ফেব্রুয়ারি ৬: গত ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, চীনের ঐতিহ্যবাহী বসন্ত উত্সব উপলক্ষ্যে, কুইচৌ প্রদেশ পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন জাতির মানুষকে বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানান।
তিনি গত বুধবার কুইচৌ প্রদেশের পিচিয়ে শহর পরিদর্শন করেন। পিচিয়ে পশ্চিমাঞ্চলের দারিদ্র্যমুক্তির একটি নমুনা অঞ্চল। গত শতাব্দীর আশির দশকে একে দারিদ্র্যবিমোচনের পরীক্ষামুলক এলাকা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ৩০ বছরে এ অঞ্চল দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে।
উচিয়াং কুইচৌ প্রদেশের প্রধান নদী। চীনা প্রেসিডেন্ট উচিয়াংয়ের দূষণমুক্তি এবং পরিবেশ পুনরুদ্ধার সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। তারপর তিনি হুয়াউ গ্রাম দেখতে যান। সেখানে পশুপালন ও পর্যটন উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্তি অর্জিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বসন্ত উত্সবের শুভেচ্ছা জানান তিনি।
চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, “চীনের ষাঁড় বর্ষ উপলক্ষ্যে এখানে সারা দেশের বিভিন্ন জাতির মানুষকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই। সবার সুস্বাস্থ্য, সুখী ও সুষম জীবন কামনা করি। আশা করি, আমাদের মাতৃভূমি দিন দিন আরও সুন্দর ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।’
গত বৃহস্পতিবার তিনি কুইচৌ প্রদেশের কুইইয়াং শহর পরিদর্শন করেন। প্রথমে তিনি কুয়ানশানহু অঞ্চলের একটি সুপারমার্কেটে যান। সেখানে উত্সবের আগে শাকসব্জির দাম, বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ ইত্যাদির খোঁজখবর নেন তিনি। এ সুপারমার্কেটে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কেনা হয়ে থাকে। তাই কৃষক এবং ভোক্তা উভয়েই উপকৃত হয়। এ মডেল চীনা প্রেসিডেন্টের প্রশংসা পেয়েছে।
এরপর তিনি চিনইউয়ান আবাসিক এলাকা পরিদর্শন করেন। এখানে স্থানীয় মানুষের জন্য অনেক সহজ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সি চিন পিং বলেন, আবাসিক এলাকার কমিউনিটি অফিসের স্থানীয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ সবচেয়ে বেশি। তাদের চাহিদা মেটানোর জন্য এসব অফিসের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বর্তমানে মহামারী প্রতিরোধের কাজ কঠোরভাবে করতে হবে। মহামারী প্রতিরোধে মানুষকে ‘যেখানে আছে সেখানে বসন্ত উত্সব কাটানো’র আহ্বান জানানো হয়েছে। তাই বসন্ত উত্সব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে কাটানোর লক্ষ্যে কমিউনিটি অফিসের দায়িত্ব বেশি।
চীনা প্রেসিডেন্ট চিনইউয়ান আবাসিক এলাকার চত্বরে এসে সবাই তাকে সম্ভাষণ জানায়। তিনি তাদেরকে নতুন বছরে নতুন লক্ষ্য বাস্তবায়নের উত্সাহ দেন।
কুইচৌ প্রদেশে বিশ্বের বৃহত্তম একক অ্যাপারচার রেডিও টেলিস্কোপ অবস্থিত। একে বলা হয় ‘থিয়ান ইয়ান’ অর্থাত আকাশের চোখ। শুক্রবার চীনা প্রেসিডেন্ট এ প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং এ ‘আকাশের চোখ’ প্রকল্প নির্মাণ থেকে বৈজ্ঞানিক নব্যতাপ্রবর্তন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত তথ্য জেনে নেন। চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক অবকাঠামো হিসেবে ‘থিয়ান ইয়ান’ প্রকল্প চীনের একটি বড় উদ্ভাবন। বিজ্ঞানী নান রেন তুংসহ অনেক বিজ্ঞানী এ প্রকল্পের জন্য অবদান রেখেছেন, যা প্রশংসনীয়।
তিনি বিজ্ঞানীয়দের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ নির্মাণের জন্য বৈজ্ঞানিক নব্যতাপ্রবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নান রেন তুং-এর মতো শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীকে সামনে রেখে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেশকে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করা এবং আরো অনেক অবদান রাখার জন্য তিনি সব বিজ্ঞানীকে উত্সাহ দেন।
শুক্রবার তিনি কুইচৌ প্রদেশের স্থানীয় সরকারের কর্মপ্রতিবেদন শোনেন এবং তাদের বিভিন্ন কাজের সাফল্যের স্বীকৃতি দেন। তিনি বলেন, উচ্চমানের উন্নয়ন বজায় রাখার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। উন্নয়ন ও নিরাপত্তা উভয়ের উপরে গুরুত্ব দিতে হকে। গ্রামাঞ্চলের উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন, ইত্যাদি সব দিক থেকে সামনে এগুলে জনগণের সুন্দর ও সমৃদ্ধ জীবন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। (ইয়াং/আলিম/ছাই)