আজকের টপিক: চ্যালেঞ্জের মুখে ভারতের অর্থনীতি
2022-05-05 16:35:39

মে ৫: বিভিন্ন রাজস্ব ও আর্থিক নীতির প্রভাবে ভারতীয় অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে, তবে এই প্রক্রিয়ায় দেশটির অর্থনীতি বিভিন্ন বাহ্যিক চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন হচ্ছে। মার্কিন মুদ্রানীতির কঠোরতা উদীয়মান বাজারসমূহকে প্রভাবিত করছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে মুদ্রাস্ফীতির চাপ বেড়েছে, এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্থরতা ভোক্তাচাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। এসবই ভারতের অর্থনীতির অব্যাহত বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতিতে মহামারীর নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে  ভারত গত দুই বছরে বেশ কয়েকটি সহায়ক নীতি গ্রহণ করে। যেমন, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বেঞ্চমার্ক সুদের হার ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে এবং এতে দেশটির আর্থিক ব্যবস্থায় তারল্য বেড়েছে। পাশাপাশি, ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় একটি কার্যকর ও সম্প্রসারণমূলক রাজস্বনীতি গ্রহণ করেছে।

এসব নীতির সমর্থনে, ভারতীয় অর্থনীতি মূলত তার প্রাক-মহামারী স্তরে পুনরুদ্ধার হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষে ভারতের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত সামষ্টিক অর্থনীতির পূর্বাভাস দেখায় যে, ২০২১--২০২২ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি ২০১৯—২০২০ অর্থবছরের প্রাক-মহামারী স্তরকে ছাড়িয়ে গেছে।

মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ গত ১৬ মার্চ ঘোষণা করেছে যে, এটি সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ০.২৫ শতাংশ থেকে ০.৫ শতাংশে উন্নীত করবে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে মহামারীর প্রতিক্রিয়া ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমিয়েছিল। ফেডারেল রিজার্ভের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান জেরোমি পাওয়েল সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং শিথিল আর্থিক নীতির পরিবেশে, ফেড মে মাসে তার নিয়মিত মুদ্রানীতি সভায় সুদের হার বাড়াতে পারে।

ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বৃদ্ধির এক নতুন রাউন্ড শুরু করেছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বৃহত্তর অস্থিরতার ঝুঁকি নিয়ে আসবে এবং ভারতসহ উদীয়মান অর্থনীতির এতে ক্ষতির সম্মুখীন হবে৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করেছে যে, ফেডারেল রিজার্ভের কঠোর মুদ্রানীতি উদীয়মান অর্থনীতিগুলোকে বেকায়দায় ফেলবে এবং এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে আরও অনিশ্চিত করে তুলবে।

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর দাস বলেছেন যে, উন্নত দেশগুলিতে আর্থিকনীতির স্বাভাবিককরণের গতিতে পরিবর্তন নিয়ে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারগুলি অস্বস্তিতে রয়েছে। বেশিরভাগ উদীয়মান বাজার অর্থনীতি পুঁজির বহিঃপ্রবাহ বেকায়গায় আছে।

গত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ টানা ছয় সপ্তাহ ধরে হ্রাস পেয়েছে। গত পয়লা এপ্রিল শেষ হওয়া সপ্তাহে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১১.১৭৩ বিলিয়ন ডলার কমে ৬০৬.৪৭৫ বিলিয়ন ডলার হয়। ছয় সপ্তাহের সময়কালে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৮.২২৮ বিলিয়ন ডলার কমেছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে যে, ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধি এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশের অবনতি হওয়ায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা টানা ছয় মাস ভারতীয় স্টক বিক্রি করেছেন। শুধুমাত্র এই বছরের মার্চ মাসে, বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় স্টক থেকে ৪১০ বিলিয়ন রুপি প্রত্যাহার করেছেন, যা বাজারে অস্থিরতা যোগ করেছে।

ভারতের জর্জেট ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর প্রধান কৌশলবিদ বিজয় কুমার বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের সূচক ১০০-এর উপরে ওঠা এবং ফেড-এর কঠোর আর্থিকনীতি বিশ্বের স্টক মার্কেটের জন্য খারাপ, এবং ভারতসহ প্রায় সকল উদীয়মান অর্থনীতি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/স্বর্ণা)