বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা- একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
2022-09-16 19:40:48

সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, জনগণের স্বাস্থ্যসেবার নামে দেশে কোনো ব্যবসা চলবে না। জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাউকে ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। সরকার ইতোমধ্যে প্রায় দুই হাজার হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার একটি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর সংক্ষেপে দৃষ্টি দেওয়া হবে।

হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, যেসব স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠান সেবা দিয়ে থাকে, তারা সঠিক নিয়মে সেবা না দিলে সরকার তাদের কাজ করতে দেবে না। দেশের সরকারের নিয়মকানুন আছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সবিহীন পরিচালনা করা যাবে না। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সারাদেশে প্রায় দুই হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা লাইসেন্স নবায়ন না-করে এবং সঠিক যন্ত্রপাতি-জনবল না-থাকলে তাদের কাজ করার সুযোগ দেয়া হবে না।

স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পর এসে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার আসলে কী অবস্থা? চলুন দেখি।

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত তথ্য বাতায়নে যা বলা হয়েছে তা হলো এমন। স্বাস্থ্য সেবায় সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, বিভিন্ন এনজিও ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সরকারি খাতে, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা এবং ব্যষ্টিক এবং সামষ্টিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ব্যাপারে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। মন্ত্রণালয়ের অধীনে চারটি অধিদপ্তর যথাক্রমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, নার্সিং সেবা পরিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নাগরিকদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকে।

স্বাধীনতার পর হতে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সেবার উপর প্রভূত কাজ হয়েছে। সরকার সকল জনগণ বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর  মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করার লক্ষে স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে।স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রজনন স্বাস্থ্যসহ পরিবার পরিকল্পনার বর্তমান অবস্থা বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রবীণদের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং শারীরিক, সামাজিক, মানসিক ও আত্মিক সুস্থতার ক্ষেত্রে টেকসই উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাত (এইচএনপি) সেক্টরের মূল লক্ষ্য। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি, জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতি এবং জাতীয় জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

 

অন্যদিকে, দেশের গণমাধ্যমের নানা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এত অগ্রগতির পরেও বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। তৃণমূল পর্যায়ের হাসপাতালে দেখা যায়, উপজেলা হাসপাতালে পদ আছে, কিন্তু বেশিরভাগ পদ খালি। হাসপাতালের ভর্তি রোগীরা প্রায় সব ওষুধ বিনা পয়সায় পান, কিন্তু বহিঃবিভাগ রোগীদের জন্য ওষুধ বরাদ্দ নেই বললেই চলে। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিষেশায়িত হাসপাতালে অনেক বেশি রোগীর ভিড় থাকায় রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া যায় না। এ কারণ উপজেলা হাসপাতালে রোগীরা ডাক্তার পায় না, ঠিকমতো ওষুধ পায় না, ফলে তারা জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে যেতে বাধ্য হয়। রোগীর ভিড় থাকায় মানসম্মত চিকিৎসা হয় না। জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলো চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করতে পারলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগীর মানসম্মত চিকিৎসা জেলা/উপজেলা হাসপাতালে দেওয়া সম্ভব। এজন্য উপজেলা, ইউনিয়ন ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে রোগীর সেবার মানের মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। অর্থনৈতিক সুব্যবস্থাপনা দ্বারা দেশ এগিয়ে চলেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেড়েছে, কৃষিতে উন্নয়ন সাধন হয়েছে, শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে, সর্বস্তরে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে, সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করা যাবে।

বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত জনবল নেই, এক হাজার ৫৮১জন লোকের জন্য রয়েছেন একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক। গ্রামীণ, প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলে চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সের অভাব প্রকট। অনেক সরকারি হাসপাতালে সরঞ্জাম থাকলেও প্রযুক্তিবিদের পদে লোক থাকে না।

এ অবস্থায় স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের অন্যতম সমস্যা হলো ‘অব্যবস্থাপনা’। দেশে পেশাদার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সবচেয়ে বেশি জরুরি। পাশাপাশি প্রয়োজন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানসম্মত পুনর্গঠন।