পেইচিং শুটিং স্টেডিয়ামে পদক পাওয়ার প্রক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে ২৪ বছর বয়সী কুও ওয়েন জুন দর্শক ও সংবাদ মাধ্যমের সামনে স্বাভাবিক ছিলেন। তবে তাঁর মুখে মৃদু হাসি ছিল। তিনি ছিলেন খুব আত্মপ্রত্যয়শীল। সদ্য-সমাপ্ত প্রতিযোগিতায় কুও ওয়েন জুনের আনন্দ বোধ করা ছাড়াও আরো কিছু পরিতৃপ্তি রয়েছে। তিনি বলেছেন, আমি শুধু স্বাভাবিক মান প্রদর্শন করতে চাই। আমি স্বর্ণপদকের কথা চিন্তা করে প্রতিযোগিতায় অংশ নেই নি। আমি আমার স্বাভাবিক খেলাই প্রদর্শন করতে চেয়েছি। তিনি বলেছেন, এখন আমি খুব খুশি। তবে প্রতিযোগিতার আগে আমার সঙ্গে আলাপের সময় প্রশিক্ষক আমাকে শুধু আমার স্বাভাবিক মান প্রদর্শনের নির্দেশ দেন। আমার উদ্দেশ্যও ছিল একই। এখন আমি সফল হয়েছি।
প্রতিটি চ্যাম্পিয়নশীপের পিছনে একটি অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রথম দিকে শুটিং চর্চার সময় কুও ওয়েন জুন তার চমত্কার নৈপূণ্য পরিদর্শন করতে পারেন নি। ২০০৩ সালে পঞ্চম নগরের গেমসে কুও ওয়েন জুন ব্যর্থ হয়েছেন। তাই ২০০৪ সালে তিনি জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান নি। ২০০৫ সালে অক্লান্ত চেষ্টার পর তিনি শান সি প্রদেশের শুটিং দলে ঢুকতে পেরেছেন। এর আগে কুও ওয়েন জুন শুটিং দল থেকে চলে যেতে চেয়ে দলের কাছে তার দল ত্যাগের আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন। এক বছর বিশ্রামের পর প্রশিক্ষক ও
পরিবারের সাহায্যে কুও ওয়েন জুন পুনরায় প্রশিক্ষণ দলে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেছেন, এ প্রক্রিয়া খুব কঠিন। আমাকে সাহায্য করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আগে আমি দল ত্যাগের আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলাম। তবে এখন আমি আমার প্রশিক্ষক ও নেতাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। তারা আমাকে অনেক বেশি সাহায্য করেছেন। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমি আসার স্বাভাবিক খেলা প্রদর্শন করতে পেরেছি যা আমাকে সাফল্য এনে দিয়েছে।
দল ছেড়ে যাবার এক বছর সময় কালে কুও ওয়েন জুন প্রতি দিন সিআনের একটি বিক্রয় কেন্দ্রে ক্রীড়া বিষয়ক পোষাক বিক্রয় করেছেন। এসব কাজ করতে গিয়ে তিনি জীবনের কঠোর তাকে গভীরভাবেই অনুভব করেছেন। চীনের শুটিং জাতীয় দলের প্রশিক্ষক শুয়ে বাও ছুয়ান মনে করেন, এ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কুও ওয়েন জুন আরো বেশি অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেছেন, (৩)
এ অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর জীবনের একটি বড় পাওনা। কারণ তিনি সত্যি সত্যিই অভিজ্ঞ হতে পেরেছেন।
২০০৬ সালে জাতীয় শুটিং দলে ঢোকার পর কুও ওয়েন জুন তার ভালো নৈপূণ্য প্রদর্শন করেছেন। ২০০৬ সালে দোহা এশিয় গেমসে তিনি প্রথম বারের মত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে নারীদের এয়ার-পিস্তল প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হন। এরপর এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ ও বিশ্ব কাপের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। ছেন ইন ও দু লির সঙ্গে তাকে আইএসএসএফ'র বার্ষিক শ্রেষ্ঠ নারী খেলোয়াড়দের প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে চীনে অলিম্পিক গেমসের বাছাই যোগ্যতা প্রতিযোগিতায় কুও ওয়েন জুন নারীদের দশ মিটার এয়ার-পিস্তল প্রতিযোগিতায় ৩৯৪ স্কোর করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। তার এ সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। অলিম্পিক গেমসে চীনের সাবেক চ্যাম্পিয়নকে পরাজিত করে পেইচিং অলিম্পিক গেমসে যোগ দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।
অলিম্পিক গেমসের প্রতিযোগিতায় কুও ওয়েন জুনের একটুও ভয় লাগে নি। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার প্রথম ছয়টি শুটিং-এ তিনি স্কোর করেছেন ১০ । যদিও সপ্তম বারের শুটিং-এ ৯.৪ স্কোর করেছেন। এর পরের দুটি শুটিং-এ তিনি ১০.৭ স্কোর করে শ্রেষ্ঠ সাফল্যকে হাতের মুঠোয় তুলে নিয়েছেন।
তাঁকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারে নি। কুও ওয়েন জুনের মূল্যায়ন করে মন্তব্য করতে গিয়ে আইএসএসএফ'র চেয়ারম্যান ওলেগারিও রানা দ্বিধাহীন চিত্তে এ কথা বলেছেন। |