v চীনের বিশ্ব কোষv চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগ
পেইচিং অলিম্পিক গেমস হবে অলিম্পিকের ইতিহাসে একটি মাইলফলক : চীনে তাঞ্জানিয়ার রাষ্ট্রদূত
2008-08-19 20:36:30

প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা , পেইচিং অলিম্পিক গেমস ঘনিয়ে আসছে । উপলক্ষে আমাদের সংবাদদাতা সম্প্রতি চীনে তাঞ্জানিয়ার রাষ্ট্রদূত রামাধানি ওমারি মাপুরির একটি সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । এখন শুনুন এ সাক্ষাত্কারের বিবরণ ।

চীনারা পূর্ব আফ্রিকায় অবস্থিত তাঞ্জানিয়ার কথা উল্লেখ করলে সাধারণত নিরক্ষরেখার তুষারাচ্ছন্ন পর্বত , নানা ধরণের কাঠের ভাস্কর্য এবং ব্যাপকাকারে চলমান বন্য প্রাণীর দলের কথা নিয়ে আলোচনা করবেন । রাষ্ট্রদূত হিসেবে চীনে নিযুক্ত হওয়ার আগে মাপুরিও চীন সম্পর্কে খুবই কম জানতেন । তিনি বলেন ,

চীনে আসার আগে চীন সম্পর্কে আমার কিছু ধারণা ছিল । তখন আমি জানতাম , চীনের রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস ও বিশাল ও সুক্ষ্ম সংস্কৃতি । আমি আরো জানতাম , চীনের বিভিন্ন শহরে , বিশেষ করে পেইচিংয়ে অনেক সাইকেল আছে । পাশাপাশি আমার জানা ছিল , অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে চীন নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।

তবে যখন মাপুরি ২০০৬ সালে চীনে তাঞ্জানিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হয়ে চীনে আসেন , তখন নিজের চোখে সত্যিকার চীন দেখতে সক্ষম হন । তিনি বলেন ,

আমার আগের ধারণার তুলনায় আমি সম্পূর্ণ আলাদা একটি চীন দেখতে পাই । বিশেষ করে ইতিহাস ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এ পার্থক্য আরো লক্ষ্যণীয় । আমি চীনের মহাপ্রাচীর এবং মিং ও ছিং রাজবংশের ১৩টি কবরস্থান পরিদর্শন করেছি । আমি লক্ষ্য করেছি , চীনে বড় পরিবর্তন ঘটেছে । চীনের শহরগুলোতে এখন আগের মত আর অত বেশি সাইকেল নেই । এখন শহরের সবখানেই ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য মোটর গাড়ি । আমি দেখতে পাই , চীনের বাড়িঘরেরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে । এখন চীনের বিভিন্ন শহরে একের পর এক উচ্চ দালানকোঠা উঠেছে । এ দিক থেকে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগে চীনের কোনো পার্থক্য নেই ।

রাষ্ট্রদূত মাপুরির চোখে ২০০১ সালের ১৩ জুলাই চীন সাফল্যের সংগে পেইচিং অলিম্পিক গেমস আয়োজনের যোগ্যতা লাভের পর চীনের এ পরিবর্তন আরো দ্রুত হয় । তখন থেকে পেইচিং অলিম্পিক গেমস আয়োজনের প্রস্তুতিমূলক কাজ পুরোদ্যমে সামনে এগিয়ে চলেছে । তিনি বলেন ,

আমার মনে হয় , পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজ সুষ্ঠুভাবে চলছে । চীনা জনগণ এর জন্যে অভূতপূর্ব ও অনলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । অন্যদের মতো আমিও পেইচিং অলিম্পিক স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখি । পাশাপাশি আমি পেইচিংয়ের বাযুর গুণগত মানের উন্নতির ওপরও নজর রাখি । এখন পেইচিংয়ের বায়ুর গুণগত মানের অনেক উন্নতি হয়েছে । এর জন্যে চীন সরকার নানা ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে । যেমন চীন সরকার দূষিত কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছে এবং পেইচিংয়ের মোটর গাড়ির নি:সৃত দূষিত বায়ুর মান কড়াকড়ি কার্যকরী করেছে । আমি সবসময় পেইচিংয়ের নিসর্গের ওপর মনোযোগ দিয়ে আসছি । যখন আমি প্রথমে পেইচিংয়ে আসি , তখন রাজধানী বিমান বন্দরের আশেপাশে এবং শহরে প্রবেশের পথে আমি দেখতে পাই সারিবদ্ধ বনানীবলয় । এটা দেখে আমার আরাম লাগে । পেইচিং শহরের ভেতরেও এ রকম অনেক বনানীবলয় রয়েছে ।

মাপুরি মনে করেন যে , পেইচিং অলিম্পিক গেমস আয়োজনের প্রক্রিয়া চীনা ও বিদেশীদের সম্পর্ককে নিবিড় করে তুলেছে । এতে চীনা লোক আরো উন্মুক্ত হয়েছে । তিনি বলেন ,

আমি চীনা ও বিদেশীদের সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দিয়ে দেখি । এখন চীনা জনগণ খোলা মনোভাব নিয়ে বিদেশীদের সংগে মেলামেশা করেন । তাদের অনেকে বিদেশী ভাষা শিখতে শুরু করেন এবং বিদেশীদের সংগে সৌহার্দ্যের সংগে ব্যবহার করেন । তাদের এসব আচরণ পেইচিং অলিম্পিক গেমসকে আরো উজ্জ্বল করে তুলেছে ।

এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রদূত মাপুরি দু বছর ধরে পেইচিংয়ে কার করে আসছেন । তিনি যেমন পেইচিং অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজের ওপর মনোযোগ দিয়ে আসছেন , তেমনি নিজেও কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজে শামিল হয়েছেন । তিনি বলেন ,

আমি সবসময় বেতার , টিভি অনুষ্ঠান ও খবরের কাগজের মাধ্যমে পেইচিং অলিম্পিক সম্পর্কে নানা খবরাখবর সংগ্রহ করে থাকি । পাশাপাশি আমি নিজেও পেইচিং অলিম্পিক সম্পর্কিত কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি । যেমন যখন পেইচিং অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হতে আরো ১০০ দিন বাকি ছিল , তখন পেইচিংয়ের থিয়ান আন মেন মহাচত্বরে আয়োজিত একটি উদযাপনী অনুষ্ঠান ও গ্রীস থেকে পেইচিংয়ে অলিম্পিক মশালের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি ।

এ বছরের নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এক অলিম্পিক প্রচার অভিযানে পেইচিং অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটি বিশেষভাবে তাঞ্জানিয়ার অলিম্পিক বীর জন স্টিফেন আখওয়ারিকে আমন্ত্রণ জানায় । ১৯৬৮ সালে মেক্সিকো অলিম্পিক গেমসের ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় আখওয়ারি মাংসপেশী ক্ষত অবস্থায়ও পুরো দূরত্ব অতিক্রম করেন । তার আচরণ বিশ্বের দর্শকদের বিমোহিত করে । এর জন্যে তিনি তাঞ্জানিয়ার জাতীয় বীর পদকে ভূষিত হন । পেইচিংয়ে আয়োজিত এ প্রচার অভিযানে আখওয়ারি চীনা জনগণের আন্তরিক সংবর্ধনা পেয়েছেন । অলিম্পিক চেতনা সম্পর্কে মাপুরি বলেন ,

আমার মনে হয় , আখওয়ারি অলিম্পিক চেতনার সাহস ও দৃঢ়তার প্রতিনিধিত্ব করছেন । ১৯৬৮ সালের অলিম্পিক গেমসে তার আচরণ আমাদেরকে জানিয়ে দেয় যে , অলিম্পিক গেমসের প্রতিযোগিতা শুধু স্বর্ণপদের জন্যে নয় । যদি আপনি কোনো স্বর্ণপদক পান নি , তারপরও এর অর্থ এই দাড়াঁবে না যে , অলিম্পিক গেমসে আপনি কিছু করতে পারবেন না । অবশ্য চ্যাম্পিনশীপের জন্যে খেলোয়াড়রা অলিম্পিক গেমসে অংশ নিচ্ছেন । অথচ এটি কোনোমতেই তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয় । প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক ছাড়া আপনি আপনার সাহস ও দৃঢ়তা প্রদর্শনের সুযোগও পাবেন ।

অলম্পিক হচ্ছে সারা বিশ্ব ও সমগ্র মানবজাতির এক মহা ক্রীড়া সম্মেলন । পেইচিং অলিম্পিকের শ্লোগান হচ্ছে এক বিশ্ব , এক স্বপ্ন । এ শ্লোগানে অলিম্পিক চেতনার সারমর্ম – সংহতি , মৈত্রী , অগ্রগতি , সম্প্রীতি , অংশগ্রহণ ও স্বপ্ন প্রতিফলিত হয়েছে । রাষ্ট্রদূত মাপুরি তার অলিম্পিক স্বপ্ন সম্পর্ক বলেন ,

আমার জন্যেও অলিম্পিক গেমস একটি স্বপ্ন । অলিম্পিক গেমসের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্ব ওতপ্রোতভাবে একতাবদ্ধ হয়েছে । আমার জন্যে এটি আমার জীবনের একমাত্র সুযোগ হবে । কারণ আমি পেইচিংয়ে বসে নিজের চোখে অলিম্পিক গেমস উপভোগ করতে পারবো । আগে আমি সাধারণত বাড়িতে বসে টিভি সম্প্রচারের মাধ্যমে অলিম্পিক গেমসের প্রতিযোগিতা দেখতাম । পেইচিং অলিম্পিক দেখার এ অভিজ্ঞতা আমার মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ।

চীন ও তাঞ্জানিয়ার মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী । রাজনীতি ও অর্থনীতির পাশাপাশি ক্রীড়া ক্ষেত্রেও দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতা চলছে । যেমন চীনের সহায়তায় আমান স্টেডিয়াম ও দারেসসালাম জাতীয় স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে । রাষ্ট্রদূত মাপুরি বলেন , ক্রীড়া ক্ষেত্রে দু দেশের সহযোগিতা দু দেশের জনগণের সমঝোতাকে জোরদার করেছে । এভাবে দুই দেশের মৈত্রী এখন দু দেশের জনগণের মৈত্রীতে পরিণত হয়েছে । তিনি বলেন ,

চীন ও তাঞ্জানিয়ার মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতা থাকলেও সহযোগাতা বাড়ানোর আরো অবকাশ রয়েছে । স্টেডিয়াম নির্মাণের পাশাপাশি পরস্পরের দেশে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণও চলছে । তরুণ-তরুণীদের দড়াবাজি শিখানোর জন্যে চীন তাঞ্জানিয়ায় কোর্চ পাঠিয়েছে । রাষ্ট্রদূত হিসেবে পেইচিং অলিম্পিক গেমসের পর আমি পরস্পরের দেশে দুই দেশের খেলোয়াড়দের বিনিময়ের চেষ্টা করবো । সকলের জানা আছে , ক্রীড়া অনুশীলন জনগণের মধ্যকার সমঝোতা ও মৈত্রীকে জোরদার করতে পারে । এখন আরো বেশি চীনা ব্যবসায়ী তাঞ্জানিয়ায় পুঁজি বিনিয়োগ করছেন এবং কিছু চীনা পর্যটকও তাঞ্জানিয়ায় ভ্রমণে যাচ্ছেন । তাঞ্জানিয়ার কিছু লোকও চীনে ব্যবসা করতে আসছেন ।

  • সাক্ষাত্কার
  • সর্বশেষ সংবাদ
  • অন-লাইন জরীপ
     
    © China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
    16A Shijingshan Road, Beijing, China