পেইচিং অলিম্পিক গেমসের পর বৃটেনের ২০১২ সালে বৃটেনের রাজধানী লন্ডন তৃতীয় বারের মতো অলিম্পিক গেমসের স্বাগতিক দেশ হবে। এর আগে দু'বার অলিম্পিক গেমস আয়োজিত হয়েছিল। অলিম্পিক ইতিহাসে সে দু'টি অলিম্পিক গেমস খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রতিযোগিতায় অলিম্পিক চেতনার যে প্রয়াস ঘটেছিল এবং সে সময়ে যতো সেরা খেলোয়াড় বেরিয়ে এসেছিল তা রীতিমতো বিস্ময়কর।
১৯০৮ সালের লন্ডন অলিম্পিক গেমস অলিম্পিক ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ স্থায়ী গেমস। সেবারের গেমসে প্রথমবারের মতো পাঁচটি মহাদেশের মিলন ঘটেছিল। সেবারই প্রথমবারের মতো পদক তালিকা চালু হয় এবং বিভিন্ন দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র বাড়ানো হয়। বৃটেনের অলিম্পিক কমিটির বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইমন ক্লেগ সেবারের অলিম্পিক গেমসে বৃটিশ দলের পারফরম্যান্সে গর্ব বোধ করেন। তিনি বলেন,
সেটি একটি চমত্কার মহাসম্মিলনী ছিল। আমি মনে করি, সেবারের অলিম্পিক গেমসের উল্লেখযোগ্য একটি দিক ছিল বৃটিশ প্রতিনিধি দলের পদক তালিকায় প্রথম স্থান পাওয়া।
লন্ডন অলিম্পিক গেমসে "অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ" এ ধরণের চেতনা সেবার আনুষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল। এই উপলব্ধি লন্ডন অলিম্পিক গেমসের একটি মর্মস্পর্শী গল্প থেকে জন্ম নিয়েছিল। ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন দেখতে ছোটখাটো ইতালীয় একজন চিনির ব্যবসায়ী নাম দোরান্দো পিয়েত্রি। প্রতিযোগিতার প্রথম দিকে তিনি সবার সামনে ছিলেন এবং প্রথমেই ভেণ্যুতে প্রবেশ করেছিলেন। দুঃখের বিষয় হলো তিনি ভূল দিকে গিয়েছিলেন। তার পর ক্লান্ত হয়ে পড়ে যান এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে মাটিতে গড়াতে থাকেন। তারপরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। গন্তব্য রেখার থেকে প্রায় মাত্র ১৫ মিটার দূরে তিনি আবার গড়িয়ে পড়েন। অবশেষে তিনি দু'জন দয়ালু চিকিত্সকের সাহায্যে হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেছিলেন। অন্যান্যদের সাহায্য পাওয়ায় পিয়েত্রিকে পদক থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। প্রতিযোগিতায় পিয়েত্রির ধৈর্য দেখে আধুনিক অলিম্পিকের জনক পিয়েরে দ্য কুবার্তিন সেবারের অলিম্পিক গেমসের সময় একটি অবিস্মরণীয় কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, অলিম্পিক গেমসের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ জয়ী হওয়ার চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংগ্রাম, সফলতা নয়।
১৯৪৮ সালে লন্ডনে ১৪ তম অলিম্পিক গেমস আয়োজিত হয়। আপনারা এখন যে সঙ্গীতটি শুনছেন সেটি সেবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঙ্গীত। ক্লেগ বলেন,
ফ্যানি ব্লাংকার্স কোয়েন নামে নেদারল্যান্ডসের একজন অ্যাথলেটের পারফরম্যান্স সেই অলিম্পিকে খুব বিস্ময় তৈরি করেছিল। ক্লেগের ভাষায় সেই অ্যাথলেটকে "নেদারল্যান্ডসের উড়ন্ত মানব" বলা হতো। সেবারের অলিম্পিক গেমসে তিনি এক'শ মিটার, ৮০ মিটার হার্ডলস, দু'শ মিটার এবং ৪×১০০ মিটার রিলে রেস-এ চারটি ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। আসলে ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফ্যানি এক'শ মিটার, হাই জাম্প এবং লং জাম্পসহ ৬টি ইভেন্টে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের কারণে অলিম্পিক গেমস অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে না গেলে ফ্যানি আরো আগে অলিম্পিকের আসর মাত্তাতে পারতেন।
তা ছাড়া, হাংগেরির এক হাতি শ্যুটার ক্যারোলি তাকাকস সেবারের অলিম্পিক গেমসে বিখ্যাত হয়েছিলেন। তিনি একটি দুর্ঘটনায় ডান হাত হারিয়েছিলেন। তারপর তিনি বাম হাতে চর্চা করার চেষ্টা করে যান এবং ১৯৪৮ সালের লন্ডন অলিম্পিক গেমসে রাপিড ফায়ার পিস্তলে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন এবং স্বর্ণ পদক পেয়েছিলেন। ক্লেগ বলেন, এসব খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সে গভীরভাবে অলিম্পিক চেতনা প্রতিফলিত হয়েছিল।
বৃটেনের উদ্যোগে আয়োজিত দু'বারের অলিম্পিক গেমস সফলভাবে শেষ হয়েছিল। বর্তমানে অলিম্পিক গেমস আগের চেয়ে আরো অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু অলিম্পিক চেতনা চিরদিন অবিনশ্বর। (লিলি)
|