্য আমি বেশ অনেক বইপত্র সংগ্রহ করে অবশেষে ' শান নান অঞ্চলের পর্যটন নির্দেশনা কর্মসূচী" লিখেছি। এ বই-এ হান ভাষা ও তিব্বতী ভাষা দু'টোই রয়েছে । এখন এর ইংরেজি ভাষার অনুবাদ প্রকাশের কাজও চলছে।"
১৯৮৮ সালে কে চু ' শান নান" অঞ্চলের পরামর্শ সম্মেলনের ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাঁর প্রধান কাজ হচ্ছে গ্রামীণ অধিবাসীদের খোঁজ খবর নেয়া এবং এ অঞ্চলে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিমালা বাস্তবায়নের দিকটি তত্ত্বাবধান করা। মন্দিরের একজন ভিক্ষু হিসেবে কে জু মন্দিরের অবস্থা বেশ জানতে সক্ষম হয়েছেন। সুতরাং, সংশ্লিষ্ট মন্দিরের কাজ থাকলে সাধারণত কে চু সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে তার সমাধান করেন। উল্লেখ্য, পরামর্শ সম্মেলনের কর্মকান্ড ছাড়াও , কে চু আরও তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি আশা করেন, লোকজন তিব্বতকে সুষ্ঠুভাবে জানানোর জন্য তিব্বতের অধিবাসীদের উচিত তিব্বতের ঐতিহ্যিক ও শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতি উত্তরাধিকার করা।
তাহলে তিব্বতের গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরুর আগে অতীতকালের " শান নান" অঞ্চলের অবস্থা কেমন হয়েছিল? এ সম্পর্কে কে চু বলেন:
" ' শান নান' অঞ্চলের সুদীর্ঘকালের ইতিহাস রয়েছে। যা তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করেছে। আগে কৃষি ছিল ' শান নান' অঞ্চলের শুধু মাত্র একটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আয়ের গুরুত্বপূর্ণ দিক। এখানকার সবার অবস্থাই ছিল নিম্নমাত্রের এবং জীবন যাত্রা ছিল খুব কষ্টকর। এমন কি, সেসময় উন্নত কোন সড়কও ছিল না। যোগাযোগের এ অসুবিধা গুরুতরভাবে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল । ১৯৫৯ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরুর পর, কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাপকভাবে ' শান নান' অঞ্চলে সড়ক নির্মাণের কাজ সম্প্রসারণ করেছে। এখন শান নান অঞ্চল ইতোমধ্যেই তিব্বতে সবচে' বেশি সড়ক থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। যোগাযোগের সুবিধায় বাইরের মানুষ আস্তে আস্তে শান নান অঞ্চলকে জানতে সক্ষম হয়েছেন। এভাবেই শান নান অঞ্চলের পর্যটন শিল্প ইতোমধ্যেই কৃষি শিল্পের পর এ অঞ্চলে ব্যয় বয়ে এনের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। আসলে পর্যটন উন্নয়ন ও জাতীয় সংস্কৃতির উন্নয়নের মধ্যে দু'পক্ষ পারস্পরিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।জাতীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অনুষ্ঠান বেশি থাকলে অবশ্যই পর্যটক থাকার সময় বেশি হয়। একই সঙ্গে এভাবেই তিব্বতের জাতীয় সংস্কৃতিও বেশ সুষ্ঠুভাবে উত্তরাধিকার করেছে।
তাহলে ' শান নান' অঞ্চলের পর্যটন অর্থনীতি কখন থেকে শুরু হয়? তার চলমানের অবস্থা কেমন হয়েছে? যা স্থানীয় জনগণের জীবন-যাত্রার মান কী উন্নয়ন করেছে? এ সম্পর্কে কে চু বলেন:
" ১৯৮৫ সাল থেকে আমরা পর্যটন অর্থনীতি শুরুর ব্যবস্থা নিচ্ছিলাম। সবার জন্য প্রথমবার পর্যটন এ নতুন খাতে প্রবেশ করার কারণে এর শুরু দিকে কার্যকরিতা বেশ কম ছিল। তবে ২০০৬ সালে তিব্বতে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কৃষক ও পশু পালকদের নিরাপদ আবাসিক প্রকল্প চালু করে। এ খাতে সরকার ১১ বিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করেছে। এ পর্যন্ত ৯ লাখ কৃষক ও পশুপালক নিরাপদ ও আরামদায়ক নতুন বাড়িতে উঠেছেন। পাশাপাশি তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কৃষক ও পশু পালকদের জন্য নিরাপদ খাবার পানির প্রকল্পও হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের কল্যাণে আরো বেশি তিব্বতী লোকের বাড়িতে পানির পাম্প বসানো হয়েছে। এখন তিব্বতীদের মধ্যে কাঁধে করে পানি বয়ে আনার ইতিহাস ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। একই সময় বিদ্যুত্ ও টেলিফোন ব্যবস্থা চালু হওয়ায় তিব্বতী জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। এ ছাড়াও, যোগাযোগ ব্যবস্থা হচ্ছে সুবিধাজনক আধুনিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুক্তির আগে পুরানো তিব্বতে একটিও সড়কও ছিল না। গত শতাব্দীর ৭০ দশকে লাসা থেকে না ছুই এলাকায় যেতে গাড়িতে করে একদিন লাগতো। ২০০৬ সালের ১ জুলাই মাসে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথ চালু হওয়ায় এখন লাসা থেকে না ছুই যেতে শুধু মাত্র চার ঘন্টা সময় লাগে। এটি যেমন তিব্বতী জনগণের জীবনকে সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। তেমনি বহুলাংশে তিব্বত ও পৃথিবীর দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। ২০০৯ সালে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকার বলেছে, তিব্বতের সড়ক ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে এ বছর এ খাতে ৬ বিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করা হবে।"
গণতান্ত্রিক সংস্কারের পর গত ৫০ বছরে তিব্বতী জনসাধারণ দারিদ্র্য দূর করে সুখে জীবনযাপন করছে। আজকের তিব্বত একটি নতুন ঐতিহাসিক স্তরে রয়েছে। সবাই সুখী ও সুন্দর জীবনে দিন কাটাচ্ছে। ---ওয়াং হাইমান
|