v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
আধুনিকতা আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধন হোহাই
2008-08-27 17:47:35

    পেইচিংয়ে বেড়াতে এলে আপনাকে হোহাই যেতেই হবে। হোহাইয়ের অবস্থান পেইচিংয়ের ঠিক মাঝখানে। চারপাশে আধুনিক সব ভবনের মাঝখানে একখন্ড শান্তির জায়গা এই হোহাই । এখানে পেইচিংয়ের মিং ও ছিং রাজবংশ আমলের পুরোনো কোর্ট ইয়ার্ড এবং হু থুং আছে। হোহাই একসাথে ধারণ করে আছে আধুনিকতা আর ঐতিহ্য । আজকের অনুষ্ঠানে আমরা একসঙ্গে হোহাইয়ে যাবো । ‌

    হোহাইয়ের আরেক নাম শি ছা হাই। থিয়েন আন মেন মহাচত্বর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটারের দূরত্ব এবং পেইহাই হ্রদের সঙ্গে সংযুক্ত।এটি নিষিদ্ধ নগরীর কাছে। রাজার আত্মীয় স্বজনরা এখানে থাকতেন। ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে হোহাই পেইচিংয়ের একটি বাণিজ্যিক অঞ্চলে রূপ নেয়। এখানে এলে ঐতিহ্যবাহী প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দুই সংস্কৃতিই প্রাণভরে উপভোগ করা যায়। অলস বিকেল আর আলো ঝলমলে রাতে হোহাইয়ের দুই রূপ।

    রাতের হোহাই হয়ে ওঠে দারুণ রূপসী। একের পর এক জ্বলে ওঠে বিজলি বাতি, বিভিন্ন বার ও রেস্তোরা মুখরিত হয় গানে গানে। সারি সারি বারের প্রতিটির রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট । প্রতিটি বারে রয়েছে বিচিত্র সব নিজস্ব খাবার ও পানীয় । জুও আন নামের একটি বারে আছে খুব আরামদায়ক সোফা , যেখানে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে বসে আড্ডা মারার মজাই আলাদা। ব্লু লুটারস বা নীল লুটেরা রেস্তোরা থেকে বাতাসে ভেসে আসে তাজা পেঁপেঁর সুগন্ধ । সেখানকার ওয়েটার থাই কেতা অনুযায়ী আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে ।

    বার ছাড়াও হোহাইয়ে অনেক রেস্তোঁরা আছে। হোহাইয়ের ইন তিং সেতুর পাশে রয়েছে শত বছরের পুরনো মুসলিম রেস্তোরাঁ খাও রো চি । সেখানকার কাবাবের স্বাদ অনন্য। ইয়াং ফাং ১১তে আছে লি চিয়া খাবার ।তবে লি চিয়া খেতে চাইলে তাদের বিশেষ রীতি মেনে চলতে হবে। সেটি হলো অর্ডার নিষেধাজ্ঞা । রেস্তোরাঁয় ঢুকে কোনো অর্ডার দেয়া চলবে না , সেদিন যা রান্না করা হয়েছে সেটাই আপনাকে খেতে হবে। দেশের বাঘা বাঘা নেতা থেকে বড় তারকা পর্যন্ত সবাইকে এই রীতি মেনে চলতে হয়। তবে খাবার খেয়ে আপনি এতোটাই তৃপ্ত হবেন যে বিশেষ রীতি মেনে খাওয়ার আক্ষেপটা আর থাকবে না।

    বড় রেস্তোঁরা ছাড়াও আছে অনেক স্ন্যাকস এবং স্ট্রিট ফুড।

    পেইচিংয়ের বিখ্যাত ঐতিহ্যিক খাবরের মধ্যে রয়েছে পাও তু-গরুর ভুড়ি, লু জু- দিল কলিজা সিদ্ধ এবং তোচি-ডাল খাবার। এসব খাবারের কথা শুনতে একটু অদ্ভুত লাগলেও কিন্তু বিশেষত্বই আলাদা ।

    পূর্ণ ভোজনের তৃপ্তি নিয়ে আপনি রিক্সায় করে হোহাইতে হাওয়া খেতে পারেন। রিক্সাওয়ালা আপনাকে সবিস্তারে হু থুং এবং কোর্ট ইর্য়াডের গল্প শোনাবে। জানিয়ে দেবে চীনের কোন কোন বিখ্যাত ব্যক্তি সেখানে থাকতেন।

    ৬৮ বছর বয়সী রিক্সাওয়ালা তাই হোং জাং প্রায় ১০ বছর ধরে হোহাইয়ে রিক্সা চালাচ্ছেন। তিনি হু থুংয়ে জন্মেছেন এবং এখানেই বড় হয়েছেন। হু থুংয়ের প্রতি তাই হোং জাংয়ের ভালবাসা অন্য রকমের। তিনি বলেছেন, হু থুংয়ের গল্প কয়েক দিন রাত ধরে বললেও শেষ হবে না।

    হু থুংয়ের জীবন দেখতে আসার জন্য আপনাকে স্বাগত জানাই। এখানে আপনি পুরোনো পেইচিংয়ের মানুষের নিত্য দিনের জীবন উপলব্ধি করতে পারবেন। কোর্টইয়ার্ডের জীবন নিজ চোখে দেখতে পারবেন। সময় পেলে আপনি হু থুং ঘুরে দেখতে পারেন।

    হু থুংয়ে আবার অনেক বৈশিষ্টপূর্ণ দোকান আছে।

    ইয়েন তাই সিয়ে চিয়ে একশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক রাস্তা। সেখানে আগে তামাক আর হুকা বেচাকেনা হতো। এখন বসেছে হরেক রকমের জিনিসের পসরা। এখানে যেমন ঐতিহ্যিবাহী চীনা পোশাক তৈরীর দোকান আছে, তেমনি আছে খুব পুরোনো জিনিসের দোকান। রাস্তার পাশে বসে আঞ্চলিক ভাষায় হকারদের বিজ্ঞাপন শুনতে পারেন কিংবা চায়ের দোকানে বসে চা খেতে পারেন।

    থিয়েন থাং ইয়েন নামের একটি দোকানে তিব্বতী বৈশিষ্টের সাজগোজের জিনিস পাওয়া যায়। দোকানদার নিমা জেমচে বলেন, তিনি হোহাই খুব পছন্দ করেন, কারণ এখানে তিনি হৈচৈ থেকে কিছুটা শান্তি পান। তিনি পুরোনো জিনিস পছন্দ করেন। যেমন কাছাকাছি মন্দির থাকলে তার খুব ভাল লাগে।

    ইয়েন তাই সিয়ে চিয়ে একটি প্রাচীন রাস্তা। পেইচিংয়ের ঐতিহ্যবাহী জিনিস এবং বিভিন্ন জাতির পোশাক এখানকার পরিবেশের সঙ্গে খুব মানানসই। আমি মনে করি জাতি বৈশিষ্টের জিনিস সব কিছুর আগে রাখা উচিত।

    হোহাইয়ে অনেক লোকশিল্পী আছেন। তারা খুব মজার মজার লোকশিল্প তৈরি করেন। যেমন এখানে চিনি দিয়ে বিভিন্ন আকারের জিনিস তৈরী করার শিল্পী আছেন। তারা চিনি এবং পাউডার একসাথে মিশিয়ে নরম লই বানিয়ে ফুঁ দিয়ে বিভিন্ন আকারের প্রাণী তৈরী করেন। যেমন ছোট মুরগী, ইঁদুর, গাছ। ছোট বাচ্চা দেখলে বাবা মাকে সেটা কিনে দিতে বলে ।

    এখানে আরেকজন শিল্পী টি-শার্টের ওপরে ছবি আঁকেন। জু মাও ফু ড্রাগন আঁকতে খুব পছন্দ করেন। তিনি বলেন ড্রাগেন হলো চীনা জাতির প্রতীক। কারণ ড্রাগনের গায়ে আছে গরুর মাথা, হরিণের শিং, সিংহের কেশর, চিংড়ির শুঁড়, মাছের লেজ, সাপের শরীর, ঈগলের নখর এবং বাগের থাবা। ড্রাগন হলো চীনের পূর্বপুরষদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর প্রতীকের সম্মিলিত রূপের একটি প্রাণী। এটি চীনের বিভিন্ন জাতির মিলেমিশে সহাবস্থানের প্রতীক। শিল্পী জু মাও ফু বলেন,

    ড্রাগন শুধু একটি ছবি বা ইমেজ তা নয়। এতে চীন দেশের জন্ম এবং উন্নয়নের প্রক্রিয়া প্রতিফলিত হয়। একজন চীনা শিল্পী হিসেবে আমার দায়িত্ব হলো চীনা সংস্কৃতিকে আরো বিকশিত করা এবং অন্য দেশে প্রচার করা।

    এসব মিলিয়ে হোহাই। ব্যস্ত মহা নগরের মধ্যে একটি শান্তির জায়গা। এখানে এমন অনেক কিছু আছে যাতে মানুষ আবিষ্কারের আনন্দ খুঁজে পান।

    সুইডেনের কারস্টিন বিজোক বলেন:

    এখানে এতো শান্তি যে হাঁটার সময় বাইরের গাড়ির আওয়াজ পর্যন্ত শোনা যায় না। খুব ভাল লাগে।

    বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদেরকে হোহাই সম্পর্কে কিছু জানালাম। শোনার জন্য ধন্যবাদ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China