ছাংমো তিব্বতে প্রচলিত একটি প্রাচীন ধর্মীয় নৃত্য, ছাংমো নৃত্যকে জাদুকরের নাচও বলা হয় , তিব্বতের বিভিন্ন স্থানের বৌদ্ধ-মন্দিরে সাধারণত: সন্ন্যাসীরা ছাংমো নৃত্য পরিবেশন করে।
কথিত আছে , সপ্তম শতাব্দিতে বৌদ্ধধর্ম যখন ভারত, নেপাল ও চীনের অন্যান্য অঞ্চল থেকে তিব্বতে বিস্তৃত হয়। ভুত ও অপদেবতা তাড়ানোর জন্য তিব্বতের সন্ন্যাসীরা তিব্বতের স্থানীয় রীতিনীতি জ্ঞাপক নৃত্য, বোন ধর্মাবলম্বী ওঝার নৃত্য ও ভারতের যোগ সম্প্রদায়ের মুখোশ পরা দৈব নৃত্যের সমন্বয়ে যে একটি ধর্মীয় নৃত্য সৃষ্টি করেছিল তা হলো ছাংমো নৃত্যের আদিম রূপ ।
ছাংমো নৃত্য একক ,দ্বৈত ও দলবদ্ধভাবে পরিবেশন করা যায় । পরিবেশনের সময় সংগীত বাজানো হয় , নৃত্যশিল্পীরা মুখোশ ও আলখাল্লা পরে , হাতে ধরে ছরি ও ঢাল, গায়ে জড়ানো হয় রংগীন ফিতা ।তিব্বতের বৌদ্ধধর্মের অনেক সম্প্রদায় আছে , ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ঈশ্বর ও রক্ষা দেবতা ।তাই পূজা-পার্বণের দিন-ক্ষণ ও প্রণালী, নৃত্যের কলাকৌশল এবং নাচিয়েদের পোশাকও আলাদা ।
লাসা এলাকায় প্রতিবছর তিব্বতী চান্দ্রবর্ষের ২৯ ডিসেম্বর দেবতা পুজা করা হয় ,এই দিনে জোখাং মন্দির ও পোতালা প্রাসাদে ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় এবং ধর্মীয় নৃত্য পরিবেশিত হয় । নৃত্য পরিবেশের আগে লামারা ধর্মীয় শাস্ত্র পাঠ করে এবং দেবতার নামে পশু বলি দেয় ।তবে এখন আর সত্যিই সত্যিই কোনো পশু হত্যা করা হয় না , পশু হত্যার বদলে শুধু পাত্র বা মাটির উপর পশুর ছবি এঁকে দেবতাকে উত্সর্গ করা হয় ।
তিব্বতের সিগাজে এলাকায় প্রতিবছর তিব্বতী চান্দ্রবর্ষের জুলাই মাসের প্রথম দিকে তাসিবহুনপো মন্দিরে লামাদের ধর্মীয় নৃত্য ছাড়া তিব্বতী নাটক, সিংহের নাচ ও চমরী গাইনৃত্য ও পরিবেশন করা হয় ।
বৌদ্ধধর্ম ছাংমো নৃত্যের প্রধান উপজীব্য। ছাংমো নৃত্য পরিবেশনের সংগে সংগে পরম করুণাময় বুদ্ধদেবের জীবনের অবলম্বে লেখা জাতকের গল্প বর্ণনা করা হয় । তা ছাড়া অনুষ্ঠানে অমঙ্গল সাফ করে নতুন বছরের মঙ্গলও প্রার্থনা করা হয় ।
তিব্বতের বৌদ্ধধর্মের অবিরাম বিস্তৃতির সংগে সংগে ছাংমো নৃত্যও তিব্বতের বাইরে তিব্বতী জাতি অধ্যুষিত অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তার আলাদা নামও হয়েছে ,তবে ভুত তাড়ানো ও মঙ্গল প্রার্থনার জন্য নৃত্যের অনুষ্ঠান অপরিবর্তিত রয়েছে ।
( পাই খাই ইউয়ান ) |