v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
পেইচিং অলিম্পিক গেমস মানবজাতির ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অলিম্পিক হবে: জাভেদ মানসুরি
2008-08-29 18:47:11
৬৩ বছর বয়সী মানসুরির চীনের প্রতি গভীর ভাবাবেগ রয়েছে। ২০ বছর আগে তিনি ইরানের সংস্কৃতি ও কন্স্যুল বিষয়ক উপ পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় বহুবার চীন সফর করেন। তিনি উপ পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে চীন ও ইরানের মধ্যে প্রথম সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান সহযোগিতা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। বিশ্বের বৃহত্তম উন্নশীল দেশ চীন অলিম্পিক গেমস আয়োজন নিয়ে মানসুরির ব্যাপক প্রত্যাশা রয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এখন সারা বিশ্ব দেখতে চায়, পেইচিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও চীন ধরণের অলিম্পিক গেমস বিশ্বকে উপহার দেয়। আমি বিশ্বাস করি, পেইচিং অলিম্পিক গেমস মানবজাতির সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও সামাজিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপরে পরিণত হবে।'

আগামী আগষ্টে চীনে মানসুরির ইরানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের দুই বছর পূর্ন হবে। তিনি বলেন, পেইচিং অলিম্পিক গেমস হবে তাঁর কার্য মেয়াদের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপর। ইরানের অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি দলকে সেবা সরবরাহ করা হবে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সেজন্য মানসুরি পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি মনে করি পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজ অনেক ভাল। চীন সরকার ও জনগণ অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য প্রচুর অবদান রেখেছেন। চীন অলিম্পিক গেমসের স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি ও ধারণা ব্যবহার করেছে। এছাড়া, অলিম্পিক গেমস সম্প্রচারে চীন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। এতে চীনের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও কর্মচারীদের নবায়ন ও উদ্ভাবনের সামর্থ্য দেখা যাবে।'

ইরান একটি ইসলাম ধর্মীয় দেশ। ইরানের প্রতিনিধি দলের সকল সদস্য মুসলমান। এবারের অলিম্পিক গ্রামে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জামায়াতের জন্য ধর্মীয় কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। মানসুরি এর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, 'পেইচিং অলিম্পিক গেমসে চীন মুসলমান ক্রীড়াবিদদের জন্য বিশেষ জামায়াতের স্থান নির্মাণ করেছে। এটি অনেক ভাল। কারণ মুসলমান ক্রীড়াবিদরা ধর্মীয় কাজকর্মের সুবিধা পাবে।'

পেইচিং অলিম্পিক গেমসের শ্লোগান হল এক বিশ্ব এক স্বপ্ন। এ শ্লোগানে অলিম্পিক চেতনা ঐক্য, মৈত্রী, উন্নয়ন, সম্প্রীতি, অংশগ্রহণ ও স্বপ্ন প্রমাণিত হয়। এ সম্পর্কে মানসুরি বলেন, 'অলিম্পিক গেমসে বিভিন্ন জাতি, বর্ণ, ভাষা ও ধর্মের মানুষ মিলিত হবে। সব ক্রীড়াবিদ সাফল্য অর্জনের চেষ্টা করবেন। অলিম্পিক গেমসের মধ্যে দিয়ে মানবজাতির মানবধিকার ও ভাবাবেগ ঘনিষ্ঠ হবে।'

অলিম্পিক গেমস হল সারা বিশ্বের আড়ম্বরপূর্ণ ক্রীড়া অনুষ্ঠান। কতিপয় লোক অলিম্পিক মশালের হস্তান্তর পন্ড করতে চেয়েছিল এবং কোনো কোনো ব্যক্তি ও সংস্থা পেইচিং অলিম্পিক গেমস বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছে। মানসুরির তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, 'কোনো কোনো ব্যক্তি ও গ্রুপ অলিম্পিক গেমসের মাধ্যমে নিজের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চায়। এটি অলিম্পিক চেতনার পরিপন্থী। আমি এর বিরোধিতা করি।'

ইরান গত তিনটি অলিম্পিক গেমসে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। সিডনি অলিম্পিক গেমসে ইরান তিনটি স্বর্ণপদক ও এথেন্স অলিম্পিক গেমসে ২টি স্বর্ণপদক অর্জন করে। এ সম্পর্কে মানসুরি বলেন, ইরানের কোনো কোনো ইভেন্টে সফল হওয়ার সামর্থ্য রয়েছে। ইরানের ক্রীড়াবিদরা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাফল্য অর্জনের চেষ্টা করবেন। তিনি আরো বলেন, 'বেশ কয়েকটি ইভেন্টে ইরানের শক্তিশালী ক্রীড়াবিদ রয়েছে। ইরান সরকার তাঁদেরকে অনেক সুবিধা দিয়েছে। আমি আশা করি, তাঁরা পেইচিং অলিম্পিক গেমসে সফল হবেন।'

মানসুরি একজন ক্রীড়া প্রেমিক। তিনি নিয়মিত শরীর চর্চা করেন। ফুটবল ইরানে অনেক জনপ্রিয়, কিন্তু মানসুরি ভলিবল খেলতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, 'আমি ভলিবল খেলতে পছন্দ করি। যদিও বেশির ভাগ ইরানী ফুটবল খেলা পছন্দ করে, তবুও আমি ভলিবলের দিকে বেশি নজর রাখি।'

ইরানের বিশ্ব বিখ্যাত্ চলচ্চিত্র পরিচালক মাজিদ মাজাদি পেইচিং শ্যুটিং নামের তত্পরতায় অংশ নেন। তাল পরিচালিত চলচ্চিত্র বিভিন্ন মহলের প্রশংসা পেয়েছে। মানসুরি বলেন, মাজিদ মাজিদি ৫ মিনিট দৈর্খ্যের একটি চলচ্চিত্রে নিজের বিশেষ স্টাইলে ঐতিহ্যিক ও আধুনিকতার মিশ্রণে নতুন পেইচিং তুলে ধরেছেন। এতে অলিম্পিক গেমসের শান্তি, মৈত্রী ও ভালবাসার চেতনা প্রচারিত হয়েছে। মানসুরি আরো বলেন, 'মাজিদ মাজিদি একজন বিশ্ববিখ্যাত্ চলচ্চিত্র পরিচালক। তাঁর চলচ্চিত্রে সবসময় মানবাধিকার, চেতনা, নৈতিকতা ও মানবজাতির মূল্যায়ন প্রতিফলিত হয়। আমি মনে করি, চীন সরকার ও জনগণের মধ্যে তাঁর চলচ্চিত্রের আলোড়ন সৃষ্টি করার একটি কারণ। '

পেইচিং অলিম্পিক গেমস হবে বিভিন্ন সংস্কৃতির সম্মিলিত একটি আড়ম্বরপূর্ণ ক্রীড়া অনুষ্ঠান। বিভিন্ন স্থানের ক্রীড়াবিদ ও পর্যটকরা ঘনিষ্ঠভাবে চীনের সংস্কৃতি জানতে পারবেন। পাশাপাশি তাঁরা চীনা নাগরিকদেরকে নিজের দেশের সংস্কৃতি প্রদর্শন করতে পারবেন। মানসুরি বলেন, পেইচিং অলিম্পিক গেমস হবে বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও সমঝোতা বাড়ানোর সুযোগ। পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সময় ইরান দূতাবাস বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে ইরানের সংস্কৃতি প্রচার করবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'পেইচিং অলিম্পিক গেমস হবে সাংস্কৃতিক যোগাযোগের একটি সুযোগ। চীনে ইরান দূতাবাস অলিম্পিক গেমসের সময় ছবি প্রদর্শন করে ইরানের সংস্কৃতি ও সফল ইমলামী সংস্কারের পর ইরানের পরিবর্তন নানা স্থানের ক্রীড়াবিদ ও পর্যটকদেরকে প্রদর্শন করবে। সঙ্গে সঙ্গে অলিম্পিক গেমসের সময় আমরা আরো ভালভাবে অন্যান্য সংস্কৃতি জানতে পারবো।'

মানসুরির চীনের সংস্কৃতিতে বিপুল আগ্রহী রয়েছে। তিনি বলেন, 'চীনের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও সংস্কৃতি রয়েছে। আমি আশা করি, পেইচিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের ঐতিহ্যিক ও আধুনিক সংস্কৃতির মিলিত পরিবেশনা দেখতে পাবো।'

মানসুরি বলেন, পেইচিং অলিম্পিক গেমস হবে একটি শান্তিপূর্ণ ও সম্প্রীতিময় ক্রীড়া অনুষ্ঠান। তিনি বলেন,'আমি আশা করি, চীন সরকার ও জনগণ সফলভাবে অলিম্পিক গেমস ও প্রতিবন্ধী অলিম্পিক গেমস আয়োজন করবে। আমরা পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সাফল্য উপভোগ করতে চাই।'

সবশেষে মানসুরি চীনা ভাষায় পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। 'পেইচিং অলিম্পিক গেমস সফল হোক।' (ছাই ইউয়ে)

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China