গত শতাব্দির নব্বইয়ের দশকে তিব্বতী যুবক তাওয়াছিরেন তিব্বতের স্থায়ী চাকরী ছেড়ে একাই ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি থেকে বেরিয়ে নতুন কাজ অন্বেষণের জন্যে চীনের অভ্যন্তরভাগে আসেন । সাধারণত তিব্বতীরা সহজে নিজেদের আবাসভূমি ছেড়ে বাইরে যেতে চান না । কাজেই তাওয়ার এ সিদ্ধান্ত তার বন্ধুবান্ধবকে অবাক করে দেয় ।
তাওয়া জীনের অভ্যন্তরভাগে মোট ৮ বছর কাজ করেছেন । তিনি পর পর বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এবং সিনচিয়াং ওইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ছাড়া চীনের সব প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে গিয়েছেন । তিনি বলেছেন , তুষারাচ্ছন্ন মালভূমির বাইরে পৃথিবী আমার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উন্মুক্ততার চেতনা এবং শ্রেষ্ঠ পেশাগত চরিত্র গড়ে তুলেছে ।
চীনের অভ্যন্তরভাগে আমার অভিজ্ঞতা যেমন আমার স্বপ্ন অন্বেলণের অভিযান , তেমনি আমার ধারণার রূপান্তরের অভিযানও বটে । আজ তাওয়া আবার তিব্বতে ফিরে গিযৈ তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী লাসা মোবাইল কোম্পানির একটি বিভাগীয় ম্যানেজার হয়েছেন । তার ৮ বছরের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে তাওয়া অপার সন্তোষ বোধ করেন ।
তাওয়া নিজের দুসাহসিকতা ও নিজের থাকা যুগের জন্যে গর্বিত । কেন না , এ যুগে প্রত্যেক লোকের অনেক স্বপ্ন থাকতে পারে এবং তারা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী জীবনযাপনের পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন । এটি তাদের বাবা মার বাঁধাধরা কীবনযাত্রা থেকে একেবারে আলাদা ।
১৯৯৫ সালে তাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন এবং তিব্বতের আ তোও জেলার পোস্ট অফিসে কাজ করেন । তার আশেপাশের লোকেরা তার এ কাজকে ইর্ষা করেন । কারণ এ পোস্ট অফিসে তিনি প্রায় তিন হাজার ইউয়ান বেতন পান । এটি তিব্বতের সাধারণ ইউনিটের কর্মচারীদের মাসিক বেতনের প্রায় দ্বিগুণ ছিল ।
এমন একটি চাকরী পাওয়ায় তাওয়ার মা লাপাও ছেলের জন্যে গর্বিত । তবে এ গর্ব মাত্র ৬ মাস স্থায়ী ছিল । কারণ তাওয়া পোস্ট অফিসের কাছে তার পদত্যাগপত্র পেশ করেন । তিনি আজীবন আ তোওয়ের মত একটি ছোট একঘেয়ে জায়গায় নিজেকে আবদ্ধ রাখতে চান না । তিনি শুধু উচ্চ বেতন চান না , তিনি আরো চান বই পড়তে এবং ফুটবল খেলতেও । কিন্তু আনতোও জেলায় লাইব্রুয়ারীও নেই , ফুটবল মাঠও নেই । তিনি মাতৃভূমির অভ্যন্তরভাগের সুন্দর নি:সর্গ ও চিবিত্র জীবন উপভোগ করতে উদগ্রীব ।
তাওয়া ছুং ছিং শহরে তার স্বপ্ন অন্বেষণের অভিযান শুরু করেন । তার প্রথম চাকরী ছিল একটি বাণিজ্যিক কোম্পানির জন্যে পণ্য সংক্রান্ত পোস্টার বিলি করা । তখন প্রতিদিন তাকে ২০ কিলোমিটার পথে হাটতে হতো । পরে তিনি একটি স্বাস্থ্য রক্ষা পণ্য কোম্পানির বাজার বিভাগে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরী পান । প্রদিদিন পণ্য বিক্রির জন্যে তাকে নানা হাসপাতাল ও ওষুধ দোকানে ঘোরাফেরা করতে হতো । তার কঠোর পরিশ্রম ও সাফল্যের জন্যে অল্প দিনের মধ্যেই তিনি এ কোম্পানির সিয়ান প্রদেশের তে ইয়াং শাখার বাজার ম্যানেজার পদে নিয়োগ পান ।
মাতৃভূমির অভ্যন্তরভাগে আট বছরের মধ্যে তাওয়া নিজের মাতৃভূমি ভ্রমণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন কারতে সক্ষম হন । সিনচিয়াং ওইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ছাড়া তিনি সারা দেশের সব প্রদেশের প্রধান প্রধান এলাকায় গিয়েছেন । প্রতিটি শহরে গিয়ে তিনি বড় বড় রাস্তা ও ছোট ছোট অলিগলিতে হেটে হেটে স্থানীয় রীতনীতি অনুভব করেন ।
ভ্রমণ ছাড়া তাওয়া মনে করেন যে , মাতৃভূমিতে তার সবচেয়ে অর্জন হচ্ছে তার মতাদর্শগত ধারণা ও চিন্তার পদ্ধতির পরিবর্তন । চীনের সংস্কার ও উন্মক্তকরণের সম্মুখফ্রন্টে অবস্থিত কুয়াং তুং প্রদেশ ও শাংহাই শহরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংস্কারা তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । বিদেশী বিনিয়োজিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তিনি সত্যিকার ব্যবস্থাপনা ও কার্যকারিতা দেখতে পেয়েছেন ।
তাওয়া বলেছেন , এসব নতুন ধারণা থেকে আমি দারণভাবে উপকৃত হয়েছি । তাই ২০০৩ সালে পারিবারিক কারণে তিব্বতে ফিরে ওঊয়ার পর তিনি কয়েক দিনের মধ্যে লাসা মোবাইল কোম্পানির একটি বিভাগীয় ম্যানেজার পদে নিয়োগ পেয়েছেন । |