তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় লাসার পাচিয়াও রাজপথের একজন দোকানদার আমাদের সংবাদদতাকে বলেছেন , আপনারা মনে করবেন না যে , আমর তিব্বতীরা সহিংসতার পক্ষপাতী । বস্তুত আমরা শান্তিকে ভালোবাসি ।
গত বছরের মার্চ মাসে লাসার রাস্তায় একদল বদমাইশ দাংগাহাংগামা সৃষ্টি করেছিল । তবে একটি ওয়েবসাইটে কর্মরত তরুণী চোমা বলেছেন , তাদের আচরণ আমাদের তিব্বতীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না । আমরা সবাই শান্ত জীবন যাপন করতে চাই ।
গত বছরের আগস্ট মাসে চীনের অন্যান্য স্থানের জনসাধারণের মত তিব্বতীরাও পেইচিং অলিম্পিক গেমসের জন্যে একটি বড় দেশের নাগরিক হিসেবে গর্ব বোধ করেন । তিব্বতী মেয়ে ছিরেনওয়াংমু বার্ড নেস্টে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন । তিনি বলেন , বার্ড নেস্টে মাতৃভূমির প্রশংসার গানের সুর ভেসে আসলে আনন্দ ও আবেগে আমি আত্মহারা হয়ে যাই ।
এগুলোই হচ্ছে আজকের তিব্বতীদের জাতীয় বোধ । ইতিহাসের পাতা খুললে তিব্বতী জাতির দেশপ্রেমিক তত্পরতা সবাইকে বিমোহিত করে ।
তিব্বতের রিখাচেতে চিয়াং চি নামক একটি বীর শহর রয়েছে । চিয়াং চি শহরের চোং শান দুর্গের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি মহিমাময় " চিয়াং চি চোং শান বীরদের স্মৃতি সৌধ । সৌধটির বিবরণ আলাদা আলাদাভাবে হান , তিব্বতী ও ইংরেজী ভাষায় লেখা হয় । বিবরণটিতে এক শ' বছর আগে বৃটিশ আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে হান ও তিব্বতী জাতির সৈনিক ও জনসাধারণের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে ।
উনবিংশ শতাব্দির আশির দশকে বৃটিশরা সশস্ত্র শক্তি দিয়ে প্রথমবারের মত তিব্বতের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায় । লুংথু পাহাড়ে তিব্বতী বাহিনী ও বৃটিশ বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই হয় । তিব্বতী বাহিনী ধনুক , তলোয়াড় , বর্শা ও দেশীয় বন্দুক দিয়ে বৃটিশ বাহিনীর উন্নত বন্দুক ও কামানের মোকাবিলা করে । অবশেষে তিব্বতী বাহিনী হেরে যায় । এ অবস্থার প্রেক্ষাপটেও তখনকার তিব্বতী স্থানীয় সরকার রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়াই চালায় ।
৬ বছর পর সংঘটিত চিয়াং চি আত্মরক্ষামূলক লড়াই আরো তীব্র ছিল । সেসময় বৃটিশ বাহিনী চিয়াং চিতে আক্রমণ চালায় । চিয়াং চির চোং শান দুর্গে অবস্থানরত তিব্বতী বাহিনী ধনুক , বর্শা ও দেশীয় বন্দুক দিয়ে বৃটিশ বাহিনীর সংগে প্রবল লড়ায় লিপ্ত হয় । দুর্ভাগ্যবশত শত্রুদের কামানের গোলাবর্ষণে চোং শানের গোলাবারুদের গুদামের বিস্ফোরণ ঘটে । চোংশান দুর্গের হাতবদল হয় । চোং শান দুর্গে রক্ষাকারী তিব্বতী সৈনিকরা পাহাড় থেকে নীচের উপত্যকায় ঝাঁপিয়ে পড়ে শহীদ হন । এ ইতিহাসের ভিত্তিতে তৈরি হুং হে কু নামের ছায়াছবি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।
চীনের জাপ-বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় চীনা জাতির একটি সদস্য হিসেবে তিব্বতী জাতির জনসাধারণ একইভাবে পাশে বসে থাকেন নি ।
সেই ১৯৩১ সালেই নানচিংয়ে অবস্থানরত তিব্বতীরা পেচিং ও নান চিংয়ের তিব্বতীদের নিয়ে একটি জাপ-বিরোধী প্রতিরোধ স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন । সি খাংয়ের তিব্বতীরাও জাপ-বিরোধী প্রতিরোধ স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন ।
আজকের তিব্বতে সর্বত্রই তিব্বতীদের বাড়ির ছাদে চীনের পঞ্চ তারকা খচিত লাল পতাকা উত্তোলন করতে দেখা যায় । মাঝেমধ্যে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের পতাকাও টাংগাতে দেখা যায় । এ দৃশ্য তুষারাচ্ছন্ন তিব্বত মালভূমিতে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ।
যারা তিব্বতের ইতিহাস সম্পর্কে ভালো করে জানেন , তারা অবশ্যই জানেন যে, তিব্বতী জাতির দেশপ্রেমের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে । তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের সাচা বৌদ্ধ বিহারের পরিচালক পানতিয়ান তুন ইয়ু বলেন , আমাদের পুর্ব পুরুষের ওপর সম্মান প্রদর্শন করতে হবে । তারা যে পথ অনুসরণ করেছেন , আমরাও সেই পথ অনুসরণ করে যাবো । |