বাংলাদেশে স্বস্তির ঈদযাত্রা: শেষ মুহূর্তে ভোগান্তির আশঙ্কা
2022-05-01 19:37:25


করোনা মহামারিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে গত দু’বছর রাজধানী ঢাকা ছেড়ে ঈদে বাড়ি গেছেন তুলনামূলক কম মানুষ। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবার বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন। এর ফলে সড়ক-মহাসড়ক, ট্রেন, লঞ্চে যাত্রীর চাপ বেড়েছে ব্যাপক আকারে। এর মধ্যে বরাবরের মতোই সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন বাসে করে। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট-এআরআইয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, এবার ঈদে দ্বিগুন মানুষ ঢাকা ছাড়বেন। ঈদের আগের চারদিন প্রতিদিন ৩০ লাখ করে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বেন বলে জানাচ্ছে এআরআই প্রতিবেদন। 

প্রতিদিন যে ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন তাদের মধ্যে সবচেয় বেশি ৮ লাখ যাচ্ছেন বাসে। মাত্র এক লাখ যাচ্ছেন ট্রেনে; দেড় লাখের মতো মানুষ যাচ্ছেন লঞ্চে। ব্যক্তিগত গাড়িতে ৪ লাখ আর মোটর সাইকেলে যাচ্ছেন ৪ লাখ মানুষ। এর বাইরে ১২-১৩ লাখ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঈদযাত্রা করছেন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্রেনের ছাদে ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে। 

রাজধানী ঢাকা, গাজিপুর, টাঙ্গাইল ও বগুড়ায় চীন আন্তর্জাতিক বেতারের প্রতিবেদক সরেজমিনে দেখেছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পিকআপ ও ছোট ট্রাকে করে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই। পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুদেরও এসব পিক-আপ ও ট্রাকে ভ্রমণ করতে দেখা গেছে। এভাবে ভ্রমণের ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়। 



গত ঈদে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। এবার যেহেতু অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন এবং যানবাহনের স্বল্পতা রয়েছে, তাই সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেশি।

প্রতিবছর ঈদযাত্রার আগে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেন সড়ক যাত্রায় ভোগান্তি হবে না। তারা স্বস্তির ঈদযাত্রা উপহার দেবেন যাত্রীদের। এবারও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম একাধিকবার  বলছেন, মহাসড়কে ভোগান্তির কোনো আশঙ্কা নেই। মহাসড়কে যাতে যানজট না হয় সে জন্য তারা সমন্বিতভাবে কাজ করছেন। 

সবশেষ শনিবার মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, এবারের সড়ক পরিস্থিতি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। তাই ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। 

এ কথা সত্য যে, যতটা আশঙ্কা ছিল ঠিক ততটা ভোগান্তি সড়ক পথে এখনো দেখা যায়নি। যদিও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শনিবার ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। ঢাকা-ময়মনসিং ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানে যান চলাচলে ধীরগতি ছিল। 

তবে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও জাজিরা-শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। রোববার দিনের প্রথমভাগেই ফেরি ও লঞ্চঘাটগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। 

ঈদের আগ মুহূর্তে মহাসড়ক ও ফেরিঘাটের পরিস্থিতির অবনতির একটা আশঙ্কা রয়েছে। তবে হয়তো একেবারে ‘কোমায়’ যাবার মতো অবস্থা হবে না- এমনটা আশা করা যায়। 

এর বাইরে শনি ও রোববার গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় রাজধানীর বাসটার্মিনালগুলোতে বেড়েছে যাত্রীর চাপ। এরপরও কোনো কোনো বাস আসন খালি রেখে যাত্রা করছে- এমন দৃশ্যও দেখা গেছে। আবার বেশি ভাড়া আদায়ের চিরাচরিত অভিযোগও রয়েছে।

সড়কপথে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির ভয়ে মানুষজন ভোগান্তি সয়েই ঈদের আগাম টিকিট নিয়েছেন। টিকিট পেতে ভোগান্তি হলেও এবার ট্রেনে ঈদযাত্রা স্বস্তির হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত কোনো বিড়ম্বনা ছাড়াই ঈদযাত্রা করেছেন মানুষজন। তবে রোববার কিছু ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হয়েছে। 

এদিকে, এবার ঈদযাত্রায় অবাক করা ব্যাপার ঘটেছে লঞ্চের ক্ষেত্রে। সচরাচর ঈদযাত্রায় সদরঘাটে যাত্রীর চাপ থাকে খুব বেশি। কিন্তু এবার ছুটির প্রথম দিনগুলোতে রাজধানীর সদরঘাটে ছিল না যাত্রীদের বাড়তি ভিড়। যাত্রী সঙ্কটে হতাশ লঞ্চ মালিকরা। ঈদে দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় যাত্রীর চাপ কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 


তবে গার্মেন্টস ছুটি হবার পর শনিবার থেকে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। এবং যথারীতি অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করেই ছেড়েছে লঞ্চগুলো। আজ রোববার দিনের শেষে এবং কাল সোমবার যাত্রীর চাপ বাড়বে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

সব মিলিয়ে এবার ঈদযাত্রায় এখন পর্যন্ত যাত্রী ুভোগান্তি সহনীয় মাত্রায় রয়েছে বলা যায়। ঈদের আগ মুহূর্তে পরিস্থিতির খুব বেশি অবনতি হবে না- সবার ঐকান্তিক কামনা এখন তাই।


মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।