‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ২১
2023-06-06 16:30:21

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে  

১। চীন ধারণার চেয়েও অনেক সুন্দর : সোহেল হোসাইন

২। আকর্ষনীয় পর্যটন গন্তব্য লাওইয়ুহ ন্যাশনাল ওয়েট ল্যান্ড পার্ক

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ২১তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।    

 

১। চীন ধারণার চেয়েও অনেক সুন্দর : সোহেল হোসাইন

চীন ধারণার চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর। মাত্র দুই মাস থেকে এমনই অনুভূতির কথা জানিয়েছেন চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী সোহেল হোসাইন।

বাংলাদেশের শেরপুরে জন্ম সোহেল হোসাইনের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কালচার ডিপার্টমেন্ট থেকে অনার্স শেষ করে স্কলারশিপ নিয়ে চীনের কুয়াংসি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন তিনি।

 

সোহেল হোসাইন

বর্তমানে থাকছেন চীনের কুয়াংসি প্রদেশের নাননিং শহরে। সেখানে থেকেই এরইমধ্যে ঘুরেছেন বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থানে।

বন্ধুদের সাথে সোহেল হোসাইন

তিনি বলেন, আমি দুই মাসে কুয়াংসি প্রদেশের কয়েকটি লেক, চিড়িয়াখানা ,ইকো পার্ক ও পাহাড়ে গিয়েছি। চীনের সবকিছু এতো সুন্দর ঘুরতে খুব ভালো লাগে। এসব জায়গায় ঘুরতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে চীনা স্থাপত্যশৈলী। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো।এছাড়া ঝুলন্ত কাঁচের সেতুতে উঠার অভিজ্ঞতা রোমাঞ্চকর ছিল। বন্ধুরা মিলে উপভোগ করেছিলাম। ছবি তুলেছি”।

 

ঐতিহ্যবাহী বিনোদন কেন্দ্র নাননিংচিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সোহেল বলেন,  রাতের বেলা চীনের ঐতিহ্যবাহী জিনিসের প্রদর্শনী হয়। এখানে দেখেছি হানফু পোশাক, ড্রাগন, পান্ডা, ডড়াম বাজানো, চীনা উপকথার নানা প্রানীর ভাস্কর্‍্য ,ঐতিহ্যবাহী আসবাবপত্র ও নানা চীনা খাবার। এই জায়গাটা আমার খুব ভালো লেগেছে ।কেননা আমি একজন সংস্কৃতিপ্রেমী। “

এছাড়া বিভিন্ন পাহাড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও হয়েছে সোহেল হোসাইনের। সামনের দিনগুলোতে চীনের মহাপ্রাচীর , ঝুলন্ত কাচের সেতু , ফরবিডেন সিটি দেখার ইচ্ছা আছে তার।

সোহেল হোসাইন

“ ঘুরাঘুরা কিংবা পড়াশুনা চীন দুইদিক থেকেই এগিয়ে। সেখানে খুব সহজেই টুরিস্ট ভিসা এবং স্টুডেন্ট ভিসাও পাওয়া যায়। চীন সরকার বিভিন্ন স্কলারশিপও দিয়ে থাকে।  এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ব র‍্যাংকেও খুব এগিয়ে। এছাড়া চীন খুব সাজানো গুছানো।তাই আমি মনে করি যারা চীনে আসতে চান তারা নির্দিধায় চীনে ঘুরে যেতে পারেন”

চীন সম্পর্কে আগে থেকেই খুব স্পষ্ট ধারণা থাকার কারণে চীনে গিয়ে কোন সাংস্কৃতিক ধাক্কা খেতে হয়নি তার। খুব ভালোভাবেই সেদশের মানুষ, তাদের জীবনযাত্রা, ভাষা ও খাবারের সাথে মানিয়ে নিয়েছেন তিনি।  

 

সাক্ষাৎকার গ্রহণ- আফরিন মিম

 

২। আকর্ষনীয় পর্যটন গন্তব্য লাওইয়ুহ ন্যাশনাল ওয়েট ল্যান্ড পার্ক

চীনের ইউননান প্রদেশের তিয়ানশি লেক। অপূর্ব সুন্দর এই লেককে ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকটি সিনিক স্পট। তারমধ্যে একটি জলাজঙ্গলের বিচিত্র প্রাণীদের অভয়ারণ্য লাওইয়ুহ ন্যাশনাল ওয়েট ল্যান্ড পার্ক। জায়গাটা মূলত সোয়াম্প বা জলাজঙ্গল। সেই সোয়াম্প ফরেস্টকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে রেখেছে নগর কর্তৃপক্ষ।

কুনমিং শহরের ভিতর দিয়ে চারটি নদী প্রবাহিত হযেছে। এই নদীগুলো তিয়ানশি লেকে গিয়ে পতিত হয়। এর একটি হলো ফিশরিভার বা লাওইয়ুহ। ফিশরিভার যেখানে তিয়ানশি লেকে পড়েছে সেই মোহনাতেই গড়ে উঠেছে পার্ক। তিয়ানশি লেক পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল হিসেবেও বিখ্যাত। আরও আছে লেকের স্থায়ী বাসিন্দা গাঙচিলের ঝাঁক। এই জলাভূমি পার্কে, লেকের তীরে গাঙচিলের খেলা যেমন দেখা যায় তেমনি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে অনুভব করা যায় প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্য।

বড় বড় গাছ ও ঝোঁপ। ভিতর দিয়ে ছোট ছোট জলধারা বয়ে চলেছে। জোয়ারের সময় পুরো অরণ্যর মাটি ডুবে যায় জলে। গাছগুলো দাঁড়িযে থাকে জলের মধ্যে। এই আরণ্যক জলাভূমির ভিতর দিয়ে চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে কাঠের পাটাতন। পাটাতনগুলো এমনভাবে তৈরি যেন তা প্রকৃতির স্বাভাবিক বিকাশকে রুদ্ধ না করে।

এই জলাজঙ্গলের ভিতরে দেখা যায় অজস্র মাছ।ছোট ছোট মাছ যারা লেক থেকে এসে নদীর ভিতরে ডিম পাড়ে। ব্যাঙ এবং আরও কিছু উভচর প্রাণী দেখা যায়। কাঠবেড়ালী তো আছেই। শামুক, ঝিনুক আছে নানা প্রজাতির। আছে বিভিন্ন রকম ফার্ন উদ্ভিদ। বেশ অনেক ধরনের শৈবাল। উঁচু উঁচু গাছের মাথায় সূর্যকিরণ এসে পড়লেও অরণ্যর ভিতরটা সবসময় ছায়াময়।

লেকের তীরে আছে কাশবন। অজস্র কাশবন। কাশবনের ভিতর দিয়ে চলার জন্য কাচামাটির সরু পায়ে চলা পথ। এই পথের বাইরে পা ফেলা নিষেধ। কারণ তাতে উদ্ভিদ ও ক্ষুদ্র প্রাণীদের ক্ষতি হতে পারে। লেকের তীর থেকে একদিকে দেখা যায় বিখ্যাত সিশান পাহাড়।

লেকের তীর এবং পাহাড় পর্যন্ত যাওয়ার জন্য রয়েছে হাঁটা পথ। এর উপর দিয়ে বিচ-সাইকেল চালানোর ব্যবস্থা রয়েছে। যদি বৃদ্ধ, শিশু ও প্রতিবন্ধীরা দীর্ঘপথ না হাঁটতে পারেন সেজন্য রয়েছে বিশেষ ধরনের বাহণ। কোন রকম জ্বালানী ছাড়া প্যাডেল করে চালাতে হয়। সব রকম জ্বালানীযুক্ত যানবাহণ এখানে নিষিদ্ধ। লেকের তীর থেকে একটু দূরে ফাঁকা জায়গায় রয়েছে খাবারের জায়গা।

 

এখানে সুভ্যেনিরের দোকানও রয়েছে। এই পার্কে পাবলিক বাসে করে যাওয়া যায় একেবারে পার্কের গেট পর্যন্ত। এখানে লেকের জলে ঘোরার জন্য নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। পার্কের ভিতরে কয়েকটি ছোট ছোট লেক রয়েছে যা মূল তিয়ানশির সঙ্গে সংযুক্ত। এই ছোট লেকগুলোতে নানা রকম ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা আছে। চাইলে এখানে মাছ ধরার ছিপও ভাড়া নেয়া সম্ভব। রেস্টুরেন্টের পাশেই রয়েছে শিশুদের জন্য আ্যমুজমেন্ট পার্ক। এই অ্যামুজমেন্ট পার্কও ফ্রি।

 

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী