পেইচিং নাগরিক এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের পেইচিংয়ের দর্শনীয় স্থান এবং অলিম্পিকের স্টেডিয়ামগুলো পরিদর্শনের সুবিধার জন্য ২০ জুলাই পেইচিং গণ যোগাযোগ গ্রুপ দু'টি শহর ভ্রমণ বাস লাইন চালু করেছে । এর মধ্যে লাইন ১-এর মাধ্যমে পেইচিংয়ের পুরাকীর্তি , সংস্কৃতিক ও দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করা যায়। লাইন ২-এর মাধ্যমে অলিম্পিক স্টেডিয়ামগুলো এবং এর আশেপাশের দৃশ্য অনুভব করা যায় ।
আপনারা যে কথা শুনছেন , সেটি বাস কন্ডাক্টারের । তিনি যাত্রীদেরকে লাইন-১ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানাচ্ছেন । তিনি বলেন , লাইন-১ পেইচিংয়ের দক্ষিণ অঞ্চলের রেল স্টেশন থেকে রওনা হয়ে পেই কুয়াং থিংয়ে যাওয়ার বাস লাইন । প্রতিদিন বিকাল তিনটায় রওনা হয় । ১৮.১ কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগে ৬১ মিনিট । পথে পড়ে পেইচিংয়ের থিয়ান থান , তা শি লান ও চিং শানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ।
কন্ডাক্টরের তথ্যের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পেইচিংয়ের পুরাকীর্তি ভ্রমণ শুরু করি । পেইচিংয়ের দক্ষিণ অঞ্চলের রেল স্টেশন থেকে রওনা হওয়ার পর প্রথম ধাপ হল ইয়ুং তিং মেন । কন্ডাক্টর যাত্রীদের পথের পাশপাশির দর্শনীয় স্থানের তথ্য জানাচ্ছেন । বন্ধুরা , ইয়ুং তিং মেন হল প্রাচীন পেইচিংয়ের দক্ষিণ দিকের দরজা , যা ১৫৫৩ সালে নির্মিত হয় , ৫০ বছর আগে ইয়ুং তিং মেন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়ে ছিল , ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এর পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ হয় ।
যাত্রীদের আরো ভালোভাবে পথের দৃশ্য উপভোগ করার জন্য ভ্রমণ বাস প্রতি ঘন্টায় ১৮ কিলোমিটারের গতিতে যায় । সবগুলোই উচ্চ মানের দো'তলার বাস । যাত্রীরা এই বাস খুব আরামদায়ক মনে করে । বাসে টি ভিও লাগানো আছে । যাত্রীরা পথের দৃশ্য দেখার পাশাপাশি অলিম্পিক প্রতিযোগিতা এবং সংবাদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতে পারেন । পুরো লাইনে ৯টি স্টেশন আছে । যদি যাত্রী পথের কোনো একটি দর্শনীয় স্থান ভালোভাবে ভ্রমণ করতে চান , তাহলে কাছাকাছি স্টেশনে নেমে যায় ।
ভ্রমণ বাস পেইচিং দক্ষিণ রেল স্টেশন থেকে রওনার পর একদম উত্তর দিকে যায় । যথাক্রমে সিয়ান নুং থান , থিয়ান থান ও থিয়ান ছিয়াও পার হওয়ার পর পেইচিংয়ের বিখ্যাত ছিয়ান মেন সড়কে পৌঁছায় । সম্প্রতি ছিয়ান মেন রাস্তার পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে । অলিম্পিক গেমস চলাকালে এখানে বহু দেশি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করেছে । কন্ডাক্টর জানান , এখানে পেইচিংয়ের পুরোনো এবং বিখ্যাত দোকান আছে । আপনারা পেইচিংয়ের ঐতিহ্যবাহী নির্মাণ দেখতে পারেন এবং পেইচিংয়ের ঐতিহাসিক সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারেন । তিনি বলেন :
ছিয়ান মেন সড়ক পেইচিংয়ের বৈশিষ্টপূর্ণ একটি সড়ক । সড়কের বাতিও রেটল ড্রাম ও পেইচিংয়ের বিখ্যাত খাবার কাঠি সিরাবৈঁচির মত । এ সড়কে চীনের অনেক পুরোনো এবং বিখ্যাত দোকান রয়েছে । যেমন ছুয়ান চুই দ্য রেঁস্তরা , রুই ফুং সিয়াং রেশমের দোকান ইত্যাদি । ছিয়ান মেন রাস্তায় আরেকটি উল্লেখযোগ্য দৃশ্য হল "দাং দাং" গাড়ি । কেন এ গাড়িকে দাং দাং গাড়ি বলে ? আসলে দাং দাং গাড়ি হল রেল বাস । বাসের সামনে দু'টি ছোট বেল আছে । যদি ড্রাইভার গাড়ি চালায় , তাহলে বেলটি দাং দাং করে বেজে যাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে । তাই পেইচিং নাগরিকরা এ গাড়িকে দাং দাং গাড়ি বলে ডাকে । দাং দাং গাড়ি হলো ছিয়ান মেন সড়কের একামাত্র চলাচলের মাধ্যম । উল্লেখ্য , দাং দাং গাড়ি ১৯২৪ সাল থেকে ছিয়ান মেন রাস্তায় চলাচল শুরু করে । ৪২ বছর পর ১৯৬৬ সালে এ গাড়ির চলাচল বন্ধ হয় । তখন থেকে আরো ৪২ বছরের পর এ বছর দাং দাং গাড়ি আবার ছিয়ান মেন সড়কে ফিরে এসেছে । বর্তমানে ছিয়ান মেন সড়কে দু'টি দাং দাং গাড়ি চলছে । এগুলো ১৯২৪ সালের সবচেয়ে পুরোনো ডিজাইন অনুযায়ী তৈরি করা হয় । দু'গাড়ি মোট ৮৪ জন যাত্রী বহন করতে পারে ।
ছিয়ান মেন সড়কে গেলে আরেকটি জায়গায় যেতে হবে । তা হল তা শি লান । তা শি লান হল পেইচিংয়ের সবচেয়ে পুরোনো , সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সবচেয়ে বৈশিষ্টময় রাস্তা । সেখানে বহু প্রাচীনকালের নির্মাণ শৈলি বজায় রয়েছে । ইতিহাসে তা শি লান এলাকা পুরোনো পেইচিংয়ের নাগরিকদের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে । সেখানে প্রায় সব ধরনের পণ্যদ্রব্য কেনা যায়।
ভ্রমণ বাসটি ছিয়ান মেন রাস্তা পার হয়ে আরো উত্তর দিকে গেলে দেখা যাবে বিশ্বের বৃহত্তম শহর চত্বর --থিয়ান আন মেন মহাচত্বর । থিয়ান আর মেন মহাচত্বরের কাছাকাছি রয়েছে গণ ভবন , রাষ্ট্রীয় যাদুঘর , গণ স্মৃতীসৌধ এবং চেয়ারম্যান মাওয়ের স্মৃতিভবন ।
থিয়ান আন মেন মহাচত্বর পার হয়ে ভ্রমণ বাস আমাদের নিয়ে যায় প্রাচীনকালে পেইচিংয়ের রাজপ্রাসাদের পুরাকীর্তি পার্ক ও লাল ভবন পুরাকীর্তি দেখতে । এরপর আমরা বিশ্ব বিখ্যাত নিষিদ্ধ নগরে পৌঁছবো । নিষিদ্ধ নগর হল চীনের মিং ও ছিং রাজবংশের রাজপ্রাসাদ । তা হল এখন বিশ্বে বৃহত্তম এবং সবচেয়ে পুর্নাঙ্গভাবে রক্ষিত প্রাচীন স্থাপত্য। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে এসে পরিদর্শন করেন ।
নিষিদ্ধ নগর পরিদর্শনের পর আমরা বাসে করে শি শা হাইতে পৌঁছবো । শি শা হাই হল এমন একটি জায়গা যেখানে ঐতিহ্য ও আধুনিক উপাদান মিলেমিশে রয়েছে । এখানে পেইচিংয়ের বৈশিষ্টময় পুরোনো স্থাপত্য দেখা যায় , এখানে অনেকগুলো পানশালাও আছে । পর্যটকরা এসব বিভিন্ন বৈশিষ্টের পানশালায় সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন । শি শা হাই-এর কাছে হল পেইচিংয়ের অন্য দু'টি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান--বেল ভবন ও ড্রাম ভবন ।
পেইচিংয়ের দৃশ্য এবং দর্শনীয় স্থান অসংখ্য । এক ঘন্টার বাস ভ্রমণ যদিও খুব কম , তবুও এ লাইনে আমরা সবচেয়ে বিখ্যাত এবং উল্লেখযোগ্য সব দৃশ্য দেখেছি । কুয়াং তু থেকে আসা পর্যটক ছাং ভ্রমণ বাসে করে পরিদর্শনের পর খুব সন্তুষ্ট হয়েছেন । তিনি মনে করেন , এ একদিনের পেইচিং ভ্রমণ সত্যি চমত্কার । তিনি বলেন :
আজ এ ভ্রমণ বাস করে পেইচিংয়ে ঘুরে বেড়াতে সত্যি খুব ভালো লেগেছে আমার । ইয়ুং তিং মেন থেকে ছিয়ান মেন এবং থিয়েন আন মেন মহাচত্বর থেকে আমরা চিং শানে গিয়েছি । আমরা পেইচিংয়ের সেরা দৃশ্য অনুভব করেছি ।
বর্তমানে এ ভ্রমণ লাইনে মোট ৩০টি বাস চলাচল করছে । পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাস কোম্পানী গাড়ির সংখ্যা বাড়িয়ে যাত্রীদের চাহিদা মেটানোর পরিকল্পনাও করছে । এ ছাড়া , বাস কোম্পানী সেবার মান উন্নয়নে আরো চেষ্টা চালাবে । পেইচিং গণ যোগাযোগ গ্রুপের দো'তলা বাস শাখা কোম্পানীর উপ সম্পাদক সুই খাই জানিয়েছেন :
নাগরিক এবং যাত্রীদের চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা আরো বেশি বাস এ লাইনে দেবো । এভাবেই ব্যাপক যাত্রীদের চাহিদা মেটাতে পারবো । সেবা এবং তথ্য দেওয়ার বিষয়ে আমাদের আরো বেশি চেষ্টা চালাতে হবে । তাই আমরা ড্রাইভার ও কন্ডাক্টরের প্রশিক্ষণ জোরদার করবো । যাতে সবাইকে আরো বেশি এবং আরো ভালো সেবা দিতে পারি ।
অলিম্পিক গেমস চলাকালে ভ্রমণ বাস পেইচিংয়ে
আসা দেশি বিদেশি পর্যটকদের অনেক সুবিধা এবং আনন্দ এনে দিয়েছে । আমরাও আশা করি , শ্রোতা বন্ধুরা সুযোগ পেলে পেইচিংয়ে এস এ বাসে করে পেইচিংয়ের পুরাকীর্তি ও দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখবেন । |