সিনচিয়াংয়ে সন্ত্রাসদমনে সাফল্য প্রসঙ্গে
2021-11-18 14:31:57

 

 

নভেম্বর ১৮: গতকাল (বুধবার) সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গণসরকারের মুখপাত্র সু কুইসিয়াং বেইজিংয়ে বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীনে ধারাবাহিক, দৃঢ় ও কার্যকর সন্ত্রাসবাদ দমনব্যবস্থা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা হয়। এর ফলে সিনচিয়াংয়েও সব ধরনের সন্ত্রাসী তত্পরতার অবসান ঘটেছে। এটা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক যুদ্ধে চীনের ইতিবাচক অবদান বলা চলে।

কয়েক বছর আগেও, সিনচিয়াংয়ে জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি, ধর্মীয় চরমপন্থী শক্তি, ও প্রতিহিংসাপরায়ণ সন্ত্রাসীদের ব্যাপক নেতিবাচক তত্পরতা ছিল। সেখানে তখন ঘন ঘন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটতো। ২০১৪ সালে, সিনচিয়াংয়ের শাচেতে ‘২৮ জুলাই’ হিংসাত্মক সন্ত্রাসী হামলার শিকার চাং লি হুয়া তাঁর চিন লিনের বাড়িতে তাঁর স্বামীকে হত্যার দৃশ্যটি স্মরণ করে এখনও কাঁদেন। তিনি বলেন

 

“আমরা গ্রামীণ মানুষ। আমরা সিনচিয়াং গিয়েছিলাম কিছু পণ্য সরবরাহ করতে এবং কিছু অর্থ উপার্জন করতে; কিন্তু আমি কখনও বুঝতেই পারিনি যে, আমার স্বামী সেখানে চিরকালের জন্য শুয়ে থাকবেন। শুধু আমি ও একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিশু বেঁচে আছি। আমাদের পরিবার ভেঙে পড়েছিল। এই বাড়িটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমাদের শরীর ও মনে মারাত্মক চোট লেগেছে।”

পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সালের শেষ পর্যন্ত, তথাকথিত ‘তিন শক্তি’ সিনচিয়াং ও অন্যান্য স্থানে হাজার হাজার সহিংস সন্ত্রাসী ঘটনার জন্ম দিয়েছে। যার ফলে বিপুল সংখ্যক নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে, শত শত পুলিশসদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন। জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অপরিমিত।

এমন একটি গুরুতর ও জটিল পরিস্থিতিতে, গোটা জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের সর্বোচ্চ সুরক্ষার জন্য, চীনে ধারাবাহিক দৃঢ় ও কার্যকর সন্ত্রাসদমনব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সিনচিয়াংয়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা শূন্যে নেমে আসে। টানা পাঁচ বছর ধরে সেখানে কোনো সন্ত্রাসী হামলা ঘটেনি। এটা একটা লক্ষণীয় সাফল্য বটে। এই সম্পর্কে সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গণসরকারের মুখপাত্র সু কুইসিয়াং বলেন

 

“আইনানুসারে সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা, সন্ত্রাসী তত্পরতার চক্রান্ত, ও নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন নেতিবাচক আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হয়। এর পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সমাজের সন্ত্রাসবিরোধী অভিজ্ঞতা থেকে শেখা এবং প্রতিরোধের উপায় অন্বেষণ করে এমন যেকোনো কাজকে কঠোরভাবে দমন করার মাধ্যমে উত্স থেকে সন্ত্রাসবাদের হুমকি নির্মূল করতে হয়। চীন সেটা করেছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে ইতিবাচক অবদান রেখেছে।”

সু কুই সিয়াং জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিনচিয়াংয়ে জনগণের জীবনমান উন্নয়নের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বহু বছর ধরে, জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ৭০ শতাংশেরও বেশি রাজস্ব আয় ব্যয় করা হয়েছে। এসব অর্থ ব্যয় করা হয়েছে কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিত্সা, সামাজিক নিরাপত্তা ও আবাসনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণকর খাতে। এর সাহায্যে সেখানে এমন একটি ভাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, সেখানে এখন তরুণদের জন্য সুশিক্ষার, অসুস্থদের সুচিকিত্সার, বয়স্কদের জন্য সেবার, বাসিন্দাদের জন্য আবাসনের এবং দুর্বলদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা হয়েছে। এই সম্পর্কে সু কুই সিয়াং বলেন

 

“বিশেষ করে, ৩০ লাখ ৬৪ হাজার ৯ শ গ্রামীণ হতদরিদ্র মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করা হয়েছে। ৩৬৬৬টি দরিদ্র গ্রাম দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে এবং ৩৫টি দরিদ্র জেলা থেকে হতদারিদ্র্য সম্পূর্ণ দূর করা হয়েছে। সিনচিয়াংয়ের হাজার বছরের পরম দারিদ্র্য সমস্যা সমাধান করা হয়েছে৷ বর্তমানে, সকল জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা সংস্কার ও উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে। তারা স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতি, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বসবাস করছে এবং একসাথে ধনী হওয়ার সামাজিক উন্নয়নকার্যক্রমের মূলধারায় সংযুক্ত হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা বড় সাফল্য।  (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)