পেইচিং অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়া আফগান ক্রীড়া প্রতিনিধিদল ১৫জনকে নিয়ে গঠিত । তাদের মধ্যে ৪জন খেলোয়াড় রয়েছেন । তারা আলাদা আলাদাভাবে স্বল্পপাল্লার দৌড় ও টাইকোন্ডোর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন । আফগান ক্রীড়া প্রতিনিধিদলের নেতা ও আফগান অলিম্পিক কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদ জিয়া দাস্তি মনে করেন যে , অংশগ্রহণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ , আফগান ক্রীড়া প্রতিনিধিদলের অবস্থায় ঠিক এই অলিম্পিক চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে ।
১৯৩৬ সালে আফগানিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে অলিম্পিক পরিবারে যোগ দেয় এবং একই বছর একাদশ বার্লিন অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয় । কয়েক দশকের যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্য দিয়েও আফগানিস্তান প্রতিটি অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয় । এটি সত্যিই প্রশংসার যোগ্য । যদিও এ পর্যন্ত আফগানিস্তান অলিম্পিক গেমসের কোনো স্বর্ণ পদক পায় নি , তবুও তাদের অংশগ্রহণের মনোভাব বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা লাভ করেছে । এ প্রসংগে আফগান প্রতিনিধিদলের নেতা দাস্তি বলেন ,
আমরা সবাই জানি যে কোনো একটি দেশের জন্যে অলিম্পিক গেমসে পদক জেতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । অথচ অলিম্পিক আন্দোলনের চেতনা হচ্ছে নিছক প্রতিযোগিতা নয় , বরং অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেয়া । এবার বিশ্বের ২০৪টি দেশ ও অঞ্চল পেইচিং অলিম্পিক গেমসে অংশ নিচ্ছে । সবাই এ গেমসের জন্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন । সুতরাং এমন বিশ্ব পর্যায়ের ক্রীড়া মহা সম্মীলনে কোনো পদক জয় করা সহজ কথা নয় । শুধু আফগানিস্তান কেন , বিশ্বের তিন ভাগের এক ভাগ স্বল্প উন্নত দেশের জন্যে পদক জেতা একটি কঠিন কাজ ।
দাস্তি বলেন , পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতির জন্যে অন্যান্য দেশের তুলনায় আফগান খেলোয়াড়রা আরো বেশি পরিশ্রম করেছেন । নিজেদের প্রশিক্ষণ কাজে মনোযোগ দেয়ার পাশাপাশি জীবনধারণের জন্যেও তাদের সংগ্রাম করতে হয় । তাদের বিশেষ বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্যে প্রয়োজনীয় স্টেডিয়াম ও স্থাপনা সরবরাহ করার সামর্থ্য আপাতত আমাদের নেই । তবে আফগান খেলোয়াড়রা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও নিষ্ক্রিয় না থেকে নিজেদের ক্রীড়া বিভাগের প্রশিক্ষণে মনোনিবেশ করেন এবং বেশ অগ্রগতিও অর্জন করেন । তিনি বলেন ,
আমাদের খেলোয়াড়রা শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের জন্যে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে । যেমন আমাদের এক শ' মিটার দৌড়বিদ মাহমুদ আজিজ এথেন্স অলিম্পিক গেমসে নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করতে ১১.৬৫ সেকেন্ড সময় নিয়েছিলেন । তবে এবারের গেমসে তিনি কোনো পদক না পেলেও নিজের রেকর্ডকে ১১ সেকেন্ডে উন্নীত করতে সক্ষম হন । আমি আশা করি , ভবিষ্যতে আমরা আমাদের খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের জন্যে আরো সুন্দর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবো । যাতে ভবিষ্যতে তারা আরো ভালো সাফল্য অর্জন করতে পারেন ।
বহুবছরস্থায়ী যুদ্ধের কারণে আফগানিস্তানের ক্রীড়া স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে । দাস্তি বলেন , সমাজের অন্যান্যে ক্ষেত্রের মত আফগানিস্তানের ক্রীড়া ক্ষেত্রের পুনর্গঠনের কাজও ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে । তিনি বলেন ,
এক বছর আগে আমরা যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত ক্রীড়া স্থাপনা পুননির্মাণের কাজ শুরু করি ।
দাস্টি পেইচিং অলিম্পিক গেমসের বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন । তিনি মনে করেন , আগের অলিম্পিক গেমসগুলোর তুলনায় পেইচিং অলিম্পিক গেমস আরো সফল হয়েছে । পেইচিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । তিনি বলেন ,
প্রতিটি অলিম্পিক গেমসের জন্যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানই বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে । পেইচিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্যে চীন নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং বিপুল উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে । বিশ্বের অধিকাংশ গণ মাধ্যম এর ভূয়সী প্রশংসা করেছে । এটি আমাকে চমকে দিয়েছে । আজ আমি বিশেষভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একটি ডি ভি ডি কিনেছি । পরে সময় হলে আমি বাড়িতে বসে আবার সেই সুন্দর মুহুর্ত পর্যালোচনা করতে পারবো । |