এ অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে । এখন শুনুন তিব্বতের ভাষা এবং সংস্কৃতি ও শিল্পকলা সংরক্ষণ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন । পড়ছি আমি শি চিং উ ।
চীন সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দান ও বিরাট অংকের বরাদ্দের কারণে তিব্বতের জাতীয় সংস্কৃতি অভূতপূর্বভাবে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে ।
চীনের সংবিধান ও সংখ্যালঘু জাতির স্বশাসন সংক্রান্ত আইনে স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে , বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির নিজ নিজ মৌখিক ও লিখিত ভাষা ব্যবহার ও উন্নয়নের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে ।
তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে এখন তিব্বতী ভাষায় শিক্ষা দানকে প্রধান বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে তিব্বতী ও চীনা ভাষায় শিক্ষা দানের ব্যবস্থা চালু রয়েছে । তিব্বতী ভাষা তিব্বতের সব স্কুলে জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে । বর্তমানে তিব্বতের সব কৃষি ও পশু পালন এলাকা এবং কিছু কিছু শহরের প্রাথমিক স্কুলে সমানতরালভাবে তিব্বতী ও চীনা ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয় । এ স্কুলগুলোতে প্রধান বিষয়ে তিব্বতী ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয় । তিব্বতের মাধ্যমিক স্কুলেও এ দুটি ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয় । তিব্বতের বিশ্ববিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বৃত্তিগত বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় তিব্বতী ভাষাকে অন্যতম পরীক্ষার বিষয় হিসেবে ধরা হয় ।
তিব্বতী ভাষার আন্তর্জাতিক মানদন্ড হচ্ছে চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর ভাষার মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ভাষা । এ মানদন্ডের মধ্য দিয়ে কম্পিউটারে তিব্বতী ভাষার ব্যবহার সম্ভব হয়েছে । এর ভিত্তিতে চীন স্বতন্ত্রভাবে তিব্বতী ভাষায় সম্পাদনা , লেজার মুদ্রণ ও বৈদ্যুতিন প্রকাশনা ব্যবস্থা চালু করতে সক্ষম হয়েছে । এখন তিব্বতী ভাষার মোবাইল ফোনও চালু হয়ছে । তিব্বতের জনসাধারণ এখন নিজের জাতির ভাষা দিয়ে নানা ধরণের তথ্য গ্রহণ ও প্রেরণ করতে পারেন ।
তিব্বতের বীরদের মহাকাব্য " রাজা গেসারের কাহিনী" হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মহাকাব্য । এটি প্রাচ্যের হোমারের মহাকাব্য বলে পরিচিত ।
"রাজা গেসারের কাহিনী"র এক হাজারেরও বেশি বছরের ইতিহাস রয়েছে । তিব্বতের জনসাধারণ প্রাচীনকালের রূপকথা , পৌরাণিক কাহিনী , ছড়া ও প্রবাদসহ নানা ধরণের লোক সাহিত্যকর্মের ভিত্তিতে যৌথভাবে এ মহাকাব্য রচনা করেন । এ মহাকাব্যে বর্ণনা করা হয়েছে , দেবতার ছেলে রাজা গেসার আদেশ পেয়ে দানবদের পরাস্ত করার জন্যে মানব জগতে আসেন । তিনি শত শত বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত জনসাধারণকে পরিচালনা করে সমস্ত দানবকে নির্মূল করতে সক্ষম হন এবং নিজের মা ও প্রিয়তম উপপত্নীকে উদ্ধার করেন । তারপর তারা সবাই মিলে স্বর্গীয় দেশে ফিরে যান ।
গত এক হাজারেরও বেশি বছর ধরে এ মহাকাব্য প্রধানত লোক শিল্পীদের মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে আসছে । গত শতাব্দির আশির দশক থেকে চীন সরকার "রাজা গেসারের কাহিনী" সংগ্রহ , সংযোজন ও প্রকাশ করার জন্যে বিশেষ সংস্থা গঠন করে । এ পর্যন্ত লোক শিল্পীদের গাওয়া কাহিনীসম্পন্ন ক্যাসেটগুলোর দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ঘন্টা ছাড়িয়ে গেছে । মহাকাব্যটি তিব্বতী ভাষা , মোংগলিয় ভাষা ও চীনা ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে । এর কোনো কোনো অংশ ইংরেজী , জাপানী ও ফরাসী ভাষায়ও অনুদিত হয়েছে ।
তিব্বতের গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তিগুলো সংরক্ষণ ও মরামতের জন্যে গত শতাব্দির আশির দশক থেকে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার বিরাট অংকের অর্থ বরাদ্দ করেছে । তার মধ্যে গত শতাব্দির আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দর্শক পর্যন্ত প্রাচীন স্থাপত্য জাশলুনবু মন্দির , সাগা মন্দির , সাংইয়ে মন্দির , তা চাও মন্দির ও লোওবুলিনকা মেরামতের জন্যে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার ৩০ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করেছে ।
ব্যাপক আকারে তিব্বতের রাজধানী লাসার পুতালা প্রাসাদ মেরামতের জন্যে ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত চীন সরকার সাড়ে ৫ কোটি ইউয়ান এবং বিপুল পরিমাণ সোনা ও রূপা বরাদ্দ করেছে ।
তিব্বতের ২২টি গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি সংরক্ষণের জন্যে ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চীন সরকার আবারো ৫৭ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করবে । |