v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
জেনারেল ডাক্তার লি সু চি
2009-05-15 20:41:37
বন্ধুরা, তিব্বতের সুবিশাল ভূমিতে একজন ডাক্তার আছেন তার নাম সবার মুখে মুখে। তিনি হচ্ছেন লি সু চি । তাকে সবার প্রিয় ডাক্তার বলে অভিহিত করা হয় । তিব্বতে চিকিত্সা ক্ষেত্রের ৩০ বছরে হাজার হাজার তিব্বতী অধিবাসীকে অসুস্থতা থেকে সুস্থ করে তোলার জন্য তিনি নিজে প্রায় ১৩ হাজারেরও বেশি রোগীর দেহে অস্ত্রোপচার করেছেন। প্রিয় বন্ধুরা, আজকের তিব্বতের কথকতা অনুষ্ঠানে আমরা লি সু চি'র গল্প নিয়ে আপনাদেরকে পরিচয় দিবো।

তিব্বতের রাজধানী লাসায় তিব্বতের চিকিত্সা ক্ষেত্রের সবচে' আধুনিক ও সবার কাছে অতি বিশ্বস্ত একটি হাসপাতাল রয়েছে। তা হচ্ছে তিব্বতের সামরিক অঞ্চলের সাধারণ হাসপাতাল। এ হাসপাতালে চিকিত্সা গ্রহণের জন্য স্থানীয় অনেক অধিবাসীই দূরাঞ্চল থেকে এখানে চলে আসেন। ৫৫ বছর বয়স্ক লি সু চি হচ্ছেন এ হাসপাতালের প্রধান। তার সাক্ষাত্কার নেয়া সত্যিই কোন সহজ ব্যাপার নয়। কারণ রোগীদের চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে থাকা ছাড়াও তিনি সময় পেলেই কৃষি পশুপালন অঞ্চলে গিয়ে চিকিত্সা সেবা দেন।

আসলে লি সু চি পুরোপুরিভাবে একজন হান জাতির মানুষ। ১৯৭৬ সালে দ্বিতীয় সামরিক চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করার পর, তিনি শাং হাই'র একটি হাসপাতালে কাজ শুরু করেন। কাকতালীয়ভাবে পেয়ে যাওয়া একটি সুযোগে তিনি তিব্বতে চিকিত্সা কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন।এ সম্পর্কে লি সু চি বলেন:

" একজন তিব্বতী রোগীর কাছ থেকে আমি জানতে পেরেছি যে তিব্বতের চিকিত্সার অবস্থা খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এ কথা জানার পর পরই আমি তিব্বতে যাওয়ার জন্য একটি আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেই। যেমন ভাবা তেমন কাজ । আমাকে কাজ করার অনুমতি দেয়া হলো। তিব্বতে আসার পর আমি অনুভব করেছি যে , তিব্বতের অর্থনীতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সত্যিকারভাবেই উন্নত ছিল না। অনেকের শরীরের অবস্থাও ভাল নয়, তারা কার্যকর কোন চিকিত্সা গ্রহণ করতে পারছিল না। এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে আমি মনের ভেতর একটি দৃঢ় আস্থা লালন করলাম, তিব্বতে চিকিত্সা সেবায় নিজেকে নিবেজিত করবো"।

সেসময় স্থানীয় চিকিত্সার অবস্থা উন্নততো ছিলই না এবং না হলেও তিব্বতী অধিবাসীদের চিকিত্সা সম্পর্কিত ধারণা উন্নয়নেরও কোনো চেষ্টা করা হয়নি। লি সু চি স্মরণ করে বলেন, অনেক বছর আগে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিত্সা প্রদানকালে তিনি এমন একটি অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিলেন। যা হলো একটি ছেলে একটি তাঁবুতে শুয়ে আছে। জ্বর হওয়ার জন্য ছেলেটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তবে তারপরও তার মা ছেলেকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে না , উল্টো ছেলের মুখে খাবারের তেল মেখে দিচ্ছেন। আসলে এ অবস্থা তিব্বতে এখন বেশিই। এ অবস্থা দেখে তিনি আরো দৃঢ়ভাবে তিব্বতে চিকিত্সা সেবা প্রদানের প্রতিজ্ঞাকে মনের ভেতর জোরদার করেছে।

কয়েক যুগ ধরে, লি সু চি'র চিকিত্সার মান অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। তিব্বতের আবহাওয়ার অবস্থা ভালো না হলেও লি সু চি পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকভাবে উচ্চ পর্যায়ের বহু জটিল অপারেশন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে তিনি ৮০টিরও বেশি তিব্বতের চিকিত্সা ক্ষেত্রের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন:

" সমুদ্র সমতল থেকে ৩ হাজার ৭ শ'রও বেশি মিটার উঁচুতে হাটের অপারেশন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছি। যা তিব্বতের মালভূমিতে অপারেশন না করার ইতিহাসকে মুছে দিয়েছে। এর ফলে তিব্বতের চিকিত্সা উন্নয়ন ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত করেছে। অনেক রোগী এখন বাইরের হাসপাতালে না গিয়ে তিব্বতে সুষ্ঠুভাবে চিকিত্সা গ্রহণ করতে পারে"।

এক অসম্পূর্ণ পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, লি সু চি'র সাহায্যে বিভিন্ন অপারেশনের সংখ্যা এ পর্যন্ত ১৩ হাজারেও বেশি।

১৯৯৬ সালে লি সু চি তিব্বতের সামরিক অঞ্চলের সাধারণ হাসপাতালের মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর, তিনি পর্যায়ক্রমে কৃষি ও পশুপালক অঞ্চলে চিকিত্সা দেখার ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে এ চিকিত্সা দলটি প্রায় তিব্বতের কিছু অলি-গলি রাস্তায় রাস্তায় কাজে করতে শুরু করে। এ সম্পর্কে লি সু চি বলেন

" ১৯৯৬ সাল থেকে প্রত্যিবছর আমার এ চিকিত্সা দল প্রায় ৫ শ'রও বেশি বার কৃষি ও পশুপালক অঞ্চলে চিকিত্সা সেবা প্রদান করে আসছে। এর মোট দৈর্ঘ হবে প্রায় ১০ লাখ কিলোমিটার । যা স্থানীয় অধিবাসীদের সুস্থ শিক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য অনেক সহায়ক হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখেরও বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এ ছাড়াও আমি এক হাজারেরও বেশি চোখের ছানি রোগীর বিনেপয়সায় অপারেশন করেছি"।

চিকিত্সা সেবা প্রদান করার প্রক্রিয়ায় লি সু চি'র চিকিত্সা দক্ষতার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি আরও তিব্বতের টেলিভিশন কেন্দ্র ও বেতারে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন। এভাবেই স্থানীয় অধিবাসীরা চিকিত্সা ক্ষেত্র বেশি জ্ঞান জানতে সক্ষম হয়েছে।

তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আপেক্ষিকভাবে সামনে চলে আসেনি। অনেক তিব্বতী রোগী আর্থিক কারণে ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না। এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে লি সু চি তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবেই চিকিত্সা প্রদান করেছেন। একই সঙ্গে প্রতিবছর তিব্বতী অধিবাসীদের জন্য হাসপাতালটি আরও ১৫ লাখ ইউয়ান ভর্তুকি দিয়েছে।

লি সু চি মনে করেন, তিব্বতের চিকিত্সার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে শুধু নিজের দেয়া সহায়তাই যথেষ্ট নয়, একটি উচ্চ পর্যায়ের চিকিত্সা কর্মী দল গড়ে তোলা সবচে' বেশি গুরুত্বপূর্ণ। লি সু চি'র উদ্যোগে তার এ হাসপাতাল এবং চীনের কয়েকটি বিখ্যাত চিকিত্সা হাসপতাল সম্মিলিতভাবে এ ক্ষেত্রের একটি প্রযুক্তিবিদ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যা তিব্বতের চিকিত্সা ক্ষেত্রে বেশ অনেক চিকিত্সা প্রযুক্তিবিদ প্রশিক্ষণ করেছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন

" সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বিভিন্ন কৃষি ও পশুপালন অঞ্চলে কাজ করার জন্য চিকিত্সা কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশেষ করে তিব্বতী জাতির চিকিত্সা কর্মীকে তাদের চিকিত্সা শেখার জন্য বেশ উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। এ পর্যন্ত ইতোমধ্যেই ৪ হাজারেরও বেশি চিকিত্সা কর্মীকে প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ কর্মীরা চিকিত্সা ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছেন। এমন কি, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যেই চিকিত্সা ইউনিট ও হাসপাতালের দায়িত্ব লাভে সক্ষম হয়েছে"।

তিব্বতের চিকিত্সার বিষয়টি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীদের মাথাপিছু আয়ুরও লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন হয়েছে। তিব্বতের মুক্তির আগে স্থানীয় অধিবাসীদের মাথাপিছু আয়ু ছিল মাত্র শুধু ৩৭ বছর। এখন তাদের মাথাপিছু আয় ৬৫ বছর ছাড়িয়ে গেছে। একজন সাধারণ ডাক্তার হিসেবে তিব্বতের উন্নয়নের কথা স্মরণ করে লি সু চি অনেক মুগ্ধ । এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই একজন জেনারেলে পরিণত হলেও তিনি তাঁকে ডাক্তার বলতেই বেশি পছন্দ করেন।----ওয়াং হাইমান

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China