সংযমের মাস রমজান শুরু: বাজার নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ
2022-04-03 19:59:53

বাংলাদেশে শুরু হয়েছে সংযম-সাধনার পবিত্র মাস রমজান।

অফিসের নতুন সময়সূচি, তারাবির নামাজ আদায়, সাহরি, ইফতার সবমিলিয়ে গোটা রমজান মাস ভিন্ন এক জীবনযাপন করবেন মুসলমানরা।

রোজা শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দের মধ্য দিয়ে শেষ হবে রমজান মাস।

রমজান মাস ধর্মপ্রাণ মুসলমানসহ গোটা দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্পূর্ণ। ধর্মীয় কারণের পাশাপাশি এর রয়েছে অর্থনৈতিক প্রভাব। রমজান মাস এলে একদিকে যেমন মানুষের মনে বয় সংযম-শান্তির বাতাস, তেমনি রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ফি বছরের এক দস্তুরে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে। এ বিষয়টি এমনিতেই অভাব-অনটনে থাকা সাধারণ মানুষের জন্য একটা বাড়তি চাপ তৈরি করে। বাড়তি দামের পাশাপাশি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণও রোজার মাসে এক বড় চ্যালেঞ্চ।

প্রতিবছরই রোজা শুরুর আগে সরকারি মহলে থেকে জনগণকে আশ্বস্ত করার একটা উদ্যোগ দেখা যায় যে, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩১ মার্চ জাতীয় সংসদে বলেছেন, সরকারের বিভিন্নমুখি উদ্যোগের কারণে রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় থাকবে। তবে নিত্যপণ্যের দাম যে বেড়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীও তা স্বীকার করেছেন। বলেন, করোনা ও যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় তার কিছুটা প্রভাব দেশের বাজারেও পড়েছে।

এটা ঠিক যে করোনা মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বের মতোই বাংলাদেশেও দ্রব্যমূল্য বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। তবে শুধু এ দুটো কারণেই বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের মূল্য লাগামহীন এ কথা বলা যায় না।

রোজা শুরুর ঠিক আগের দিন শনিবার বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে অভিযোগ করা হয় সড়ক-মহাসড়াকে পুলিশের চাঁদাবাজি আর বাজারে প্রভাবশালীমহলের ‘গুপ্ত চাঁদাবাজি’র কারণেই নিত্যপণ্যের দাম এত বেশি বেড়ে যায়। এ সব চাঁদাবাজি বন্ধ করা গেলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না বরং কমে আসবে।

সড়ক-মহাসড়কে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এ একরকম ওপেন-সিক্রেট ব্যাপার। এটা একরকম টোল আদায়ের মতো একটা বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ব আর পরিবহন খরচের বিষয়টা তো রয়েছেই।

তবে পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র, এআইজি কামরুজ্জামান ব্যবসায়ীদের এ ধরনের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা মানলেও ঢালাওভাবে পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান তিনি। কোথায় কোথায় চাঁদাবাজি হচ্ছে- ব্যবসায়ীরা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী রোববার প্রথম রোজায় রাজধানীর কাওরান বাজার পরিদর্শনে গিয়েও একই কথা বলেন। তিনি কোথায় চাঁদাবাজি হচ্ছে এ বিষয়টি তাকে জানাতে বলেন ব্যবসায়ীদের। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

কিন্তু এখানে মুশকিলটা হলো ব্যবসায়ীদের বলা হচ্ছে কোথায় চাঁদাবাজি হয় তা জানাতে। ভাবখানা এমন যেন-বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানে না চাঁদাবাজি মহাসড়কের কোন কোন পয়েন্টে আর কোন কোন ঘাটে হয়। আর সত্যি যদি তারা না জানেনে, তবে নিজেদের উদ্যোগে জানাটাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। বরাবরের মতো কোনো মতে বিষয়টাকে পাশকাটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

রোজায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি বাণিজ্যমন্ত্রী সহজভাবে স্বীকার করেছেন- লুকোছাপা করেননি। তাছাড়া বাজারে গেলেই তো প্রকৃত চিত্রটা পাওয়া যায়। রোজা শুরুর দুএকদিন আগে থেকে সংশ্লিষ্ট নিত্যপণ্যের দাম যে বেড়েছে তা তুলনামূলক হিসেবেই বেরিয়ে আসে।

এর বাইরে রমজান মাসে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং নকল ও নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ রোধে বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনার করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। রমজানে ইফতার সামগ্রী বিক্রি অথবা বিতরণের ওপর বিএসটিআই’র নজরদারি এবং অতিরিক্ত  মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ পরিপ্রেক্ষিতে রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল রাখতে চাঁদাবাজি বন্ধসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ নেবেন বলে দেশের মানুষের প্রত্যাশা।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতারের।