আজকের টপিক: চীন ও আসিয়ানের সংলাপ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দু’দেশের ভবিষ্যত আরও সমৃদ্ধ হবে
2021-11-22 17:04:01

নভেম্বর ২২: ২০২১ সাল হচ্ছে চীন ও আসিয়ানের সংলাপ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকী। আসিয়ান হচ্ছে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া দেশগুলোর ইউনিটের সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম এই ১০টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত। চীন ও আসিয়ানের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিগত ৩০ বছরকে গুরুত্বারোপ করেছেন দু’পক্ষের শীর্ষনেতৃবৃন্দ।  চীন ও আসিয়ানের সংলাপ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দু’দেশের ভবিষ্যত আরও সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করা হয়।

 

‘ আজ (সোমবার) ২২ নভেম্বর সকালে, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিডিওর মাধ্যমে বেইজিংয়ে চীন-আসিয়ান সংলাপ সম্পর্কের ৩০তম বার্ষিকী শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান ও সভাপতিত্ব করেন। দুই পক্ষের সম্পর্কের ইতিহাসে এই গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলন একটি মাইলফলক। প্রেসিডেন্ট সি চীন ও আসিয়ানের মধ্যে ভালো-প্রতিবেশী ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। তিনি যেমন বলেছিলেন, ‘চীন এবং আসিয়ান দেশগুলো পাহাড় এবং নদী দ্বারা সংযুক্ত এবং তারা একটি বড় পরিবারের মতো রক্তের দ্বারা ঘনিষ্ঠ’।

 চীন ও আসিয়ানের মধ্যে সংলাপ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকীতে আমরা উভয় পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলো গণনা করতে পারি।

 

১৯৯১ সালে, চীন এবং আসিয়ান সংলাপ প্রক্রিয়া চালু হয়, যা চীন-আসিয়ান সহযোগিতার সূচনা করে। ১৯৯৬ সালে, চীন আসিয়ানের একটি ব্যাপক সংলাপ অংশীদার হয়ে ওঠে। ১৯৯৭ সালে, প্রথম চীন-আসিয়ান নেতৃবৃন্দের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ প্রকাশিত, যা দুই পক্ষের মধ্যে ২১ শতাব্দীর সুপ্রতিবেশীসুলভ ও পারস্পরিক আস্থাশীল অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত করে। ২০০৩ সালে, চীন ও  আসিয়ানের মধ্যে সম্পর্ক শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে ভিত্তিক একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়। ২০১০ সালে, চীন-আসিয়ান অবাধ বানিজ্য এলাকা সম্পূর্ণরূপে নির্মিত। ২০১৯ সালে, চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য এলাকা একটি ‘আপগ্রেড সংস্করণ’ চালু করে। ২০২২ সালে, আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (আরসিইপি) কার্যকর হবে’।

আরসিইপি স্বাক্ষরের পর, ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রে চীন এবং আসিয়ানের মধ্যে গভীর সহযোগিতা থাকবে। পাশাপাশি, চীন ও আসিয়ানের মধ্যে সংস্কৃতি, পর্যটন ও শিক্ষা ক্ষেত্রের সহযোগিতাও জোরদার হবে। জানা গেছে, আসিয়ান দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের বাইরে লেখাপড়ার জন্য চীন হচ্ছে তাদের প্রথম বাছাই গন্তব্য। ২০১৯ সালে, দু’পক্ষ ২ লাখেরও বেশি বিদেশী ছাত্র বিনিময় করেছে, একে অপরের সাথে ২০০ টিরও বেশি বোন সিটি তৈরি করেছে। আসিয়ান দেশগুলোর পর্যটকদের মধ্যে চীনা পর্যটকদের সংখ্যাও সবচেয়েবেশি।

 

সিজিথিএনেরখবর অনুযায়ী, গত ৩০ বছরে দুই পক্ষের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক হযোগিতা দ্রুত বিকশিত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মাত্রা ৮৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উভয় পক্ষ একে অপরের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে। এই বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে, চীন এবং আসিয়ানের বাণিজ্যের পরিমাণ ৬৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি। এটি চীনের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৪ শতাশেরও বেশি। ২০২০ সালে মহামারীর প্রভাবে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৬৮৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, ঐতিহাসিকভাবে একে অপরের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার। ১১বছর আগে (২০০১ সালে) চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য এলাকা প্রতিষ্ঠার পর থেকে, দু’পক্ষের ৯০ শতাংশ পণ্য শূন্য-শুল্ক চিকিত্সা উপভোগ করতে পারে। একই সময়ে, চীন হল আসিয়ান দেশগুলোর বাইরে প্রথমটি দেশ, যা আরসিইপি’র অনুমোদন সম্পন্ন করেছে। এটি আসিয়ানের কেন্দ্রীয়তার প্রতি চীনের দৃঢ় সমর্থন প্রদর্শন করে। কোভিড-১৯ ঠেকাতে চীন ও আসিয়ানের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতাও বজায় রেখেছে। চীন ইতোমধ্যেই আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর  কাছে ৩০ কোটিরও বেশি টিকা ও বিপুল সংখ্যক জরুরি চিকিত্সা সরবরাহ করেছে’।

 

আসিয়ান দেশগুলোর নেতারা চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট গুয়েন জুয়ান ফুক, ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতের্তে, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো, লাওর প্রেসিডেন্ট থং লুন এবং থাই প্রধানমন্ত্রী প্রয়ুত সবাই সক্রিয়ভাবে সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠার ৭২তম বার্ষিকীতে অভিনন্দন এবং আবারও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষে অভিনন্দন। সিঙ্গাপুর উদযাপনের জন্য কার্যক্রম সংগঠিত করতে চীনের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক। বলাই বাহুল্য যে, চীন ও আসিয়ানের সংলাপ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দু’দেশের ভবিষ্যত আরও সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করা হয়। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)