তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তুইলুংতেছিং জেলার নাইছুং থানায় বৈজ্ঞনিক পদ্ধতিতে ফুল ও সবজি চাষের জন্য তিব্বতী কৃষকদের প্রশিক্ষণের একটি সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সমিতি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরবর্তী তিন বছর ধরে ফসলের রকমারি রদবদলের জন্য স্থানীয় কৃষকদের সাহায্য করা হয়েছে এবং ফুল ও সবজি চাষের ওপর নির্ভর করে দারিদ্র্য দূরীকরণ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী লাসা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তুইলুং তেছিং জেলার নাইছুং থানা অবস্থিত। সংবাদদাতার চোখে পড়ল স্বচ্ছ প্ল্যাস্টিকের আবরণের কৃষি জমিতে বৈচিত্র্যময় সবজি ও ফুল চাষ করা হচ্ছে। এতে সবুজের ব্যাপক উত্ফুল্লতা দেখাচ্ছিল। এর আগে এখানকার বেশির ভাগ কৃষকরা প্রধানতঃ যব চাষ করতো। কৃষি উত্পাদন খুব অনুন্নত ছিল। ২০০৪ সালে লাসার বাজারগুলোতে সবজি ও ফুলের চাহিদা মেটানোর জন্য নাইছুং থানার স্থানীয় সরকার সবজি ও ফুল উত্পাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে তিব্বতী কৃষকদের আয় বাড়ানো যায়। এর পাশাপাশি সবজি ও ফুল সমিতিও প্রতিষ্ঠিত হয়। কারিগরদের নিয়ে গঠিত এ সমিতির দায়িত্ব হচ্ছে তিব্বতী কৃষকদের প্রযুক্তি শেখানো এবং সবজি ও ফুল বিক্রির জন্য কৃষকদের সাহায্য করা। সমিতির ম্যানেজার চু চিন শান বলেন,
প্রথমে কৃষকরা সমিতিতে যোগ দিতে চাইতো না। জেলার সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের উত্সাহে ১১টি কৃষক পরিবার সমিতিতে যোগ দেয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা সবজি চাষের প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে।
নাইছুং থানার সবজি ও ফুল সমিতি তুইলুং তেছিং জেলা ও নাইছুং থানার প্রকৌশলী এবং স্থানীয় তিব্বতী কৃষকদের নিয়ে গঠিত। এ পর্যন্ত এ সমিতির ১০৫ জন সদস্য রয়েছে। সমিতির উদ্যোগে স্বচ্ছ প্ল্যাস্টিকের আবরণের ১১টি কৃষি জমিতে সবজি চাষ করা হয়। এ ১১টি কৃষি জমির চাষ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সদস্য হিসেবে ১১টি কৃষক পরিবারকে দেয়া হয়। সমিতির উদ্যোগে সবজি চাষের জন্য তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়।
লোটসুল ও তার পরিবার এদের মধ্যে একটি। প্রথমে লোটসুল সবজি চাষের ক্ষেত্রে কিছুই জানতো না। সমিতির প্রকৌশলী তাকে সবজি চাষের প্রযুক্তি শিখিয়েছেন। লোকসুল বলেন,
সবজি চাষ করতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার জন্য পেইচিং থেকে একজন বিশেষজ্ঞ এসেছেন। লোটসুল তার কাছ থেকে তিন বছর ধরে প্রযুক্তির ব্যবহার শিখেছে।
প্রকৌশলী নিয়োগ এবং নানা রকম প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করার মাধ্যমে নাইছুং থানার সবজি ও ফুল সমিতির বেশ উপকার হয়েছে। চাষের বিষয়ে কৃষকদের সমস্যারও সমাধান হয়েছে। ২০০৮ সালে লোটসুলের আয় ৫ হাজার ইউয়ান বেড়েছে। সবজি চাষের কৌশল নিয়ন্ত্রণের পর লোটসুল নিজের পরিশ্রম ও সংশ্লিষ্ট সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্যের উপর নির্ভর করে আরো বেশি সবজি চাষ করেছে। এখন তিনি একটি নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছেন এবং মাল পরিবহনের জন্য সে একটি গাড়িও কিনেছেন।
সবজি চাষের প্রযুক্তি শেখার জন্য লোটসুল আরো বেশি গ্রামবাসীদের সবসময়ই পরামর্শ দেন। বহু কৃষক সমিতির কাছে প্রযুক্তির ব্যবহার শিখতে চেয়েছে। সবজি চাষের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিব্বতী মহিলা সোনাম বলেন,
সে এখানে এসেছে দু'বছর হল। আগে সে জন্মভূমিতে চাষ করতো। এখানে আসার পর সে স্বচ্ছ প্ল্যাস্টিকের আররণের জমিতে যব চাষ শুরু করেছেন। চাকরি করার জন্য সে মাঝে মাঝেই বাইরে যেতেন। তার প্রভাবেই বেশ কিছু কৃষক সমিতির কাছে চাষের উন্নত প্রযুক্তি শিখতে চেয়েছে। তার বার্ষিক আয় ৪০ হাজার ইউয়ান।
নিজের সবজি চাষের অবিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সোনাম উত্ফুল্ল হয়ে উঠে। বোঝা যায়, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ তার পরিবারের জন্য বিপুল আয় বয়ে এনেছে
তিব্বতী মহিলা ড্রোলকারের বয়স চল্লিশ বছরেরও বেশি। তার বড় ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। আগে দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার ফি জমা দেয়ার জন্য প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ধার নিতে হতো। গ্রীন হাউসে সবজি চাষের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির কথা শুনে ড্রোলকার সমিতিতে এসেছে। সে বলেছে,
আগের চেয়ে সবজি চাষে আয় এখন অনেক বেশি। সন্তানের লেখাপড়া ফি জমা দেয়ার কোন সমস্যা নেই। সে এখন প্ল্যাস্টিকের আবরণের কৃষি জমিতে টমেটো ও সবুজ মরিচ চাষ করছে। সে এ ধরণের চাষের পরিকল্পনাকে আরো সম্প্রসারণের চেষ্টাও করবে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ১০৫টি কৃষক পরিবার সমিতিতে যোগ দিয়েছে। প্রত্যেক পরিবারের বার্ষিক আয় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ইউয়ান বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশ কিছু গ্রামবাসীদের নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে নাইছুং থানার সবজি ও ফুল সমিতি ফুল, পশুপালন ও হাঁসমুর্গী পালন ভিত্তিক একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সমিতির সবজি চাষ কেন্দ্রে বছরে ১৪ লাখ কিলোগ্রাম সবজি উত্পন্ন করা হচ্ছে। এ সমিতি এখন তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দূষণমুক্ত সবজি উত্পাদনকারী কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সমিতির পণ্য বিক্রি সংক্রান্ত একজন ম্যানেজার চু জিং শান বলেন, চীনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ সমিতির তিন ধরণের সবজিকে দূষণমুক্ত সবজি বলে নির্ধারণ করা হয়েছে।
সমিতির উদ্যোগে দূষণমুক্ত সবজি উত্পাদন করা হয়। এ পর্যন্ত সমিতির উত্পাদিত লাউ, টমেটো ও সবুজ গোল মরিচকে দূষণমুক্ত সবজি বলে নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, কিছু দিন আগে সবজি বিক্রির জন্য পেইচিংয়ের একটি কোম্পানির সঙ্গে সমিতির একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ চুক্তি অনুযায়ী, পেইচিং অলিম্পিক গেমস চলাকালে এ সমিতির সবজি উত্পাদন কেন্দ্র থেকে উত্পন্ন বিবিধ দূষণমুক্ত সবজি বিপুল পরিমাণে পেইচিংয়ে পাঠানো হবে। তখন পেইচিংয়ে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের ক্রীড়াবিদরা সুদূর লাসা থেকে পাঠানো টাটকা সবজি খেতে পারবেন। |