দক্ষিণ পূর্ব তিব্বতের লিন জি জেলা তিব্বতের সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামল ভূমি বলে পরিচিত । লিন জির জলবায়ু উষ্ণ আর আর্দ্র, প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম । লিন জি ছিন হাই –তিব্বত মালভূমির সবচেয়ে নিচু এলাকা। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে লিন জির গড় উচ্চতা তিন হাজার মিটার মাত্র । কোনো কোনো স্থানের উচ্চতা মাত্র নয় শ'ন' মিটার । এখানকার বাসং হ্রদের সৌন্দর্য্য সুইজারল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমতুল্য । ইয়ালুজাংপু নদীর উপত্যকা পৃথিবীর বৃহততম উপত্যকা। বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে সেজিলা পর্বতে অজস্র আজেলিয়া ফুল ফুটে বাসং হ্রদের আরেকটি নাম হলো জুওকা ।তিব্বতী ভাষায় জুওকার মানে হলো সবুজ পানি । জুওকা হ্রদের পানি এত পরিস্কার যে, পানিতে হ্রদ ঘেরা বরফাচ্ছন্ন পর্বতের প্রতিবিম্ব স্পষ্টভাবে দেখা যায় । শরতকালে জুওকা হ্রদের নৈসর্গিক দৃশ্য সবচেয়ে মনোরম । হ্রদের তীর অসংখ্য গাছের সোনালি ও লাল পাতায় ছেয়ে যায় । বসন্তকালে জুওকা হ্রদের আবহাওয়া যেমন শীতল তেমনই আদ্র । কিন্তু গ্রীষ্মকালে জুওকা হ্রদের তীর চিত্তবিনোদনের চমত্কার জায়গা । সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে জুওকা হ্রদের গড় উচ্চতা সাড়ে তিন হাজার মিটার । দৈর্ঘ্য প্রায় বারো কিলোমিটার , প্রস্থ কোনো কোনো জায়গায় কয়েকশ' মিটার ,কোনো কোনো জায়গায় কয়েক হাজার মিটার । জুওকাও হ্রদের সর্বাধিক গভীরতা ষাট মিটার। এর আকৃতি দেখতে গভীর উপত্যকায় খচিত অর্ধচন্দ্রের মত ।তীর থেকে একশ' মিটার দূরে জাসি নামে একটি ছোট দ্বীপে একহাজার বছর পুরানো একটি মন্দির আছে । জুওকাও হ্রদের দক্ষিণ তীরের একটি ঝর্নার অদূরে ছিওজি নামে একটা রহস্যময় গুহা আছে ।কথিত আছে , নি:সন্তান নারী এ গুহায় এসে দেবতার কাছে পুত্রসন্তানের জন্য প্রার্থনা করলে দিনখানিক পর সে গর্ভবতী হবে । ছিনহাই-তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত ইয়ালুজাংপু নদীর উপত্যকার গড় উচ্চতা তিন হাজার মিটার । ইয়ালুজাংপু নদীর অনেকাংশের দুধারে লম্বাকৃতির খাড়া পর্বত দাঁড়িয়ে আছে বলে সেখানে হেঁটে যাওয়ার উপায় নেই । তাই আজ পর্যন্ত কেউ গোটা উপত্যকারটির ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে সক্ষম হয় নি । ইয়ালুজাংপু নদী হিমালয়ের পূর্ব প্রান্তে হঠাত দক্ষিণ দিকে মোড় ফিরে ভারত আর বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বংগোপসাগরে গিয়ে পড়েছে । ইয়ালুজাংপু নদী যেখানে বাঁক নেয় সেখানকার নানগাপাওয় পর্বতের উচ্চতা ৭৭৮৭ মিটার । উচ্চতার দিক থেকে নানগাপাওয়া পর্বত পৃথিবীর পঞ্চদশ স্থানে রয়েছে । স্থানীয় তিব্বতীরা নানগাপাওয়া পর্বতকে নীল আকাশ ভেদ করা বর্শা বলে অভিহিত করে । নানগাপাওয় পর্বতের গাছগাছালির নিবিড় ছায়ায় প্রচ্ছন্ন পাদদেশে বহু গরম পানির ঝরনা আছে । সেখানে যেমন পর্বাতারোহন করা যায় তেমনি চিত্তবিনোদনের জন্য ছুটি কাটানো যায় । আজেলিয়া ফুল লিন জি জেলার পূর্বাংশের সেজিলা পর্বতের একটি বিশেষতা । সেজিলা পর্বতের যে অংশের উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৯০০ থেকে ৫৩০০ মিটার সেখানে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে ২৫ প্রজাতির অজস্র আজেলিয়া ফুল ফোটে । পাদদেশ থেকে শৃঙ্গ পর্যন্ত হলুদ , সাদা ,বেগুনী ,লাল,গোলাপী ইত্যাদি নানা রংয়ের নানা রুপের আজেলিয়া ফুলের অপূর্ব রং ও সমারোহ দেখলে পর্যটকদের মন নেচে ওঠে ।৪৭০০ মিটার উচুঁ সেজিলা পর্বতে আরোহন করলে সূর্যোদয় , মেঘের সাগর , অসীম বনাঞ্চল এবং নানগাপাওয়া পর্বতের মহিমাময় শৃঙ্গ পরিস্কারভাবে দৃষ্টিগোচর হয় ।
|
|
|
|
|
অন-লাইন জরীপ |
|
|
|