২৮ মার্চ হচ্ছে চীনের ইতিহাসে 'তিব্বতের দশ লাখ কৃতদাসের প্রথম মুক্তি দিবস'। এটা তিব্বতী জনগণের রাজনৈতিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৫৯ সালের ২৮ মার্চ চীনের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই রাষ্ট্রীয় পরিষদের পক্ষ থেকে তিব্বতের স্থানীয় সরকার ভেঙ্গে দেয়াসহ তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তুতিমূলক কমিটিকে স্থানীয় প্রশাসন চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঐ দিন থেকেই দালাই গোষ্ঠীর বিদ্রোহ দমন আর গণতান্ত্রিক সংস্কার চালু করার সঙ্গে সঙ্গে তিব্বতে ধারাবাহিক মহান পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়। চীনের তিব্বত বিদ্যা গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ইয়াং জুন চাই উল্লেখ করেছেন, তিব্বতের কৃতদাসদের মুক্তি হচ্ছে বিশ্বের দাসপ্রথা বাতিল আন্দোলনের প্রতি চীনের মহান অবদান। তিনি বলেছেন, 'তিব্বতের লাখ লাখ কৃতদাসের মুক্তি লাভ বিশ্বের দাসপ্রথা বাতিল আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে মানবজাতির সর্বশেষ দাসপ্রথার অবসান হয়েছে। এরপর পৃথিবীর এই দশ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনেরও বেশি ভূমিতে লাখ লাখ জনসংখ্যার সামন্ততান্ত্রিক কৃতদাস প্রথা প্রচলিত অঞ্চলে বিলুপ্তি ঘটে। এভাবেই মানবজাতি সমাজের সর্বশেষ রাজনীতি ও ধর্মের সমন্বয়ে পরিচালিত অনুন্নত কালো সমাজের প্রশাসনের অবসান হয়েছে। বলা যায়, এটা হচ্ছে বিশ্বের দাসপ্রথা বাতিল আন্দোলনের একটি অবিস্মরণীয় দিক। চীন দাসপ্রথা বাতিল আন্দোলনের জন্য চূড়ান্তভাবে তার সবচেয়ে বিরাট অবদান রেখেছে।'
গত ৫০ বছরে গণতান্ত্রিক সংস্কারের কারণে তিব্বতের রাজনীতি ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে আকাশ পাতাল পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারী তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নবম গণ কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রতি বছরের ২৮ মার্চকে 'তিব্বতের লাখ লাখ কৃতদাসের মুক্তি দিবস' হিসেবে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটা হচ্ছে তিব্বতী জনগণের প্রাণের অভিন্ন উত্সব। গবেষক ইয়াং জুন ছাই মনে করেন, 'এর মাধ্যমে কৃতদাসদের বর্তমান ও ভবিষ্যত বংশধররা এ গৌরবোজ্জ্বল উত্সবকে জীবনভর হৃদয়ে লালন করতে পারবে। এর বিশেষ প্রতীকি তাত্পর্যও রয়েছে। কারণ ১৯৫৯ সালের আগে তিব্বতের কৃতদাস প্রথা ছিল অবর্ণনীয় অমানুষিকতায় ভরা। ১৯৫৯ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার চালু হওয়ার পর তিব্বতের কৃতদাসরা সম্পত্তি লাভের পাশাপাশি মর্যাদার অধিকারী হিসেবে স্বাধীন নাগরিক এবং নিজেরা মালিকে পরিণত হয়েছেন। তিব্বতী জনগণ বস্তুগত ও মানসিক ভারসাম্যের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সব দিক থেকে সত্যি সত্যিই মুক্তি পেয়েছেন। এ থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, পৃথিবীর ছাদ বলে খ্যাত এ অঞ্চলটিতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।'
কিন্তু বিশ্বে সবসময়ই কিছু লোক থাকে, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা তথাকথিত 'তিব্বত সমস্যা' নিয়ে বড্ড বাড়াবাড়ি করছে। বিশেষ করে গত বছরের মার্চ মাসের পর বিদেশে নির্বাসিত দালাই লামা নিরন্তরভাবে দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে ইউরোপ সফর করতে যান। কয়েকটি দেশের উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিকরা বলতে গেলে জেদ করেই দালাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন এবং গুরুতরভাবে চীনা জনগণের হৃদয়ে আঘাত দিয়েছেন। ইয়াং জুন ছাই বলেছেন, 'পশ্চিমা দেশের কিছু কিছু লোক কখনোই তিব্বতে যান নি। তারা তিব্বতী জনগণের চাহিদা, তিব্বতী জনগণের জীবনযাপনের উন্নয়ন এবং তিব্বতের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিকাশ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তারা তিব্বত সমস্যা সম্পর্কে কেবল দালাইয়ের একতরফা কথা শুনে বা চীন বিরোধী শক্তির সঙ্গে যৌথভাবে তিব্বতের আসল সত্যকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। অন্য দিকে, পশ্চিমা দেশের কিছু উদ্দেশ্য প্রণোদিত রাজনীতিক বা ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইচ্ছে মতো তিব্বত উন্নয়নের সত্যকে অস্বীকার করছেন এবং তিব্বতের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর যা তা বলে বেড়াচ্ছেন। আমি মনে করি, তিব্বতকে ন্যায়সংগত খোলা চোখে দেখা হচ্ছে তিব্বতের মানবাধিকার রক্ষার চূড়ান্ত প্রতিফলন।'
চীনের তিব্বত বিদ্যা বিশেষজ্ঞরা পশ্চিমা দেশগুলোর মানুষকে তিব্বতে গিয়ে স্থানীয় প্রথা উপভোগ করা এবং স্বচোখে তিব্বতের ৫০ বছরের সংস্কারে অর্জিত সাফল্য দেখার জন্য উত্সাহ দিয়েছেন। চীনের তিব্বত বিদ্যা গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক অধ্যাপক দু ইয়োং বিন বলেছেন, 'পশ্চিমা দেশগুলোর অধিকাংশ মানুষ তিব্বত সম্পর্কে জানেন না। এটা পশ্চিমা দেশের ঐতিহ্যিক ধারণা ও মূল্যবোধের প্রভাবের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। তারা তিব্বত ও চীনের মূলভূভাগ এবং তিব্বতী জাতি ও হান জাতির তফাতের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু তিব্বতী জাতি ও হান জাতি এবং তিব্বত ও মূলভূভাগের অভিন্ন বিষয় অবহেলা করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর বিজ্ঞজনেরা সত্যিকার তিব্বতকে জানতে চাইলে তিব্বতে গিয়ে নিজের চোখে তাকে দেখতে হবে।' (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে) |