গম রপ্তানির ওপর ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার বৈশ্বিক প্রভাব
2022-05-16 19:11:58

১৩ মে ভারত সরকার বিদেশে গমের রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। ব্যাপারটা অনেককেই অবাক করেছে। কারণ, চলতি বছর এক কোটি টন গম রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল নয়াদিল্লী। এখন সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার আগেই রপ্তানি-নিষেধাজ্ঞা জারির খবর এলো।

ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যিক ব্যুরো জানিয়েছে, ভারতে মুদ্রাস্ফীতির কারণে খাদ্যশস্যের দাম অনেক বেড়েছে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারেও খাদ্যশস্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে, ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলোর খাদ্যনিরাপত্তার ওপর বড় হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটেই গম রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে নয়াদিল্লী।

আসলে হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ভারতের গম রপ্তানির পরিমাণ ছিল রেকর্ড ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টন। চলতি এপ্রিল ও মে মাসে গম রপ্তানির চুক্তির পরিমাণও ২৯ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। গম রপ্তানি ভারতের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। তবে, ভারতে গমের মজুত গত বছরের তুলনায় চলতি বছর অনেক হ্রাস পেয়েছে, যা উদ্বেগজনক।

এর পাশাপাশি চরম উষ্ণতার কারণে চলতি বছর ভারতে গম উত্পাদন খানিকটা হ্রাসও পেয়েছে। রপ্তানির দাম বৃদ্ধি আর উত্পাদন হ্রাসের কারণে ভারতে ময়দার দাম ২০১০ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতে কৃষিক্ষেতে ব্যবহৃত সারের বেশিরভাগই আমদানি করা হয়। এসব সার আসে মূলত রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। এখন এই দু’দেশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দামও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফলে ভারত সরকারকে দেশে গ্রীষ্মকালীন চাষাবাদ নিশ্চিত করতে কৃষকদেরকে সারের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে হবে। এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে  ২ ট্রিলিয়ন রুপিতে।

আন্তর্জাতিক সমাজ নয়াদিল্লীর এ সিদ্ধান্তের প্রতি সাড়া দিয়েছে। জার্মানিতে জি-সেভেনের কৃষিমন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করা হয়। তারা মনে করেন, এ পদক্ষেপ উদ্ভূত পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাবে।

বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের আগে বিশ্বব্যাপী রপ্তানিকৃত গমের ১২ শতাংশ সরবরাহ করতো রাশিয়া। তবে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন বা রাশিয়া থেকে খাদ্যশস্য আমদানি কঠিন ব্যাপার। বাংলাদেশ গম আমদানিকারক দেশ। চলতি বছর ভারতের কাছ থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টন গম আনার কথা দেশটির। তাই ভারতের সাথে গম আমদানি নিয়ে পরামর্শ করা প্রয়োজন, যাতে প্রথম চুক্তির গম সময়মতো আসে। এটা নিশ্চিত করা গেলে দাম বাড়লেও, আগামী দুই-চার মাস গমের যোগানে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, তিন-চার মাস পর বাংলাদেশের গমও কৃষকের ঘরে উঠবে।

তা ছাড়া, নিয়ম অনুযায়ী, আমদানির ঋণপত্র খোলার আগে সরবরাহকারীদের সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। ভারতীয় সরবরাহকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের চুক্তি করা হয়েছে, এমন গমের পরিমাণ আনুমানিক পাঁচ লাখ টন হতে পারে।

ভারত রপ্তানি বন্ধের পর স্বাভাবিকভাবে বিশ্বজুড়ে গমের দাম বাড়তে পারে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এখন রাশিয়ায় উত্পাদিত গম আমদানির ঋণপত্র খোলার সুযোগ দিচ্ছে না। পরিস্থিতি জটিল হলে অন্তত নিজেদের খাদ্য সুরক্ষার জন্য রাশিয়া থেকে গম আমদানিতে বাধা তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। (সুবর্ণা/আলিম/রুবি)