" পেইচিং অলিম্পিক গেমস--২০০৮" -এ কেবল যে ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলের খেলোয়াড়ারা মিলিত হয়েছে তা নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৮০জন শীর্ষ নেতা এবং গুরুত্বপূর্ণ অতিথিরাও পেইচিং এসেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন চীনের পুরনো বন্ধু--আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী সারি বেরিশা। সম্প্রতি তিনি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের একজন সংবাদদাতাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, " চীনের উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করি" এবং আলবেনিয়া চীনের আরো ঘনিষ্ঠ বন্ধু হবে বলে সারি বেরিশা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
৬৪ বছর বয়স্ক সারি বেরিশা আলবেনিয়ার একজন বিখ্যাত চিকিত্সক ও বিজ্ঞানী। তিনি আলবেনিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আলবেনিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চীনে প্রথমবারের মত সফর করেন। এটি তার তৃতীয়বার চীনে আসা। তিনি বলেন, চীনের উন্নয়নের ওপর তার সজাগ দৃষ্টি রয়েছে । চীনে আসার পর প্রত্যেক বারই তার চোখে পেইচিংয়ের ব্যাপক পরিবর্তন ধরা পড়েছে। এবারে পেইচিং আসার পর সবুজ গাছ-লতাপাতা তার মনে প্রগাঢ় ছাপ ফেলেছে। তিনি বলেন:" একটি কথা বিশেষভাবে বলতে চাই। যা হলো পেইচিং শহরের সবুজীকরণ এবং এ কাজে কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম। একটি সতেজ সবুজ এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য তারা ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। পেইচিং শহরে আধুনিক উঁচু ভবন এবং বড় বড় অট্রালিকা থাকলেও পরিবেশ আরও সবুজ এবং সতেজ হয়ে উঠেছে। এটা অধিবাসীদের জন্য অনেক বেশি কল্যাণকর।"
এটা শুধু আধুনিক শহরের ব্যাপক সবুজ আর মাটি নয় , এবারের পেইচিং অলিম্পিক গেমসের জন্য এটা সার্বিক প্রস্তুতিমূলক কাজ বলেও বেরিশা প্রশংসায় পঞ্চমূল হয়েছেন । তিনি বলেন" এবারের অলিম্পিক গেমসের প্রস্তুতিমূলক কাজে চীনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সেবা সুচিন্তিত। স্টেডিয়াম নির্মাণ, সংগঠন বা প্রশিক্ষণ যে কোন কাজই হোক না কেন সব ক্ষেত্রের প্রস্তুতিমূলক কাজ অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের মানদন্ডে পৌঁছেছে। এবারের পেইচিং অলিম্পিক গেমস একটি মহাসম্মিলনী হবে বলে আমি আস্থাবান ।"
গত ৭ আগস্ট পেইচিংয়ে পৌঁছার দিনই বেরিশা চীনে আলবেনিয় দূতাবাসে আলবেনিয় প্রতিনিধি দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। ১১জন খেলোয়াড়কে নিয়ে গঠিত আলবেনিয়ার প্রতিনিধি দল হচ্ছে এ যাবতকালের মধ্যে অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়গণের সংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ সদস্যের একটি দল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেরিশা নিজ দেশের খেলোয়াড়দের নিয়ে অহংকার বোধ করেন। একই সঙ্গে তিনি সাফল্যের প্রতীক্ষায়ও রয়েছেন।" তারা সবাই খুবই চমত্কার খেলোয়াড়। এর মধ্যে কুস্তি, ভারত্তোলন এবং শুটিংসহ বিভিন্ন খাতের খেলোয়াড় রয়েছেন। আমি আশা করি তারা নিজেদের শক্তির ওপর নির্ভর করে পদক নিয়ে আলবেনিয়ায় ফিরে আসবেন। প্রতিযোগিতা খুব কঠিন হলেও আমি বিশ্বাস করি আমাদের খেলোয়াড়রা যথাসাধ্য প্রস্তুতি নিয়েছেন।"
খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনাকালে অলিম্পিক গ্রাম সম্পর্কে তাদের ব্যাপক প্রশংসার কথা শুনে বেরিশার গভীর আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং , তিনি নিজেই অলিম্পিক গ্রামে গিয়ে সেখানকার অবস্থা দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রত্যেক আলজেরিয় অধিবাসীর মতো বেরিশাও ক্রীড়া ক্ষেত্রের একজন আন্তরিক অনুরাগী। তাছাড়াও , তিনি ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড প্রতিযোগিতা পছন্দ করেন। এবারের পেইচিং অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণকারী আলজেরিয় খেলোয়াড়দের মধ্যে তার ও তার আত্মীয়স্বজনের পছন্দের ক্রীড়া স্টারও রয়েছেন। পেইচিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার ব্যাপারে , তিনি সবচে' বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন সেটা হলো পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মশালের মূল অগ্নাধারে সর্বশেষ প্রজ্বলনের সময়কে। কারণ , এটা অলিম্পিক গেমসের চেতনা অনন্তকালের প্রতীক। এতে নিহত রয়েছে আরও শান্তি এবং সমঝোতা। তিনি বলেন:" মশাল অগ্নাধারে সর্বশেষ প্রজ্বলন দেখলে আমার জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পেইচিং অলিম্পিক গেমস আয়োজন করা আমার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।"
পেইচিং অলিম্পিক গেমস নিয়ে বেরিশার এতো উত্ফুল্ল হয়ে উঠার কারণ হলো চীনের সঙ্গে তার গভীর মৈত্রী । ১৯৯৬ সালে বেরিশা আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে আলজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে চীন সফরের পর বলতে গেলে ৩০ বছর কেটে গেছে। ৩০ বছরের মধ্যে চীন-আলজেরিয়ার সম্পর্ক নানা বাধা-বিঘ্ন অতিক্রমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং নিজেদের সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের পথকে খুঁজে বের করার জন্য চেষ্টা করেছে। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব লাভের পর বেরিশা যথা সময়েই চীন সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি হলো আলবেনিয়া-চীন সম্পর্কের ইতিহাসে একটি মাইলফলক এবং তাত্পর্যপূর্ণ সফর। সেসব কথা স্মরণ করে তিনি বলেন:" চীন আলবেনিয়াকে ব্যাপক সাহায্য দিয়েছে। চীনের সাহায্যে আলবেনিয়া কয়েক ডজন কারখানা স্থাপন করেছে। ফলে অনেক আলবেনিয় জনগণ এখন কাজ পেয়েছেন। সুতরাং, সেবারের সফরে আমাদের প্রথম যৌথ ইস্তাহার প্রকাশিত হয়েছে। যাতে আলবেনিয়ার পক্ষে চীন সরকার এবং চীনা জনগণকে ধন্যবাদ জানানো যায়।"
চীন আলবেনিয়ার যৌথ ইস্তাহারে আলবেনিয়া একচীন নীতিও তা সমর্থনের কথা ব্যাখ্যা করেছে। চীনের একজন বন্ধু হিসেবে বেরিশা চীনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্রথম হচ্ছে চীনের অর্থনীতি। তিনি বলেন, তেং সিও পিংয়ের নেতৃত্বে চীনারা সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পথকে বাছাই করে সত্যিকারভাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সংস্কার চালিয়েছে। সুতরাং চলমান ধারায় দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে। তাছাড়া, চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার ও গণতান্ত্রিকীকরণ প্রক্রিয়ার ওপর তিনিও গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
এবারের পেইচিং সফর করায় পেইচিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ছাড়াও আলবেনিয়া ও চীনের আদান-প্রদান ত্বরান্বিত বিশেষ করে আলবেনিয়ায় চীনের পুঁজি বিনিয়োগ এগিয়ে নেয়ার জন্য দু'পক্ষের চেষ্টা চালাবে বলে বেরিশা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, পুঁজি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করবেন। তিনি বলেন:" সবাইকে আলবেনিয়ায় আসার আমন্ত্রণ জানাই। আলবেনিয়া একটি প্রচুর সম্পদশালী দেশ। আমাদের খনিজ সম্পদও প্রচুর। আশা করি আলবেনিয়ায় আরো বেশি চীনা বন্ধুরা আসবে।"--ওয়াং হাইমান |