নাটকের নৃত্যও তিব্বতী নৃত্যকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।
লোক নৃত্যের সংগে তিব্বতী নাটকের নৃত্যের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক । কিন্তু তা লোকনৃত্যের মত সহজ ও ইচ্ছাকৃত নয় এবং তিব্বতের সবাই লোকনৃত্যের মত নাটকে নৃত্য পারে । তিব্বতের বেশীর ভাগ লোকনৃত্য আত্মবিনোদনের জন্য , কিন্তু নাটকের নৃত্য পরিবেশিত হয় প্রধানত: দর্শকের মনোরঞ্জনের জন্য। নাটকের নৃত্যের যেমন আছে পরিবেশনের বিশেষ প্রণালী তেমনই আছে বাঁধাধরা নৃত্যভঙ্গিমা ও চরিত্রের সংগে সামঞ্জ্যপূর্ণ দৈহিক গতিভঙ্গী ।
তিব্বতী নাটকের নৃত্যের যেমন আছে ধীর পদক্ষেপ ,তেমনই আছে তেজদৃপ্ত পদক্ষেপ এবং চপল আর দ্রত পদক্ষেপ । যেমন আছে সরল প্রাণ চরিত্রের দৈহিকভঙ্গী তেমনই আছে হিংস্র আর ধূর্ত চরিত্রের দৈহিকভঙ্গী। সুতরাং নৃত্য শিল্পীদের মুদ্রা, পদক্ষেপ ও নৃত্যভঙ্গিমা দেখে বোঝা যায় , সে সত্ মানুষ না দুষ্কৃতকারীর ভুমিকায় অভিনয় করে ।
তিব্বতী নাটকের অনেক নৃত্যভঙ্গিমা শ্রম ও দৈনন্দিন জীবনের সংগে সম্পৃক্ত । যেমন তীর ছুঁড়ে পশু শিকার ,সুতা পাঁকানো, নৌকায় বৈঠা টানার অনুকরণে নৃত্যভঙ্গিমা দেখানো হয় । এ সব ভঙ্গিমা যেমন ঘন জীবনরসে পরিপূর্ণ তেমনই শৈল্পিক কল্পনায় অতিরঞ্জিত। তা থেকে সুষম সুকোমল সৌন্দর্যের আস্বাদন পাওয়া যায় ।
তিব্বতের এক কিংবদন্তীতে বলা হয় , তিব্বতের একজন রাজা একদিন পেইচিংয়ে রাজ দরবারে গিয়ে সসম্ভ্রমে চীনা সম্রাটকে সালাম জানালে সম্রাট তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন , তিব্বতীরা কীভাবে জীবনযাপন করেন ? তিব্বতী রাজা উত্তর না দিয়ে নিরবে তীর ছোঁড়া ও সুতা পাঁকানোর ভঙ্গি দেখালেন । তা দেখে সম্রাট বিড় বিড় করে বললেন ,তিব্বতীরা পশু শিকার করে এবং কাপড় বোনে ।
তিব্বতী নাটকের অভিনেতারা নীল মুখোশ ও সাদা মুখোশ পরে । অভিনেতারা সাধারনত: উত্সব পালনের সময় সাদা মুখোশ এবং ভাবগম্ভীর আখড়ায় নীল মুখোশ পরে ।নাটক পরিবেশনের সময় মুখোশের অভিব্যক্তি অপরিবর্তিত । তবে মুখোশ পরা-অভিনেতারা নৃত্যভঙ্গিমার সাহায্যে চরিত্রের মনোবৃত্তি প্রকাশ করতে পারে । মুখোশ পরা-অভিনেতারা মাথা ঘোরাতে ঘোরাতে চরিত্রের সাহসিকতা দেখায় । আর ডানে বামে মাথা দোলানোর মানে হলো ,সে হাসছে । মুখ উঠানো-নামানোর মানে হলো সে খুব খুশী এবং অন্যদের প্রস্তবে সম্মতি জানচ্ছে । মাথা বুকের উপরে নত করার মানে হলো ,সে সালাম জানাচ্ছে । মুখোশ হলো তিব্বতী নাটকের একটি অরিহার্য উপকরণ । তাই তিব্বতী নাটককে মুখোশের নৃত্য বলা হয় । (পাই খাই ইউয়ান) |