তিব্বতের ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন , তাঁরা পবিত্র পর্বত এবং হ্রদের রসমাধুর্যে মানুষ হয়েছেন । পর্বত-দেবতা ও জল দেবতা বিপদ থেকে তাদের রক্ষা করে । তাই পবিত্র পর্বত ও হ্রদের প্রতি তারা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তাদের বিশ্বাস , পবিত্র পর্বতের পাদদেশ ও হ্রদের তীর প্রদক্ষিণ করে দেব-দেবী পূজা করলে তাদের উপকার হবে ।তাই তারা ঝড়-ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে অসহণীয় কষ্ট সহ্য করে পবিত্র পর্বত ও হ্রদের উপাসনা করতে যায় ।
পবিত্র পর্বত ও হ্রদে পূজারীদের যাওয়ার দু'টি উপায় আছে । এক হেঁটে যাওয়া ,দুই , হাটু গেড়ে প্রণাম করতে করতে যাওয়া ।শেষোক্ত উপায়ে গেলে পূজারীর প্রথমে দু' হাত জোড় করে উর্ধ্বে তুলে জোড়া হাত দিয়ে কপাল ,মুখ ও বুক ছুঁতে হবে । করজোড়ের অর্থ হলো, বুদ্ধের উপদেশ ও দীক্ষা গ্রহণ করা । জোড়া হাত দিয়ে কপাল ,মুখ ও বুক ছোঁয়ার অর্থ হলো, নিজকে বুদ্ধের সংগে হৃদয়ের যোগসূত্রে বাঁধা । তারপর পূজারীকে হাটু গেড়ে উপুড় হয়ে দু'হাত সামনে বাড়িয়ে কপাল দিয়ে মাটি স্পর্শ করতে হবে । গন্তব্যেস্থলে পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত পূজারীকে অজস্রবার এ ভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করে নিজের শরীর দিয়ে পবিত্র ভূমির মাপ নিতে হয়।ভূলুন্ঠিত হয়ে বুদ্ধ ও দেবদেবীকে প্রণাম করার যে রেওয়াজ আজো প্রচলিত তাতে তিব্বতীদের চরিত্রের দৃঢ়তা ও অনড় ভক্তিই প্রতিফলিত হয়েছে ।
সুগন্ধী গাছের ডাল জ্বালানোও তিব্বতীদের অন্যতম প্রাচীন ও প্রচলিত পার্বণ । জনশ্রুতি আছে , মোক্সা নামক গাছ ও পাইন গাছের ডাল ও পাতা জ্বালিয়ে যে সুগন্ধ বের হয় তা পেয়ে মর্ত্যলোকের মানুষ যেমন মনশরীরে স্নিগ্ধতা ও আরাম অনুভব করে তেমনই পর্বত-দেবতা মন্দিরে বসে তা পেয়েও অত্যন্ত্ আনন্দিত হয় । তিব্বতীদের বিশ্বাস , উপহার হিসেবে গাছের ডালের সুগন্ধ দেবতার নামে উত্সর্গ করলে দেবতা তৃপ্ত হয়ে তাদের জন্য মঙ্গলধারা বয়িয়ে দেবে। |