v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
তিব্বতের যোগাযোগ দ্রুতভাবে উন্নয়ন হয়েছে
2009-05-08 20:29:04

বন্ধুরা, চীনের তিব্বত গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হওয়ার ৫০ বছরে তিব্বতের বিভিন্ন জাতির জনগণ জীবন-যাত্রার মান ব্যাপকভাবে উন্নয়ন হয়েছে। ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির " বিশ্ব ঘরের ছাদ" সুনাম রয়েছে। প্রাচীণকাল থেকে এ অঞ্চলের যোগাযোগ অনেক অসুবিধাজনক। এখন তিব্বতে সড়ক, রেলপথ এবং বিমানসহ আধুনিক যোগাযোগ ইতোমধ্যেই চালু হয়ে গেছে। তাহলে অতীতকালের মালভূমি কীভাবে বর্তমানের আধুনিক যোগাযোগে পরিণত হয়েছে?

ইতিহাসে দেশি-বিদেশী ভ্রমণকারী ও অনুসন্ধানকারী তিব্বতের মালভূমি যেতে বেশ উদ্বিগ্ন। পশ্চিম লেখকদের বর্ণনায় তিব্বতের মালভূমিকে " সর্বোচ্চ স্থল দুর্গ" লিবিবদ্ধ রয়েছে।

মেদোগ হচ্ছে তিব্বতের মোইনপা এবং লুও পা জাতির প্রধান হিসেবে সংখ্যালঘু জাতির অধূষিত অঞ্চল। হিমালয় এবং গার্লুংলা পর্বতের কারণে বাইরের সঙ্গে মেদোগের সড়ক যোগাযোগ গেলে ছিল না। এ কারণে , ১৯৭১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে নির্মিত জামু উপকন্ঠ থেকে মেদোগ পর্যন্ত এমন একটি সহজ পথকে বাছাই করা হয়েছে। এতে প্রতিবছর দুই বা তিন মাস শুধু ছোট আকারের কৃষি পণ্যবাহী গাড়ি এর মধ্য দিয়ে চলতে পাতো। হিমালয় এবং গার্লুংলা পর্বতের কারণে মেদোগ জেলা বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ অত্যন্ত অসুবিধাজনক। সুতরাং, মেদোগ ছিল চীনে সড়ক যোগাযোগ না থাকার শুধুমাত্র অন্যতম একটি জেলা। ২০০৮ সালে মেদোগ সড়ক নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে তিব্বতের মোট ৭৪টি জেলা বাইরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সব থাকার প্রতীক। উল্লেখ্য, এখন মেদোগ সড়ক নতুন নির্মাণেরর কাজও শুরু হয়েছে। নতুন নির্মিত মেদোগ সড়ক বোমি জেলা থেকে জামু উপকন্ঠ পর্যন্ত চলে যাবে। এর মোট দৈর্ঘ্য হবে ১১৭ কিলোমিটার। এ সড়ক নির্মাণে চীন সরকার ৯৫ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করবে । এটি নির্মাণ করতে প্রায় সাড়ে তিন বছরের সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।

শান্তি মুক্তি পাওয়ার আগে সারা তিব্বতের ১২ লাখেরও বেশি বর্গকিলোমিটার ভূমিতে কোন একটি সড়ক ছিল না। সুতরাং, সেসময় সেখানকার যোগাযোগের অবস্থা অত্যন্ত অসুবিধাজনক ছিল। স্থানীয় অধিবাসীরা গবাদীপশু নির্ভর করে মাল বহন করেছিল। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের স্থানীয় সরকারের ভাইস-চেয়ারম্যান সালুং হুনলহা আমাদের সংবাদদাতাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, পুরনো এবং নতুন তিব্বতে জীবন কাটানোর একজন সাধারণ অধিবাসী হিসেবে তিনি তিব্বতের যোগাযোগ পরিবর্তনে গভীর অনুভব করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন: " আমার জন্মস্থান হচ্ছে লাতসি অঞ্চল। আগে বাবা মা'র সঙ্গে দেখার জন্য রিগাজ থেকে লাতসি পর্যন্ত হেঁটে চলে গেলে আমার প্রায় তিন ও চার দিনের সময় লেগেছিল। কারণ সেসময় তিব্বতে কোন সড়ক ছিল না। সুতরাং, এতো দিনের হেঁটে চলে গেলে আমার অনেক ক্লান্তি চলে এসেছিল। এখন আমি শুধু তিন ও চারটি ঘন্টায় বাসে করে সরাসরিভাবে জন্মস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম।"

১৯৫৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর মাসে মোট দৈর্ঘ ৪ হাজার ৩৬০ বর্গকিলোমিটার সিছুন--তিব্বত এবং ছিং হাই--তিব্বত সড়ক একই সময় তিব্বতের রাজধানি লাসায় চালু হয়। এটি হচ্ছে তিব্বতের মেদোগ জেলার " সারা দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ না থাকার" ইতিহাস শেষ হওয়ার প্রতীক। যা তিব্বতের সড়ক যোগাযোগের নতুন যুগ উন্মোচন করেছে ।

গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরুর পর বিশেষ করে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর, তিব্বতের অবকাঠামো স্থাপনার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের লক্ষ্যে চীন সরকার অব্যাহতভাবেসংশ্লিষ্ট সহায়তা প্রদান করে এসেছে। ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প চালু হওয়া, যা তিব্বতের শহর ও গ্রামের অবস্থা পরিবর্তন , জনগণের জীবন-যাত্রার মান উন্নয়ন এবং তিব্বতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের উন্নয়ন ও সংস্কার কমিটির পুঁজি বিনিয়োগ বিভাগের মহাপরিচালক লিউ চি ছিয়াং বলেন:" ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সারা সমাজের পুঁজি বিনিয়োগের মোট পরিমান হয়েছে ৬৯.৮ বিলিয়ন ইউয়ান। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পুঁজি বিনিয়োগের পরিমান ৫১ বিলিয়ন ইউয়ান। এর সাহায্যে তিব্বতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এমন অবকাঠামো স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।"

তিব্বতের গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হওয়ার ৫০ বছরে মূলভূভাগ থেকে তিব্বত পর্যন্ত সড়কের মধ্য দিয়ে প্রায় ২ কোটি টনেরও বেশি সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক ও রেলপথের বহন মোট সামগ্রী পরিমানের ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তিব্বতের সড়ক নির্মাণে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাপক আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছে। যা তিব্বতের সড়ক যোগাযোগ দ্রুতভাবে উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে।

২০০৬ সালের ১ জুলাই মাসে রাষ্ট্রীয় পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তম উন্নয়নের প্রতীকরণ প্রকল্প-- ছিংহাই তিব্বত রেলপথ সার্বিকভাবে চালু হয়। চীনে রেলপথ যোগাযোগ না থাকার শুধুমাত্র অন্যতম একটি প্রাদেশিক প্রশাসনিক অঞ্চল--তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল যে রেলপথ না থাকার ইতিহাস বন্ধ করেছে। এর মধ্যে তিব্বতের পর্যটন, তিব্বতী ঐষধ এবং খনি সম্পদসহ প্রচুর মূল্যবান সাংস্কৃতিক সম্পদের মূল সুষ্ঠুভাবে প্রতিফলিত হয়। ছিংহাই তিব্বত রেলপথের সাহায্যে তিব্বতের বিভিন্ন জাতির অধিবাসীদের বেশ উপকৃত হয়েছে। স্থানীয় জনগণ সত্যিকারভাবে কল্যাণ অর্জন করেছে। এ সম্পর্কে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ছিংহাই তিব্বত রেলপথ কর্মকান্ড গ্রুপ কার্যালয়ের উপপরিচালক ফু ইয়ু থাও বলেন:"ছিংহাই তিব্বত রেলপথ চালু হওয়ার পর , যা তিব্বতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। ২০০৭ সালে তিব্বতের উত্পাদনের মোট পরিমান হয়েছে ৩৪.২ বিলিয়ন ইউয়ান। যা ২০০৬ সালের একই সময়ের তুলনায় ১৩.৮ শতাংশ বেশি। তিব্বতের লম্ফন উন্নয়ন অর্জিত হয়েছে। এর অর্থনৈতিক কাঠামো আরও সুবিন্যস্ত হয়ে যাবে।"

উল্লেখ্য, তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ১৮০টি প্রকল্প উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৭ সালে রাষ্ট্রীয় পরিষদ আরও ৭৭ বিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ দিয়েছে। এ সম্পর্কে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের যোগাযোগ বিভাগের মহাপরিচালক চাও শি চুন বলেন: " সাম্প্রতিক পাঁচ বছরে চীন সরকার তিব্বতের সড়ক যোগাযোগ নির্মাণে মোট ১৮.৭৪ বিলিয়ন ইউয়ান আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছে। ২০০৭ সালের শেষ দিক পর্যন্ত সারা তিব্বতে সড়ক চালু হওয়ার মোট দৈর্ঘ হয়েছে ৪৮ হাজার ৬ শ বর্গকিলোমিটার।"

বর্তমানে তিব্বতের যোগাযোগ বেশি সুবিধাজনক। যা কেবল যে তিব্বত ,অন্যান্য প্রদেশ ও শহরের সঙ্গে বিনিময় ত্বরান্বিত করেছে তা নয়, তা স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদার করেছে। এটিও তিব্বতী জনগণের বেশি সুবিধা ও নতুন জীবনে দিন কাটানোর জন্য সহায়ক হয়েছে।--ওয়াং হাইমান

 

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China