স্নায়ুযুদ্ধকালে দুই পরাশক্তির গুটিবসন্ত নির্মূল থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত: বিবিসি
2022-01-20 19:40:00

জানুয়ারি ২০: বিবিসির ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, গত দু’বছরে কোভিড-১৯ মহামারি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার ফলে ৫৫ লাখ মানুষের প্রাণহানি এবং আক্রান্ত হয়েছে ৩০ কোটি মানুষ। পাশাপাশি, বিশ্ব অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে মহামারি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স পরিকল্পনা ছাড়া আন্তর্জাতিক সমাজ মহামারি রোধে স্পষ্ট কোনো সহযোগিতামূলক পরিকল্পনা ও কার্যক্রম গড়ে তুলতে পারেনি।

 

বর্তমানে দুটি শক্তিশালী দেশ---যুক্তরাষ্ট্র ও চীন--মহামারি বিষয়ে বৈরিতার পরিবর্তে সহযোগিতার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও এ নিয়ে তাদের বাস্তব কর্মকান্ড তেমন একটি দেখা যায়নি। অথচ বড় দেশের রাজনৈতিক অবস্থান পাশে রেখে সংক্রামক রোগ মোকাবিলার অতীত উদাহরণ রয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের যৌথ প্রচেষ্টায় গুটিবসন্ত নির্মূল হয়েছে।

 

১৯৫৮ সালের মে মাসে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রযুক্তি অ্যাকাডেমি ও তত্কালীন উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিক্টর জাদানোভ যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নেন। এটি ছিল ১৯৫৬ সালে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি প্রণয়নের পর সংস্থায় সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রথম অংশগ্রহণ। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্ব পূর্ব ইউরোপ গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পশ্চিমা গ্রুপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১০ বছর ধরে স্নায়ুযুদ্ধ চালাচ্ছিল। ঠিক সে রাজনৈতিক বৈরিতার প্রেক্ষাপটে ভিক্টর

জাদানোভ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে গুটিবসন্ত নির্মূলের প্রধান প্রকল্পের অন্যতম হিসেবে নীতিনির্ধারণী পরামর্শ দেন। এ পরামর্শকে সমর্থন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে  বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কারণ সে সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র এ প্রকল্পে আগ্রহী ছিল না। সে থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের সে পরামর্শে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন তত্কালীন প্রেসিডেন্ট জন হাসন।

 

গুটিবসন্ত নির্মূল ইতিহাস থেকে জানা যায়, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ  উপাদান রয়েছে তাতে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সামাজিক ব্যবস্থা ও রাজনীতির সমর্থন ব্যক্ত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক পরিমাণে অর্থবরাদ্দ করেছে। তৃতীয়ত, সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্যাপক পরিমাণে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। চতুর্থত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিযুক্ত মার্কিন বিজ্ঞানী ডোনাল্ড হেন্দার্সন তার রাজনৈতিক সচেতনায় বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে গুটিবসন্ত নির্মূল করেছেন।

 

ডোনাল্ড হেন্দার্সন মনে করেন, গুটিবসন্ত নির্মূল করা স্নায়ুযুদ্ধের একটি জয়। ১৯৯৮ সালে তিনি এক প্রবন্ধে বলেন, ‘গুটিবসন্ত নির্মূল অভিযানের কয়েক বছরে পূর্ব ও পশ্চিমা সম্পর্ক উত্তেজনাময় ছিল। তবে দু’দেশের বিজ্ঞানীরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাঠামোতে সহযোগিতা চালিয়েছেন এবং দশাধিক বছরের মধ্যে সে সংক্রামক রোগ নির্মূল করতে পেরেছেন।

 

১৯৮০ সালের ৮ মে ৩৩তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলনে গুটিবসন্ত নির্মূলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

 

কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার দু’বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের গুটিবসন্ত নির্মূল করার ইতিহাস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-চীন কোভিড-১৯ মোকাবিলার উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করার প্রত্যাশা সকলের।

 

(রুবি/এনাম/শিশির)